করোনার ভ্যাকসিন ক্রয়ে একটি প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক)। এক্ষেত্রে শুধু ভ্যাকসিন কিনতে ব্যয় হবে ৩ হাজার ৪৩৭ কোটি টাকা। এর সঙ্গে পরিবহন সংরক্ষণসহ আনুষাঙ্গিক ব্যয় মিলে মোট যাবে ৫ হাজার ৬৫৯ কোটি ৭ লাখ টাকা। একনক বৈঠক শেষে ব্রিফিংয়ে প্রধানমন্ত্রীর উদ্বৃতি দিয়ে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, ভ্যাকসিন কেনার ক্ষেত্রে যাতে নয়ছয় না হয় সেদিকে প্রধানমন্ত্রীসহ আমরা সবাই দৃষ্টি রাখবো। ভ্যাকসিন পাওয়াকে উচ্চ অগ্রাধিকার দেয়া হচ্ছে। আমরা আশাবাদী ইতোমধ্যেই করা চুক্তি অনুযায়ী ভ্যাকসিন পাওয়া যাবে। এজন্য শতভাগ প্রস্ততি গ্রহণ করা হচ্ছে। বলতে গেলে আমরা শতভাগ তৈরি। এদিকে সময়মতো ভ্যাকসিন পাওয়া যাবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান এবং স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব আবদুল মান্নান।
গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত বৈঠকে এ অনুমোদন দেয়া হয়। এতে গণভবন থেকে সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রী ও একনেক চেয়ারপারসন শেখ হাসিনা। বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফিং করেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান। এ সময় বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন পরিকল্পনা কমিশনের আর্থ-সামাজিক অবকাঠামো বিভাগের সদস্য (সচিব) আবুল কালাম আজাদ।
একনেক বৈঠক শেষে স্বাস্থ্য সচিব সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, ভ্যাকসিন কিনতে জিটুজি কিংবা যেভাবেই চুক্তি হোক পুরো বিষয়টি দুই দেশের (বাংলাদেশ ও ভারত) সরকারপ্রধান অবহিত রয়েছেন এবং তারা জড়িত। সুতরাং এ নিয়ে জটিলতার কিছু নেই। আশা করছি, সময়মতোই ভ্যাকসিন পাওয়া যাবে। এদিকে একনেক সভায় কোভিড-১৯ ইমার্জেন্সি রেসপন্স অ্যান্ড পেন্ডামিক প্রিপেয়ার্ডনেস প্রকল্প ব্যয় বাড়িয়ে ছয় হাজার ৭৮৬ কোটি ৫৯ লাখ টাকা করা হয়েছে। যা প্রকল্পটির প্রথম সংশোধনীর অনুমোদন। এ প্রকল্পের মূল ব্যয় ছিল ১ হাজার ১২৭ কোটি ৫১ লাখ টাকা। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে সরকারি অর্থায়ন ১৭২ কোটি ৪৬ লাখ এবং বিশ্বব্যাংক ও এশিয়ান ইনফ্রাস্ট্রাকচার ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংক (এআইআইবি) দিচ্ছে প্রায় ৬ হাজার ৬১৪ কোটি টাকা। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে। এর মধ্যে করোনার ভ্যাকসিন কেনা, সংরক্ষণ ও সরবরাহ বাবদ চার হাজার ২৩৬ কোটি ৭৮ লাখ টাকা ব্যয় করা হবে।
করোনা মোকাবিলায় অর্থ মন্ত্রণালয়ের অনুরোধে গত বছর বিশ্বব্যাংক জরুরি সহায়তা তহবিল থেকে এক’শ মিলিয়ন ডলার ঋণ সহায়তা দিতে চুক্তিবদ্ধ হয়েছিল। এশিয়ান ইনফ্রাস্ট্রাকচার ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংক (এআইআইবি) বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে যৌথভাবে এই এক’শ মিলিয়ন ডলার ঋণদান করবে। এআইআইবি’র দেয়া অর্থ ব্যয় হবে নতুন কার্যক্রমে। এ ছাড়া,করোনা ভ্যাকসিন কেনা বাবদ বিশ্বব্যাংকের প্রতিশ্রুত পাঁচ’শ মিলিয়ন ডলার প্রকল্পে অন্তর্ভুক্ত করতে এবং করোনা ভাইরাস বার বার মিউটেশনের কারণে প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে নতুন কার্যক্রম অন্তর্ভুক্ত করতে। একই সঙ্গে জরুরি পরিস্থিতি মোকাবিলায় বিদ্যামান অসংগতি দূর করতে প্রকল্পে সংশোধন প্রয়োজন হয়।
