ডেস্ক নিউজ
বাংলাদেশে বিনিয়োগে ব্রুনাইয়ের ব্যবসায়ীদের আহ্বান জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। বঙ্গভবনে শনিবার সন্ধ্যায় সফররত ব্রুনাই সুলতান হাসানাল বলকিয়াহ মুইজ্জাদ্দিন ওয়াদ্দৌলাহর সঙ্গে সাক্ষাতে তিনি এ আহ্বান জানান।
সন্ধ্যায় ব্রুনাইর সুলতান হাসানাল বলকিয়াহ মুইজ্জাদ্দিন ওয়াদ্দৌলাহ বঙ্গভবনে এলে তাকে স্বাগত জানান রাষ্ট্রপতি। দুই রাষ্ট্রপ্রধানের সাক্ষাতে রাষ্ট্রপতি বলেন, সুলতানের প্রথমবারের মতো বাংলাদেশ সফরের মাধ্যমে ভাতৃপ্রতিম দুই দেশের সম্পর্কে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা হলো।
রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘বাংলাদেশ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর সাথে সম্পর্কন্নোয়নকে গুরুত্ব দেয়।’
তিনি বাংলাদেশের আসিয়ানের সেক্টরাল ডায়লগ পার্টনার স্ট্যাটাস পেতে ব্রুনাই’র সমর্থন প্রত্যাশা করেন। রাষ্ট্রপতি ব্রুনাইতে কর্মরত প্রবাসী বাংলাদেশিদের বিনামূল্যে করোনার ভ্যাকসিন দেয়ায় সুলতানকে ধন্যবাদ জানান।
তিনি বাংলাদেশ থেকে আরও অধিক হারে জনবল নিয়োগের জন্য ব্রুনাই সুলতানকে অনুরোধ করেন।
বাংলাদেশের বিনিয়োগের উপযোগী পরিবেশ বিদ্যমান জানিয়ে রাষ্ট্রপতি ব্রুনাইয়ের ব্যবসায়ীদের বাংলাদেশে বিনিয়োগ করার আহ্বান জানান। তিনি দুদেশের মধ্যে ব্যবসা-বাণিজ্য বাড়াতে সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে যোগাযোগ বৃদ্ধির ওপরও গুরুত্বারোপ করেন।
রাষ্ট্রপতি রোহিঙ্গা ইস্যুতে বাংলাদেশকে সমর্থন দেয়ার জন্য সুলতানকে ধন্যবাদ জানান এবং আশা প্রকাশ করেন যে এ ইস্যুতে ভবিষ্যতেও বাংলাদেশ প্রতি তাদের সমর্থন অব্যাহত থাকবে।
তিনি রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে দ্রুত প্রত্যাবর্তনে সুলতানের সহযোগিতা কামনা করেন।
ব্রুনাই সুলতান বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের প্রশংসা করেন এবং বিভিন্ন ক্ষেত্রে বাংলাদেশকে সহযোগিতার আশ্বাস দেন।
দুই নেতার সাক্ষাতের সময় সুলতানের পুত্র প্রিন্স আব্দুল মতিনও উপস্থিত ছিলেন।
এ ছাড়া অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন, বাণিজ্য মন্ত্রী টিপু মুনশী, পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন, রাষ্ট্রপতির কার্যালয়ের সচিব সম্পদ বড়ুয়া, সামরিক সচিব মেজর জেনারেল এস এম সালাহ উদ্দিন ইসলাম এবং সচিব (সংযুক্ত) মো. ওয়াহিদুল ইসলাম খান প্রমুখ।
এর আগে, দুপুরে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের আমন্ত্রণে তিনদিনের রাষ্ট্রীয় সফরে ঢাকায় আসেন বিশ্বের অন্যতম ধনী দ্বীপরাষ্ট্র ব্রুনাই দারুস সালামের সুলতান হাসানাল বলকিয়াহ মুইজ্জাদ্দিন ওয়াদ্দৌলাহ। এই প্রথমবারের মতো ঢাকা সফরে এলেন তিনি।
শনিবার দুপুর ২টার পর সুলতানকে বহনকারী একটি বিশেষ ভিভিআইপি ফ্লাইট হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে।
বিমানবন্দরে তাকে লাল গালিচা সংবর্ধনা দিয়ে স্বাগত জানান রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। মন্ত্রিসভার সিনিয়র সদস্য এবং পদস্থ বেসামরিক ও সামরিক কর্মকর্তারাও সুলতানকে বিমানবন্দরে স্বাগত জানান।
সুলতানের সফরসঙ্গী হিসেবে রাজকীয় পরিবারের সদস্য, সে দেশের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী এবং ব্রুনাই সরকারের উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তারা রয়েছেন।
বিমানবন্দরে অভ্যর্থনা অনুষ্ঠানের অংশ হিসেবে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, নৌ ও বিমানবাহিনীর একটি চৌকস দল বিমানবন্দরে তাকে গার্ড অব অনার প্রদান করে। সেখান থেকে একটি সুসজ্জিত মোটর শোভাযাত্রা সহকারে তিনি যান সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে। সেখানে ব্রুনাইয়ের সুলতান স্বাধীনতা যুদ্ধের বীর শহীদদের স্মরণে সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। সুলতান সেখানে একটি গাছের চারা রোপণ এবং দর্শনার্থী বইয়ে স্বাক্ষর করেন।
রোববার সকাল সোয়া ১০টায় সুলতান ওয়াদ্দৌলাহ ধানমন্ডিতে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘর পরিদর্শন এবং বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করবেন। সকাল ১০টা ১৫ মিনিটে তিনি সেখানে রক্ষিত দর্শনার্থী বইয়ে স্বাক্ষর করবেন।
জাদুঘর প্রাঙ্গণে জাতির পিতার পরিবারের সদস্যরা সুলতানকে অভ্যর্থনা জানাবেন। বেলা ১১টা ৫ মিনিটে ব্রুনাইয়ের সুলতান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে তার তেজগাঁও কার্যালয়ের (পিএমও) শিমুল হলে একান্ত বৈঠক করবেন।
পরে পিএমওর চামেলী হলে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে একটি প্রতিনিধি পর্যায়ের বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে।
বঙ্গভবনের মুখপাত্র জানান, সুলতানের তিন দিনের সফর বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। কারণ অন্যান্য কর্মসূচির সঙ্গে করবীতে কয়েকটি সমঝোতা স্মারক সই হবে।
সুলতানের সফরকালে উভয় দেশের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় বিমান চলাচল, বাংলাদেশি জনশক্তি নিয়োগ এবং দুই দেশের নাবিকদের সনদ দেয়াসহ পাঁচটি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক সই হতে পারে। সুলতান সেখানে দর্শনার্থী বইতে স্বাক্ষর করবেন।
সুলতান ১৭ অক্টোবর ঢাকা ত্যাগ করবেন। ঢাকা ত্যাগের আগে বিমানবন্দরে রাষ্ট্রীয় গার্ড অব অনার প্রদানের পর পররাষ্ট্রমন্ত্রী ব্রুনাইয়ের সুলতান ও তার সফর সঙ্গীদের বিদায় জানাবেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৯ সালের এপ্রিলে ব্রুনাই সফর করেন। ব্রুনাইয়ের সুলতানের এটা ফিরতি সফর।
এর আগে ব্রুনাই সুলতানের আমন্ত্রণে ২০১৯ সালের ২১ থেকে ২৩ এপ্রিল দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশটি সফর করেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ওই সফরে দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতা জোরদারে আলোচনার পাশাপাশি ছয়টি সমঝোতা স্মারক সই হয়েছিল।