ডেস্ক নিউজ
মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের সহায়তা ও পুনর্বাসনে ভাসানচরেও যুক্ত হওয়ার ঘোষণা দিয়েছে ইউএনএইচসিআর। গত মঙ্গল ও বুধবার ইউএনএইচসিআরের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্বে ১৪ সদস্যের একটি দলের প্রথমে ভাসানচর ও পরবর্তীতে উখিয়া টেকনাফে রোহিঙ্গা পরিস্থিতি সরেজমিন পর্যবেক্ষণ শেষে বুধবার ঢাকায় এ ঘোষণা দেয়া হয়েছে। ইউএনএইচসিআর উখিয়া টেকনাফে ৩৪ শিবিরে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের সঙ্গেও যুক্ত।
বুধবার সকালে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় ইউএনএইচসিআরের দুই সহকারী হাইকমিশনারের সঙ্গে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেনের বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের একথা জানানো হয়েছে। বেলা ১১টায় বৈঠক শুরু হয়। বৈঠকে জাতিসংঘের এসিস্ট্যান্ট হাইকমিশনার ফর প্রোটেকশান গিলিয়ান ট্রিগস ও এসিস্ট্যান্ট হাইকমিশনার ফর অপারেশনস রাউফ মাজু, বাংলাদেশে জাতিসংঘের আবাসিক প্রতিনিধি মিয়া সেপ্পো ও পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠক শেষে উভয় কমিশনার ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুল মোমেন যৌথ প্রেস ব্রিফিং করেন। প্রেস ব্রিফিংয়ে উভয় কমিশনার অভিন্ন সুরে জানিয়ে দিলেন রোহিঙ্গাদের সহায়তা ও পুনর্বাসনে ভাসানচরে যুক্ত হবে জাতিসংঘ। ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের বসবাসের জায়গা কক্সবাজারের চেয়ে ভাল। এখানে অর্থায়ন নিয়ে আলোচনা হবে। রোহিঙ্গাদের সহায়তা ও পুনর্বাসনে যুক্ত থাকবে জাতিসংঘ। গিলিয়ান ট্রিগস ও মাজু আরও বলেছেন, বাংলাদেশসহ সব জায়গায় শরণার্থীদের পাশে থাকবে ইউএনএইচসিআর। তারা বলেছেন, ‘রোহিঙ্গাদের পাশে আমরা অতীতেও ছিলাম, ভবিষ্যতেও থাকব।’ করোনা থেকে রক্ষায় রোহিঙ্গাদের জন্য বাংলাদেশ সরকারের ভূয়সী প্রশংসা করেন তারা। ভাসানচরের পরিবেশ বিষয়ে তারা ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন।
গিলিয়ান ট্রিগস বলেন, বাংলাদেশের রোহিঙ্গা আশ্রয় শিবির বিশে^র মধ্যে সবচেয়ে বড় শরণার্থী শিবির। এখানকার পরিবেশ বেশ ভাল। রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসান প্রশ্নে তিনি বলেন, এর পুরোটা নির্ভর করছে মিয়ানমার সরকারের আন্তরিকতার ওপর। তবে এখন মিয়ানমারের রাজনৈতিক পরিস্থিতি খুবই জটিল। উখিয়া এবং ভাসানচর সফরের অভিজ্ঞতা নিয়ে গিলিয়ান ট্রিগস বক্তব্য দেন। তিনি বলেন, ভাসানচরের আশ্রয় শিবির আমরা ঘুরে দেখেছি এবং রোহিঙ্গাদের সঙ্গে আমরা আলাপ করেছি। ভাসানচর ইস্যুতে বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে আমরা কাজ করব এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে এর সঙ্গে যুক্ত হওয়ার আহ্বান জানাব। সহকারী কমিশনার রাউফ মাজু বলেন, রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী নির্যাতন ও নিপীড়নের শিকার হয়ে বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছে। তাদের জন্য সর্বোচ্চ নিরাপদ পরিবেশ তৈরি করতে হবে। এর প্রধান দায়িত্ব মিয়ানমারের।
প্রেস ব্রিফিংয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন বলেন, মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসার চার বছরেও দেশে ফিরে যেতে না পেরে রোহিঙ্গারা হতাশ। যে কারণে কয়েকজন রোহিঙ্গা ভাসানচর থেকে পালিয়েছিল এবং ইউএনএইচসিআরের প্রতিনিধি দলের সামনে বিক্ষোভ করেছে। মন্ত্রী বলেন, কি করবে তারা। সন্তানদের লেখাপড়া নেই, তাই তাদের মধ্যে হতাশা বিরাজ করছে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, মিয়ানমারে এখন সামরিক সরকার দেশ চালাচ্ছে। এ সরকারের সঙ্গে আলোচনা করে জাতিসংঘ রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের সুযোগ কাজে লাগাতে পারে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী সাংবাদিকদের আরও বলেন, তিনি ইউএনএইচসিআরের প্রতিনিধি দলকে বলেছেন, মিয়ানমারের রাখাইনে নিরাপদ পরিবেশ সৃষ্টির যে প্রকল্প বাস্তবায়ন হচ্ছে তা পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের প্রতিনিধিদের দেখানো হোক, যেন এতে তাদের মধ্যে আগ্রহ সৃষ্টি হয় এবং বিশ্বাস জন্মায়।