বয়স যেন কোন বাঁধা মানেনা তার প্রমান নাটোরের আহাদ আমেনা। তাঁদের বিয়ে নিয়ে গ্রামবাসীর আনন্দের শেষ নাই বৃহষ্পতিবার সকাল থেকে নাটোর সদর উপজেলার দিঘাপতিয়া ইউনিয়নের ডাঙ্গাপাড়া গ্রামের আহাদ আলী মন্ডলের বাড়িটি ঘিরে নানা বয়সের মানুষের ভিড়। সবাই এসেছেন শতবর্ষী ঈমান আলী মন্ডলের নব বিবাহিত স্ত্রী আমেনা বেগমকে (৮০) দেখতে। তবে অনেকে তাঁদের দুইজনকে একত্রে বসিয়ে ও পাশাপাশি দাঁড় করিয়ে মোবাইল ফোনে ছবি তুলতেও ব্যস্ত সময় পার করছেন। বাইরে চলছে বউ ভাতের আয়োজন। আয়োজকদের মধ্যে রয়েছেন ওই দম্পতির ছেলে-মেয়ে ও নাতি নাতনীরাও। বুধবার রাতে জাকজমক অনুষ্ঠানের মধ্যদিয়ে তাঁরা বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছেন। সবমিলিয়ে একটা আনন্দঘন বিয়ের অনুষ্ঠান বলতে যা বোঝায় তা ওই বাড়িতে অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
আহাদ আলী মন্ডল ডাঙ্গাপাড়া গ্রামের ঈমান আলী মন্ডলের ছেলে এবং আমেনা বেগম একই গ্রামের সোনা মিয়ার মেয়ে। অনেক দিন আগেই আহাদ আলীর প্রথম স্ত্রী ও আমেনা বেগমের প্রথম স্বামী মারা গেছে। উভয়েই দীর্ঘদিন নিঃসঙ্গ জীবনযাপন করছিলেন। বয়সের ভারে তাঁদের শরীর এখনও নুয়ে পড়েনি। সবকিছু থেকেও যেন তাঁদের কিছুই ছিল না। তাই তাঁরা পরিবারের সদস্যদের মতামত নিয়েই বিয়ের বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছেন।
দিঘাপতিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান খন্দকার ওমর শরীফ চৌহান জানান,আহাদ আলী মন্ডলের বিয়ে নিয়ে গ্রামের মানুষের আনন্দের শেষ নাই। বিয়েকে ঘিরে গ্রামে উৎসবের আমেজ পড়েছে। কাউকে আলাদা করে আমন্ত্রণ জানানোর প্রয়োজন পড়েনি। বুধবার রাতে নিজে থেকে শতাধিক লোক বরযাত্রী হয়ে তাঁর সাথে কণের বাড়িতে গিয়েছিলেন। বর কণেকে বিয়ের নতুন পোশাকে সুসজ্জিত করা হয়েছিল। পরিবারের সদস্যদের সাথে মিলেমিশে তাঁরা বউ ভাতের আয়োজন করেছেন। গ্রামবাসি তাঁকেও ওই বউ ভাতের আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। শেষ বয়সে এসেও দুটি মানুষ যে একে অপরের প্রয়োজন মেটাতে পারে তার উদাহরণ হয়ে থাকবে আহাদ-আমেনা দম্পতি।
আহাদ আলীর ছোট ছেলে কোরবান আলী বলেন,ঠিক কতদিন আগে মা মারা গেছে তা তার মনে নাই। এর পর থেকে আব্বা আলাদা হয়ে যান। তিনিও বিয়ে করে আলাদা সংসার করেছেন। তাই আব্বার বিয়েতে তাদের কোন অমত হয়নি। শেষ বয়সে সকলেরই একটা সঙ্গী প্রয়োজন। তাই আব্বাও একটা সঙ্গী পাইছে। তাতেই তারা খুশি।
আহাদ আলী মন্ডল জানান,প্রথম স্ত্রী মারা যাওয়ার পর খুব কষ্টে দিন কাটছিল তাঁর। কিন্তু চার ছেলে ও তিন মেয়ে মানুষ করে বিয়ে সাদি দিতে গিয়ে কষ্ট ভুলে ছিলেন। তবে ছেলে মেয়েদের সংসার আলাদা হয়ে যাওয়ায় তিনি একা হয়ে পড়েন। এ কারণে আমেনা বেগমের সাথে ৫০ হাজার ৬৫০ টাকা দেনমোহরে বিয়ে করেছেন। তিনি সবার কাছে দোয়া চান।
নব বিবাহিত আমেনা বেগম জানান,তাঁর দুই মেয়ে। বিয়ে হয়েছে অনেক আগে। স্বামী মারা যাওয়ায় একাই ছিলেন। তাই আহাদ আলীর বিয়ের প্রস্তাবে রাজি হয়েছেন। বাঁকি জীবন যেন সুখে কাটে সেজন্য তিনিও সবার দোয়া চেয়েছেন।