ডেস্ক নিউজ
দেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের স্বল্প খরচে উচ্চগতির অক্সিজেন দিতে সক্ষম দেশীয় প্রযুক্তির সিপ্যাপ ভেন্টিলেটর যন্ত্র তৈরি করেছেন বুয়েটের বায়োমেডিকেল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের একদল গবেষক। তারা যন্ত্রটির নাম দিয়েছেন অক্সিজেট। করোনায় শ্বাসকষ্টে ভোগা রোগীকে মিনিটে ৬০ লিটার পর্যন্ত অক্সিজেন সরবরাহ করতে পারবে এই অক্সিজেট যন্ত্র। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা এটিকে হাই-ফ্লো ন্যাজাল ক্যানুলার সঙ্গে তুলনা করছেন। বিদু্যৎ ছাড়াই চলতে সক্ষম যন্ত্রটি ইতোমধ্যেই বাংলাদেশ চিকিৎসা গবেষণা পরিষদ (বিএমআরসি)-এর ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের প্রথম ও দ্বিতীয় ধাপ সফলভাবে অতিক্রম করেছে।
যন্ত্রটির সম্পর্কে জানতে চাইলে আবিষ্কারকেরা যায়যায়দিনকে বলছেন, মাত্র ২৫ হাজার টাকায় তৈরি দেশীয় প্রযুক্তির যন্ত্রটিকে তারা অক্সিজেট নাম দিয়েছেন। একটি সূক্ষ্ণ ভেঞ্চুরি ভাল্বের মাধ্যমে বাতাস ও অক্সিজেনের সংমিশ্রণ তৈরি করে মিনিটে ৬০ লিটার গতিতে রোগীকে অক্সিজেন সরবরাহ করে। মেডিকেল অক্সিজেন সাপস্নাই ও দ্বৈত ফ্লো-মিটারের সাহায্যে এটি প্রয়োজনে ১০০ শতাংশ পর্যন্ত অক্সিজেন কনসেন্ট্রেশন দিতে পারে। যন্ত্রটির মাধ্যমে সাধারণ ওয়ার্ডেই উচ্চগতির অক্সিজেন সরবরাহ সম্ভব হওয়ায় সহজেই আইসিইউতে রোগীর চাপ কমানো সম্ভব। বর্তমানে বুয়েটে জরুরি ভিত্তিতে ৫০টি অক্সিজেট তৈরি করা হচ্ছে। বাণিজ্যিকভাবে তৈরি করা গেলে একেকটি অক্সিজেটের খরচ পড়বে ১৫ হাজার টাকারও কম।
এই প্রযুক্তির মূল উদ্যোক্তা বুয়েটের বায়োমেডিকেল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষক ড. তওফিক হাসান যায়যায়দিনকে বলেন, দেশে করোনা সংক্রমণের শুরুতে উচ্চগতির অক্সিজেন সরবরাহে নানা সীমাবদ্ধতা দেখা যাচ্ছে। কিন্তু হাই-ফ্লো ন্যাজাল ক্যানুলার উচ্চমূল্য এবং ব্যবহারে উন্নত প্রশিক্ষণের প্রয়োজন পড়ায় রোগীদের জন্য অ্যাম্বুলেন্স বা সাধারণ ওয়ার্ডে অক্সিজেনের প্রয়োজন হলেও তা ব্যবহার করা সম্ভব হয় না। এসব রোগীর কষ্ট লাঘবেই তারা যন্ত্রটি আবিষ্কারে উৎসাহিত হয়েছেন। প্রাথমিকভাবে পরীক্ষা করে সফলতা দেখা গেছে।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের রেজিস্ট্রার ডা. ফরহাদ উদ্দিন হাসান চৌধুরী বলেন, দেশে করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউয়ে উচ্চগতির অক্সিজেনের চাহিদা বাড়ায় এ সময়ে বিদু্যৎহীনভাবে চলা যন্ত্রটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। তিনি বলেন, যদি দেশে করোনা সংক্রমণের ভয়াবহ কোনো পরিস্থিতি তৈরি হয়, সেক্ষত্রে জেলা উপজেলা পর্যায়ে রোগীদের উচ্চ মাত্রার অক্সিজেনের চাহিদা বাড়বে। এমনকি ক্রিটিক্যাল রোগীকে অ্যাম্বুলেন্সে পরিবহণের সময়ও উচ্চমাত্রার অক্সিজেনের প্রয়োজন হয়। কিন্তু এ সময় অ্যাম্বুলেন্সে হাই-ফ্লো ন্যাজাল ক্যানুলার মাধ্যমে রোগীর অক্সিজেন সরবরাহ করা সম্ভব হয় না। অক্সিজেট যন্ত্র তখন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। প্রথম ও দ্বিতীয় ধাপের ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে এটার কার্যকারিতার প্রমাণ পাওয়া গেছে। এখন তৃতীয় ধাপের অনুমোদন পেলে এটি গণমানুষের জন্য ব্যবহার করা যাবে।
যন্ত্রটির ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের কো ইনভেস্টিগেটর ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার পরিচালক অধ্যাপক রোবেদ আমিন যায়যায়দিনকে বলেন, পর্যবেক্ষণ দেখা গেছে যেসব রোগীর হাই-ফ্লো ন্যাজাল ক্যানুলা দিয়ে অক্সিজেন দিতে হয়েছে তাদের প্রতি ৫ জনের মধ্যে দু’জনের পরে আইসিইউ সাপোর্ট লেগেছে। অন্যদিকে অক্সিজেটের মাধ্যমে যাদের অক্সিজেন দেওয়া হয়েছে তাদের ক্ষেত্রে এমনটা হয়নি। এটি ব্যবহারে কয়েকজন সুস্থ হয়েছেন। এখন তৃতীয় ধাপের ট্রায়াল চলছে। যদি হাই-ফ্লো ন্যাজাল ক্যানুলার চেয়ে এটার কার্যকারিতা ভালো হয়, রোগীরা সুস্থ হয়, এটি ব্যবহারে অক্সিজেনের চাহিদা কমে, খরচ কম হয়, তখন অনুমোদন দেওয়ার সুপারিশ করা যেতে পারে।
আবিষ্কারকেরা আরও বলেন, সাধারণত রোগীকে মেডিকেল অক্সিজেন অথবা সিলিন্ডার থেকে ১৫ লিটার অক্সিজেন সাপস্নাই দেওয়া হয়। কিন্তু তাদের উদ্ভাবিত যন্ত্রটির ভেঞ্চুরি বাল্বটা আছে সেটি বাতাস থেকে অক্সিজেন এবং অক্সিজেন সমৃদ্ধ বাতাস টেনে নিতে পারে। ৬০ বা ৬৫ লিটারের একটি ফ্লো তৈরি করতে পারে, যা যন্ত্রটির প্রধান কাজ। আবার কেউ চাইলে এটার সঙ্গে অতিরিক্ত অক্সিজেন যোগ করতে পারে। কারণ করোনা আক্রান্ত রোগী অক্সিজেনের প্রয়োজন বেশি থাকে। এসব বিবেচনায় সম্পূর্ণ দেশীয় প্রযুক্তিতে আবিষ্কৃত এই নতুন এই যন্ত্রটা করোনা চিকিৎসায় বিশেষ অবদান রাখতে সক্ষম।