ডেস্ক নিউজ
প্রতি ডোজ করোনা ভ্যাকসিন কিনতে সরকারের খরচ পড়বে ৪ ডলার, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় ৩৩৯ টাকা। আর তা জনসাধারণের কাছে বিক্রি করা হবে ৫ ডলারে বা ৪২৩ টাকায়। তবে এটা চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নয়। এ ভ্যাকসিন বিনা পয়সাও দেওয়া হতে পারে। এদিকে ভ্যাকসিন কিনতে গতকাল ৬৩৫ কোটি টাকা ছাড় করেছে অর্থ বিভাগ। স্বাস্থ্য বিভাগ করোনা ভ্যাকসিন কেনার জন্য প্রাথমিকভাবে চেয়েছিল ১ হাজার ২৭১ কোটি টাকা। সাড়ে ১৬ কোটি মানুষের ভ্যাকসিন কিনতে মোট প্রয়োজন হবে ১৪ হাজার কোটি টাকা। চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেটে বরাদ্দ রাখা হয়েছে ১০ হাজার কোটি টাকা। বাকি অর্থ উন্নয়ন সহযোগীদের কাছ থেকে পাওয়ার আশা করছে সরকার। এ ছাড়া ভ্যাকসিন কার্যক্রম প্রচারের জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে ১০০ কোটি টাকা। অর্থ বিভাগ সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। এ বিষয়ে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব মো. আবদুল মান্নান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমরা যেন অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ভ্যাকিসন পাই এটা আমাদের জন্য খুবই জরুরি। আমরা সে লক্ষ্যে কাজ করছি। যে অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে তা প্রাথমিক লট। প্রয়োজনীয় বাকি অর্থ পর্যায়ক্রমে দ্রুত ছাড় হবে বল আমরা আশাবাদী।’
সূত্র জানান, ভ্যাকসিন কেনার জন্য নানা দেনদরবারের পর উন্নয়ন সহযোগীরা ১ বিলিয়ন ডলার বা ৮ হাজার ৫০০ কোটি টাকা প্রদানের মোটামুটি প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। এর বাইরে বাজেটে ১০ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ থাকলেও এনবিআর ২ থেকে ৩ হাজার কোটি টাকার বেশি হয়তো দিতে পারবে না। কারণ রাজস্ব আদায় কমে গেছে। দেশের সব মানুষের জন্য নিশ্চিত করতে হলে সাড়ে ১৬ কোটি ডোজ ভ্যাকসিন কিনতে হবে। এতে মোট ব্যয় হবে আনুমানিক ১৪ হাজার কোটি টাকা। প্রথম দফায় সাড়ে ৩ কোটি ডোজ ভ্যাকসিন কেনার প্রস্তুতি শুরু করেছে সরকার। এ জন্য ভারতীয় কোম্পানির সঙ্গে বাংলাদেশি একটি ওষুধ কোম্পানির প্রাথমিক চুক্তিও হয়েছে। এর জন্য বাংলাদেশকে পরিশোধ করতে হবে প্রায় আড়াই হাজার কোটি টাকা। সূত্র জানান, পৃথিবীর বহু দেশই করোনার ভ্যাকসিন আবিষ্কারের চেষ্টা করছে। বাংলাদেশেও দু-একটি কোম্পানি কাজ করছে। তবে এ দৌড়ে সবচেয়ে এগিয়ে চীন, যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়াসহ আরও কয়েকটি দেশ। আশা করা হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের অক্সফোর্ডের আবিষ্কৃত ভ্যাকসিন আগামী মাসের মধ্যে বাজারে আসবে। সে ভ্যাকসিনই অগ্রাধিকার ভিত্তিতে পাওয়ার চেষ্টা করছে বাংলাদেশ।
এদিকে করোনার কারণে গত মাসে ভার্চুয়ালি অনুষ্ঠিত বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফের বার্ষিক সভায় অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষের জন্য কভিড-১৯-এর ভ্যাকসিন প্রাপ্তি নিশ্চিত করতে উন্নয়ন সহযোগীদের একাধিকবার অনুরোধ জানিয়েছেন। শুধু তাই নয়, অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ভ্যাকসিন পাওয়ার প্রতিও তিনি গুরুত্ব আরোপ করেন। এদিকে মহামারী রূপ নেওয়া কভিডের দ্বিতীয় ঢেউয়ের ঝুঁকির মধ্যেই এর ভ্যাকসিন কেনার অর্থ নিয়ে চিন্তায় পড়েছে সরকার। বছরজুড়ে করোনার অচলাবস্থার কারণে সরকারের আয় কমে গেছে আশঙ্কাজনক হারে। অথচ করোনাকালে খরচ উল্টো আরও বেড়েছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিক শেষে ১৩ হাজার কোটি টাকা ঘাটতি রয়েছে। ফলে চলতি বছরের বাজেটে ভ্যাকসিন কেনার জন্য ১০ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হলেও এনবিআর এর কতটুকু জোগান দিতে পারবে তা নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছে। অর্থ বিভাগের কর্র্মকর্তারা বলছেন, এ খাতের জন্য ২ থেকে ৩ হাজার কোটি টাকার বেশি হয়তো এনবিআর দিতে পারবে না। ফলে ভ্যাকসিন কেনার অর্থের জোগান দেওয়া এখন একটা বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)-এর দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের সাবেক উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. মোজাহেরুল হক বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, প্রতিটি দেশই নিজেদের অবস্থান থেকে চেষ্টা করছে ভ্যাকসিন তৈরি ও তা পাওয়ার। যে কোনো ভ্যাকসিন মানবদেহে প্রয়োগের আগে তা নিরাপদ ও কার্র্যকর কি না তা ঠিক করা হয়। এখানেও তাই হচ্ছে। এ জন্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান এর লাইসেন্স দেবে। আবার বিপণনের জন্যও অনুমোদন লাগবে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাকেও এর অনুমোদন দিতে হবে। সর্বশেষ যে দেশ তার জনসাধারণের জন্য এটা ব্যবহার করতে চায় সে দেশকেও এর অনুমোদন দিতে হবে। তিনি বলেন, এরপর আসে ভ্যাকসিন প্রাপ্তির বিষয়। নিয়ম অনুযায়ী প্রতিটি দেশের ২০ শতাংশ মানুষ অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ভ্যাকসিন পাবে। এ ক্ষেত্রে ফ্রন্টলাইনার হিসেবে পাবেন স্বাস্থ্যকর্মীরা। এখানে বিনা পয়সায় ভ্যাকসিন পাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। তবে দরিদ্র দেশগুলোর জিএভিআইর অর্থায়নের মাধ্যমে ভ্যাকসিন পাওয়ার সুযোগ রয়েছে, যা থেকে বাংলাদেশও এ সুবিধা পাবে।