রাজধানীর ব্যস্ততম সড়কের সিগন্যালে লাল বাতি জ্বলামাত্রই দ্রুত গতিতে চলাচলকারী যানবাহনের সামনে হাত তোলেন ট্রাফিক পুলিশ। আর সঙ্গে সঙ্গেই নিজ নিজ অবস্থানে দাঁড়িয়ে যায় বাস,প্রাইভেটকার, মোটরসাইকেল। যানবাহন থামামাত্রই যানবাহনের ভেতরে বা জানালার পাশে হাজির হয়ে যায় ভিক্ষুক। কেউ কেউ বাসের ভেতরে প্রবেশ করে প্রত্যেক যাত্রীর কাছে সাহায্যের জন্য আবেদন জানায়। একেকজনের ভিক্ষার কৌশল একেক রকম। কেউ অসুস্থ, কেউ প্রতিবন্ধী কেউবা স্ত্রী-সন্তানের অসুস্থতার কথা বলে ভিক্ষা চায়। একই দৃশ্য দেখা যায় সড়কে দাঁড়িয়ে থাকা প্রাইভেটকারের জানালার পাশে। বন্ধ জানালায় বার বার টোকা দিয়ে খুলতে বাধ্য করেন তারা। এরপর একই অজুহাতে দাবি করেন সাহায্য-সহায়তা।
ভিক্ষুকদের এমন নানা অসহায়ত্বের কথা শুনে অনেক মানুষ সাধ্যমত দান করেন। যারা দান করেন তারা মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকেই পকেটের টাকা দান করেন। সারা বছরজুড়ে ভিক্ষা দেওয়া নেওয়ার এটি একটি পরিচিত দৃশ্য। তবে রমজান মাসে ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা একটু বেশিই দান করেন। সারাদিন রোজা রাখা ব্যক্তির সামনে কোনো অসহায় ভিক্ষুক এসে সাহায্য চাইলে সাধ্যমতো দেওয়ার চেষ্টা করেন সবাই।
রমজান মাস ও ঈদকে টার্গেট করে এই সুযোগটাও কাজে লাগান ভিক্ষুকরা। এক ভিক্ষুকের ভাষ্য, রমজান মাসে ও ঈদের সময় যে টাকা উপার্জন হয় তা দিয়েই পরের তিন/চার মাস পার হয়ে যায়। অনেক ভিক্ষুক এই টাকা দিয়ে তাদের গরীব পরিবারের কিছুটা দুঃখ লাঘবের চেষ্টা করেন।
আবার অনেক ভিক্ষুক আছেন যারা ভিক্ষার টাকা দিয়ে নিজের আরাম সারেন। তেমনি একজন ভিক্ষুক হলেন শরীয়তপুরের বেঁটে ভিক্ষুক আকাশ।
রমজান মাসে প্রতিদিন তার গড়ে সাড়ে তিন থেকে চার হাজার টাকা উপার্জন। অর্থাৎ ৩০ রোজায় তার উপার্জন এক লাখ টাকার উপরে। এছাড়াও ঈদের আগে-পরে তো আলাদা উপার্জন আছেই। ভিক্ষুক আকাশের কথার প্রমাণ পাওয়া গেছে চোখের সামনেই।
সেদিন ছিল ২০ রমজান। দুপুর দেড়টা। আকাশ ভিক্ষা করছিল কারওয়ানবাজার এলাকায়। কিন্তু একটু পর পর সে রাস্তার পাশের একটি চায়ের দোকানে পর্দার আড়ালে চলে যাচ্ছিলো। সেখানে গিয়ে দেখা যায়, আকাশ নিজের পকেট থেকে অনেকগুলো ভাঁজ করা টাকা বেঞ্চে রেখে হিসাব করছে। পরে সব টাকা হিসাব করে দেখা গেল ২ হাজার ৪৩০ টাকা। এরপর সেই টাকা পকেটে ঢুকিয়ে একহাতে চা আর অপর হাতে গোল্ডলিফ সিগারেট ধরিয়ে দিলেন ভিক্ষুক আকাশ।
তিনি জানান, সকাল ১১টায় বাসা থেকে বের হয়েছিলেন। মাত্র ২ ঘণ্টায় তার ২ হাজার ৪৩০ টাকা উপার্জন হয়েছে। সারা দিনে চার হাজার এর কিছু কম বেশি টাকা আয় হয় তার। অর্থাৎ ঈদ মৌসুমে তার মোট লাখের ওপরে আয়। আর তিনি সবসময় গোল্ডলিফ সিগারেটই খান। দিনে সিগারেটের পিছনে তার ব্যয় ১০০ টাকার বেশি।
ব্যক্তিগত জীবন সম্পর্কে আকাশ জানান, তিনি বাবা-মায়ের একমাত্র ছেলে। তার একজন ছোট বোনও রয়েছে। সম্পতি বিয়েও করেছেন আকাশ। বউ তার সঙ্গে ঢাকায়ই থাকেন।
তিনি বলেন, ‘বউ আমার সঙ্গে ঢাকা থাকে। আমি যদি না খাইয়াও থাকি। তাও আমার বউরে না খাইয়া রাখবো না। তবে বউরে কোথাও কামে দিমু না। আপনারা যদি টাকা না দেন, তাহলে আমি খাব কী?
এ সময় পাশে থাকা এক ব্যক্তি আকাশকে ১৫ হাজার টাকা বেতনের চাকরি দিতে চায় মজা করে। তখন জবাবে আকাশ বলেন, ‘এত কম টাকায় আমার চলবো না ভাই। ঘরে বউ থাকবো না। আমি আরও বেশি কামাই।
সূত্র- আমাদের সময়