সংশোধিত প্রকল্পের কার্যক্রম হিসেবে ২৭টি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পিসিআর ল্যাব স্থাপন, আইইডিসিআর এবং বিআইটিআইডিতে তিনটি ল্যাব স্থাপন, একটি মোবাইল মাইক্রোবায়োলজি ল্যাব স্থাপন, প্রতিটি জেলা সদর হাসপাতালে ১০ শয্যার আইসিইউ ইউনিট স্থাপন, ঢাকা এবং চট্টগ্রামের সংক্রামক হাসপাতালে পাঁচ শয্যার আইসিইউ ইউনিট স্থাপন, প্রতিটি জেলা সদরে ২০ শয্যার আইসোলেশন সেন্টার স্থাপন, হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে দুটি, শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে একটি, ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে একটি, চট্টগ্রাম স্থলবন্দরে একটি এবং মোংলা স্থলবন্দরে একটি মেডিকেল স্ক্রিনিং সেন্টার স্থাপন করা হবে।
প্রকল্পে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরিকল্পনা করা কোভিড-১৯ ভ্যাকসিনস গ্লোবাল অ্যাকসেস ফ্যাসিলিটি (কোভ্যাক্স) উদ্যোগ বাবদ ১৫২ মিলিয়ন মার্কিন ডলার, ডিরেক্ট প্রোকিউরমেন্ট ২৩১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার, মোট ভ্যাকসিন ৩৮৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলার, স্টোরেজ অ্যান্ড কোল্ড চেইন বাবদ ৩১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার, পরিবহন ও বাস্তবায়ন বাবদ ৯০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ব্যয় করা হবে।
একনেক সভায় মোট প্রায় নয় হাজার ৫৬৯ কোটি ২৩ লাখ টাকা ব্যয়ে ছয়টি প্রকল্পের অনুমোদন দেয়া হয়। এর মধ্যে সরকারি অর্থায়ন তিন হাজার ৮৬৭ কোটি ৫৮ লাখ টাকা এবং বৈদেশিক উৎস থেকে পাওয়া যাবে পাঁচ হাজার ৭০১ কোটি ৬৫ লাখ টাকা।
বাকি প্রকল্পগুলো হলো-তথ্য মন্ত্রণালয়ের ‘জেলা পর্যায়ে আধুনিক তথ্য কমপ্লেক্স নির্মাণ (১ম পর্যায়)’ প্রকল্প; পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের ‘সুন্দরবন সুরক্ষা’ প্রকল্প; দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের ‘ভ‚মিকম্প ও অন্যান্য দুর্যোগকালে অনুসন্ধান, উদ্ধার অভিযান পরিচালনা এবং জরুরি যোগাযোগের জন্য যন্ত্রপাতি সংগ্রহ (৩য় পর্যায়)’ প্রকল্প; সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের ‘জেলা মহাসড়কসমূহ যথাযথ মান ও প্রশস্ততায় উন্নীতকরণ (সিলেট জোন) (১ম সংশোধিত)’ প্রকল্প; গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের ‘চিটাগাং সিটি আউটার রিং রোড (৩য় সংশোধিত)’ প্রকল্প।
একনেক সভায় অংশ নেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান, কৃষিমন্ত্রী মো. আব্দুর রাজ্জাক, তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম, শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন, স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক , বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন, ভ‚মিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী, গৃহায়ন ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদ এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. মো. এনামুর রহমান।