ডেস্ক নিউজ
হঠাৎ করেই ভোটের দিকে আগ্রহ বেড়েছে মানুষের। বিশেষ করে সুষ্ঠু ভোটের বিষয়ে এই আগ্রহ লক্ষ্যণীয়। দেশব্যাপী অনুষ্ঠিত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনা দেখা যাচ্ছে। সেই সঙ্গে উৎসবমুখর অংশগ্রহণ ছিল নারায়গঞ্জের সিটি করপোরেশন নির্বাচনেও। শুধু তাই নয়, দেশের যেখানেই বিভিন্ন কমিউনিটি বডির ছোটখাটো নির্বাচন হচ্ছে সেটা নিয়েই আগ্রহ দেখাচ্ছে মানুষ। ভোট গ্রহণ ও ফলাফল প্রকাশ সুষ্ঠু হলো কিনা তা নিয়ে আলোচনা করছে নিজেদের মধ্যে। ভোটের বিষয়ে সামাজিক মাধ্যমে আলোচনা করছে হরহামেশাই।
বিশ্লেষকদের মতে, জাতিগতভাবেই বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে নির্বাচন নিয়ে আগ্রহ উদ্দীপনা কাজ করে। সবসময়ই তারা নির্বাচন নিয়ে উৎসবে মেতে থাকে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বড় পরিসরের নির্বাচনগুলোতে নানান কারণেই মানুষের উৎসবমুখর অংশগ্রহণ সম্ভব হয়নি। নির্বাচনগুলোর আগে পরে প্রশ্নও উত্থাপিত হয়েছে নানান পক্ষ থেকে। বর্তমান নির্বাচন কমিশনও হারিয়েছে মানুষের আস্থা। আস্থাহীনতার কারণেই নির্বাচনের নিরপেক্ষতা ও গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে কথা বলছে সবাই। নির্বাচনে সহিংসতা বন্ধ করতে কারও কোনো কার্যকারিতা দেখা যায় না। এসব কারণে যখনই কোথাও কোনো ধরনের নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হচ্ছে তা নিয়ে অনলাইন-অফলাইনে মন্তব্য ছুড়ে দিচ্ছে মানুষ।
জানতে চাইলে জাতীয় নির্বাচন পর্যবেক্ষণ পরিষদ (জানিপপ)-এর চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, বেশ কয়েকটি কারণে মানুষের মধ্যে নির্বাচন নিয়ে আলোচনা বা আগ্রহ বেড়েছে। প্রথমত, আসন্ন সংসদ নির্বাচন আর দুই বছর বাকি আছে। দ্বিতীয়ত, বর্তমান নির্বাচন কমিশনের মেয়াদ প্রায় শেষের দিকে, এখন নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন হবে। তৃতীয়ত, নির্বাচন কমিশন গঠন নিয়ে সম্প্রতি আইন পাস হয়েছে। এসব কারণের সঙ্গে যোগ হয়েছে দেশব্যাপী ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন হওয়া। সেসব নির্বাচনে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক প্রার্থীর বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়ার খবরও বেরিয়েছে। এ ছাড়া ইভিএমে ভোট গ্রহণ ও এর নিরপেক্ষতা নিয়েও মানুষের আগ্রহ রয়েছে। এই সবকিছুই মানুষকে নির্বাচন বিষয়ে আগ্রহী করে তুলেছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ড. মীজানুর রহমান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, আমাদের দেশের মানুষ সবসময় নির্বাচনকে ‘উৎসবমুখর’ বলতে পছন্দ করেন। কিন্তু বিশ্বের ভালো দেশগুলোতে কোথাও উৎসবমুখর নির্বাচন বলা হয় না। কারণ নির্বাচন কোনো উৎসবের বিষয় না আর এটা কোনো খেলাধুলাও না। এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, এখানে উৎসব হয় কী করে! আর যেখানে নির্বাচন ভালোভাবে সম্পন্ন হয় সেখানে একে উৎসবমুখর নির্বাচন বলা হয়। আমাদের দেশে সবাই হইচই করে স্লোগান দেয়, ভালো খাবার খায়। এ জন্য নির্বাচনকে ঘিরে সাধারণের মধ্যে এক ধরনের আগ্রহ আছে। ড. মীজানুর রহমান বলেন, নারায়ণগঞ্জে সিটি নির্বাচন হোক বা এফডিসির নির্বাচন হোক, এসব নির্বাচনে দুই মেয়র প্রার্থী বা দুই প্যানেলের প্রার্থীরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন। এই বিষয়টি ভালো নির্বাচনের জন্য যথেষ্ট। প্রতিপক্ষ যদি মাঠে থাকে তাহলে ভালো নির্বাচনই হয়। একতরফা নির্বাচন, কেন্দ্র দখল, দাঙ্গা-হাঙ্গামা, বুথ দখল এসব ঘটনা ঘটে প্রতিদ্বন্দ্বিতার অভাবে। তিনি বলেন, নির্বাচনের সময় বহুরকমের শক্তি কাজ করে। তারা নির্বাচন বানচাল বা একে বিতর্কিত করার চেষ্টা করে। অপশক্তিগুলো নির্বাচনকে ভণ্ডুল করে দেওয়ার চেষ্টা করে। ভালো নির্বাচনের জন্য আইন-কানুন, নির্বাচন কমিশন, পুলিশ-প্রশাসন এগুলো সবই লাগবে। কিন্তু এর আগে লাগবে রাজনৈতিক দলের সদিচ্ছা। রাজনৈতিক সব দলকে বলতে হবে যে আমরা শেষ পর্যন্ত সবাই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করব, নির্বাচনে থাকব। আর সেখানে প্রত্যেকে প্রত্যেকের জন্য জায়গা করে দিবে। আমরা যতই আইন করি না কেন সুষ্ঠু নির্বাচন হওয়া সম্ভব না। নির্বাচন নিয়ে কাজ করা সংস্থা ব্রতীর প্রধান নির্বাহী শারমিন মুরশিদ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, নারায়ণগঞ্জে তুলনামূলক সফল একটি নির্বাচন হয়েছে। তবে এই একটি উদাহরণ থেকে আমরা এই সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারি না যে, নির্বাচনের বিষয়ে মানুষের আগ্রহ বেড়েছে। নারায়ণগঞ্জের নির্বাচন একটি ব্যতিক্রমী ঘটনা। ব্যতিক্রম কখনো উদাহরণ হতে পারে না।