ডেস্ক নিউজ
প্রশ্ন : মহামারী ছড়িয়ে পড়া কিংবা ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা থাকা অবস্থায় জুমার নামাজ ও জামাতের সঙ্গে নামাজ উপস্থিত না হওয়ার অবকাশের বিধান কী?
উত্তর : ১৬-৭-১৪৪১ হিজরি মোতাবেক ১৮-০৩-২০২০ রোজ বুধবার রিয়াদে অনুষ্ঠিত উচ্চ উলামা পরিষদের চব্বিশতম অসাধারণ সভায় পরিষদের কাছে পেশকৃত ‘মহামারী ছড়িয়ে পড়া কিংবা ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা থাকা অবস্থায় জুমার নামাজ ও জামাতের সঙ্গে নামাজে উপস্থিত না হওয়ার রুখসতের (অবকাশ) বিষয়ে পর্যালোচনা করা হয়। ইসলামি শরিয়তের দলিল প্রমাণ, উদ্দেশ্য লক্ষ্য, নীতিমালা ও এ-সংক্রান্ত আলেমদের বক্তব্য সর্বতোভাবে অবগতির পর উচ্চ উলামা পরিষদ নিম্নোক্ত ঘোষণা দেয়
এক : মহামারী রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির জুমার নামাজ ও পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের জামাতে উপস্থিত হওয়া হারাম। কেননা মহানবী (সা.) বলেছেন, অসুস্থকে যেন সুস্থ পশুর মধ্যে প্রবেশ করানো না হয়।’ (বোখারি, হাদিস : ৫৩২৮; মুসলিম, হাদিস : ৪১১৭)
তিনি আরও বলেন, ‘তোমরা কোনো এলাকা প্লেগ রোগের সংবাদ শুনলে সেখানে প্রবেশ করো না। আর যদি কোনো এলাকায় তোমরা অবস্থান করার মধ্যে সেখানে প্লেগ রোগ শুরু হয়, তবে তোমরা সেখান থেকে বের হবে না।’ (বোখারি ও মুসলিম)
দুই : বিশেষজ্ঞরা যার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে, তাকে কোয়ারেন্টাইনে থাকতে হবেতার ওপর ওয়াজিব হলোএ সিদ্ধান্ত মেনে চলা। নামাজের জামাতে ও জুমার নামাজে উপস্থিত না হওয়া। নামাজগুলো নিজের বাসায় কিংবা তার কোয়ারেন্টাইনের স্থলে আদায় করা। আল-শারিদ বিন সুওয়াইদ আছ-ছাকাফি (রা.) বর্ণনা করেন, ‘সাকিফদের প্রতিনিধিদলে কুষ্ঠরোগে আক্রান্ত এক ব্যক্তি ছিল। তখন রাসুল (সা.) তার কাছে লোক পাঠিয়ে জানালেন যে, নিশ্চয় আমি আপনার বাইআত গ্রহণ করেছি; অতএব আপনি ফিরে যান।’ (মুসলিম শরিফ)
তিন : যে ব্যক্তি এই আশঙ্কা করছে যে, সে নিজে আক্রান্ত হবে কিংবা অন্যকে আক্রান্ত করবে- তার জন্য জুমার নামাজ ও নামাজের জামাতে উপস্থিত হওয়ার ক্ষেত্রে অবকাশ রয়েছে। রাসুল (সা.) বলেন, ‘নিজে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া নয় এবং অন্যকে ক্ষতিগ্রস্ত করা নয়।’ (ইবনে মাজাহ)
উল্লিখিত অবস্থাগুলোতে যে ব্যক্তি জুমার নামাজে উপস্থিত হবে না, সে জুমার বদলে চার রাকাত জোহরের নামাজ আদায় করে নেবে।
তবে এ ক্ষেত্রে আল্লাহকে ভয় করা, তার কাছে আশ্রয় ও ক্ষমাপ্রার্থনা করা জরুরি। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘আল্লাহ যদি তোমাকে বিপদে ফেলেন; তবে তিনি ছাড়া তা থেকে উদ্ধার করার ক্ষমতা কারও নেই। আর তিনি যদি তোমার কল্যাণের ইচ্ছা করেনতবে তার অনুগ্রহ প্রতিহত করার ক্ষমতা কারও নেই। তার বান্দাদের মধ্যে তিনি যাকে ইচ্ছা তাকে কল্যাণ দান করেন। আর তিনি অধিক ক্ষমাশীল ও পরম দয়ালু।’ (সুরা ইউনুস, আয়াত : ১০৭)
মসজিদ বন্ধ নয়; সতর্ক হোন : ফিকাহবিদ ও মনীষী বিচারপতি মুফতি তাকি উসমানি এক সাক্ষাৎকারে বলেন, মসজিদ বন্ধ করার প্রশ্নই আসে না। সেখানে জামাত অবশ্যই হতে হবে। তবে যতটুকু সচেতনতা অবলম্বন করা দরকার, তা করতে হবে। আমি আবেদন করেছিলাম যে, সবাই সুন্নতগুলো ঘরে পড়বে। অজু ঘর থেকে করে আসবে। পাশাপাশি ইমাম সাহেব কিরাত খুব সংক্ষিপ্ত করবেন। যাতে করে জনসমাগমের সময়টা যতটুকু সম্ভব সংক্ষিপ্ত করা যায়।
এ ধরনের বিপদ রাসুল (সা.)-এর যুগ থেকেই ঘটে আসছে। এ ধরনের পরিস্থিতিতে কী ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হবেসে ব্যাপারে ইসলামি আইনবিদদের গবেষণা রয়েছে। এ ধরনের পরিস্থিতিতে মসজিদ বন্ধ করার ব্যাপারে আমাদের পূর্বসূরি ইসলামি আইনবিদদের যেমন ফতোয়া রয়েছে, তেমনি বর্তমান বিশ্বের ইসলামি আইনবিদদেরও ফতোয়া রয়েছে। জামিয়া আজহারের ফতোয়াও একইরকম। সবাই মসজিদে অবস্থান সংক্ষিপ্ত করার প্রতি গুরুত্ব দিয়েছেন।