ডেস্ক নিউজ
বাংলাদেশ ও মিয়ানমার সীমান্তের উদ্বেগজনক পরিস্থিতি বিদেশি কূটনীতিকদের অবহিত করেছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। বর্তমান পরিস্থিতিতে যেকোনো ধরনের সংঘাত প্রতিহত করে পুরো অঞ্চলের স্থিতিশীলতা রক্ষার জন্য কূটনীতিকদের সহায়তা চেয়েছে ঢাকা। গতকাল মঙ্গলবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় আসিয়ানভুক্ত দেশের বাইরে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ভারত, চীনসহ প্রায় সব পশ্চিমা দেশের রাষ্ট্রদূত ও হাই কমিশনারদের ব্রিফ করেন ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্রসচিব খুরশেদ আলম।
ব্রিফিং শেষে খুরশেদ আলম সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা বলেছি, রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়েছি পাঁচ বছর হয়ে গেল, তারা একজন রোহিঙ্গাকেও আজ পর্যন্ত ফেরত নেয়নি। আমাদের প্রধানমন্ত্রীও বলেছেন, আমরা ধৈর্যের সঙ্গে কাজ করছি। আসলেই আমরা ধৈর্যের সঙ্গে কাজ করছি। কিন্তু আমরা এমন কিছু করি নাই, যার জন্য মিয়ানমারের গোলা এসে আমাদের যে জনগণ, যারা আমাদের সীমান্তের ভেতরে আছে, তাদের জানমালের নিরাপত্তা ব্যাহত করবে। তারা ঘরবাড়িতে থাকতে পারবে না, এটা তো চলতে দেওয়া যায় না। এ কারণে আমরা তাদের বলেছি, আপনাদের সাহায্য আমরা চাই, যাতে করে মিয়ানমার এই অঞ্চলে একটা অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করে ভবিষ্যতে ফায়দা লুটতে না পারে। আমরা কোনোভাবে চাই না এখানে জড়িত হতে। এখানে জড়িত হলে মিয়ানমার হয়তো সুযোগ পাবে, এই রোহিঙ্গাদের ফেরত না নেওয়ার জন্য অজুহাত পাবে। সেই রকম কোনো অজুহাত আমরা মিয়ানমারকে এই মুহূর্তে দিতে চাইছি না।’
তিনি বলেন, ‘আমরা যে কোনো উসকানিতে পা দিচ্ছি না, সেজন্য বিদেশি কূটনীতিকেরা আমাদের প্রশংসা করেছেন। তারা বলেছেন, তারা তাদের সরকারকে এই জিনিসগুলো জানাবেন এবং যাতে করে ভবিষ্যতে যদি কোনো কিছু করণীয় থাকে, বিশেষ করে জাতিসংঘে যদি কোনো কিছু করণীয় থাকে, তারা আমাদের সে বিষয়ে সহায়তা করবেন বলে আশ্বাস দিয়েছেন।’ মিয়ানমার ইচ্ছাকৃতভাবে এদিকে গোলা পাঠাচ্ছে কি না—এমন প্রশ্নের জবাবে খুরশেদ আলম বলেন, ‘সেটা আমাদের ধর্তব্যের বিষয় না। মিয়ানমার সব সময় এর জন্য আরাকান আর্মি ও আরসাকে দায়ী করে আসছে। আমরা বলছি, ইচ্ছাপূর্বক আমাদের এই সংঘাতে জড়ানোর যে প্রচেষ্টা, সেটা আমরা কূটনীতিকদের বলেছি। আমরা এই উসকানিতে সাড়া দেব না। আমরা আপনাদের এটা অবহিত করলাম, আপনারা যে পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি মনে করেন, যথাযথ মনে করবেন, সেটা আপনারা নেবেন।’ কূটনৈতিক পর্যায়ের পাশাপাশি সামরিক বাহিনীর মধ্যে উত্তেজনার বিষয়ে যোগাযোগ হয়েছে কি না—এমন প্রশ্নে খুরশেদ আলম বলেন, ‘আমরা সর্বস্তরেই মিয়ানমারের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছি।’
এর আগে সোমবার থেকে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর জোট অ্যাসোসিয়েশন অব সাউথ-ইস্ট এশিয়ান ন্যাশনসের (আসিয়ান) কূটনীতিকদের এই উদ্বেগজনক পরিস্থিতি সম্পর্কে ব্রিফ করা হয়। এ সময় আসিয়ানভুক্ত দেশের কূটনীতিকেরা বলেন, গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচিত সরকারকে উত্খাত করার পর থেকে মিয়ানমারের সামরিক সরকার যেভাবে দেশ চালাচ্ছে, এতে তারাও হতাশ।
উল্লেখ্য, গত আগস্টের শুরু থেকে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী ও আরাকান আর্মির মধ্যে চলমান সংঘাত বাংলাদেশের সীমান্তে ভীতির সৃষ্টি করেছে। গত শুক্রবার মিয়ানমার থেকে আসা মর্টারের গোলা নো ম্যান্স ল্যান্ডে আঘাত করলে এক জন নিহত ও পাঁচ জন আহত হন। এ ঘটনায় সীমান্ত এলাকায় বসবাসকারী বাংলাদেশি নাগরিকদেরও জীবন-জীবিকা প্রভাবিত হয়েছে।
বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতের কাছে ব্যাখ্যা দিয়েছে মিয়ানমার
অভ্যন্তরীণ গোলযোগে মিয়ানমার থেকে মর্টারশেল এসে বাংলাদেশের সীমানায় পড়ে হতাহতের ঘটনায় উদ্বিগ্ন ঢাকা। চলমান পরিস্থিতিতে চার দফায় দেশটির রাষ্ট্রদূতকে তলব করে কড়া প্রতিবাদ জানিয়েছে ঢাকা। এবার মিয়ানমারে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মঞ্জুরুল করিম খান চৌধুরীকে ডেকে এ বিষয়ে ‘ব্যাখ্যা’ দিয়েছেন দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক জ ফিও উইন। যদিও তিনি এ ঘটনার পুরো দায় আরাকান আর্মি ও আরসার ওপর চাপানোর চেষ্টা করেছেন।
মিয়ানমারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক ফেসবুক পোস্টে জানানো হয়েছে, সোমবার বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মঞ্জুরুল করিম চৌধুরীর সঙ্গে মহাপরিচালক জ ফিও উইনের বৈঠক হয়। বৈঠকে মহাপরিচালক সীমান্তের বর্তমান পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করেছেন। তিনি এ ঘটনার দায় আরাকান আর্মি ও আরসার ওপর চাপিয়ে দাবি করেন, ইচ্ছাকৃতভাবে ঐ সংগঠন দুটি এসব কাজ (বাংলাদেশে বোমা, গুলি ও মর্টারশেল নিক্ষেপ) করছে, যাতে করে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে সম্পর্কে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। তিনি আরো বলেন, অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে সীমান্তের কাছাকাছি প্রয়োজনীয় নিরাপত্তাব্যবস্থা গ্রহণের সময় মিয়ানমার পক্ষ সর্বদা দ্বিপাক্ষিক চুক্তি ও আন্তর্জাতিক রীতিনীতি মেনে চলে, পাশাপাশি বাংলাদেশসহ সব দেশের অখণ্ডতা ও সার্বভৌমত্বকে সম্মান করে। মিয়ানমার পক্ষ সীমান্ত এলাকায় শান্তি বজায় রাখতে বাংলাদেশকে সহযোগিতা করবে। একই সঙ্গে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে পূর্ণ ও পারস্পরিক সহযোগিতার গুরুত্বের ওপর জোর দেন তিনি।