বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যবিরোধীদের ঔদ্ধত্বপূর্ণ বক্তব্যের প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার রাজধানীতে ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র সংগঠনের সমাবেশ থেকে কড়া বক্তব্য এসেছে।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্য যারা বুড়িগঙ্গায় ফেলে দেয়ার হুমকি দিয়েছেন তাদেরকে বুড়িগঙ্গা তীরে আসতে বলেছে ছাত্রলীগ। নেতারা বলেছেন, হুমকিদাতা সবাইকে ভাসিয়ে দেয়া হবে।
বৃহস্পতিবার দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে ‘সন্ত্রাস ও উগ্র সাম্প্রদায়িকতা বিরোধী’ এই সমাবেশ হয়।
সমাবেশে ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় সংসদের পাশাপাশি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও ঢাকা মহানগরের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
ছাত্রলীগ সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় বলেন, ‘জাতির পিতাকে নিয়ে কোনো ধৃষ্টতা দেখালে দাঁতভাঙা জবাব দেয়া হবে।’
তিনি বলেন, ‘মুখ সামলায় কথা বলবেন। বুড়িগঙ্গার ধারে কাছে আইসেন, সবগুলাকে ভাসায়া দিব।’
রাজধানীর ধোলাইপাড়ে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য নির্মাণের বিরোধিতা করে ধর্মভিত্তিক দল ইসলামী আন্দোলনের সাম্প্রতিক কর্মসূচি নিয়ে তোলপাড় হচ্ছে। চরমোনাইয়ের পীরের নেতৃত্বাধীন দল একে মূর্তি আখ্যা দিয়ে বলেছে, এটি নির্মাণ হলে বুড়িগঙ্গায় ফেলে দেয়া হবে।
হেফাজতে ইসলামের নেতা মামুনুল হকও একই ধরনের বক্তব্য দিয়ে প্রতিরোধের মুখে পড়েছেন। দেশের বিভিন্ন এলাকায় মাহফিল করতে পারেননি তিনি। শুক্রবার চট্টগ্রামের একটি মাহফিলেও মামুনুলকে প্রতিহতের ঘোষণা দেয়া হয়েছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবেশে মামুনুলের বিরুদ্ধে জঙ্গিবাদে উস্কানির অভিযোগ এনে ছাত্রলীগ সভাপতি বলেন, ‘এখনই তার লাগাম টানতে হবে। তার লেজ কাটার সময় এসেছে।’
বিভিন্ন ইউটিউব ভিডিওতে মামুনুল হক মহানবী হযরত মোহাম্মদ (সা.) কেও অবমাননা করেছেন বলেও অভিযোগ করা হয় সমাবেশে।
সমাবেশে ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য বলেন, বিভিন্ন মুসলিম দেশেও ভাস্কর্য রয়েছে। সেগুলোও কি অবৈধ?
তিনি বলেন, ‘একটি শ্রেণি ধর্মের অপব্যাখ্যা করে মিথ্যা ও কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করে ধর্ম নিয়ে ছিনিমিনি খেলছে। স্বাধীন দেশের মাটিতে ধর্ম ব্যবসায়ী ও রাজাকারদের আর জায়গা দেয়া হবে না।
‘তারা যদি সত্য কথা বলতো তাহলে ৯০ শতাংশ মুসলমানের দেশে তাদের সমর্থনই বেশি থাকত। কিন্তু সাধারণ মানুষ তাদের এই অপব্যাখ্যা এখন আর বিশ্বাস করে না।’
সমাবেশ ছাত্রলীগ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন বলেন, মানুষের ধর্মীয় বিশ্বাস নিয়ে ছিনিমিনি খেললে ছাত্রলীগ দুর্বার জবাব দিতে প্রস্তুত।
বিভিন্ন সময় নানা ভাস্কর্য নিয়ে বিরোধিতা করেছে কয়েকটি ইসলামপন্থি সংগঠন। এর আগে তাদের দাবির মুখে শাহজালাল বিমানবন্দরের সামনে থেকে বাউল ভাস্কর্য ও সুপ্রিম কোর্টের সামনে থাকা লেডি জাস্টিসের ভাস্কর্য সরিয়ে নেয় সরকার।
আওয়ামী লীগ এখনও ভাস্কর্য ইস্যুতে সরাসরি কোনো বক্তব্য দেয়নি। তবে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ধোলাইপাড়েরটি হবেই, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানেও হবে আরও একটি।
ইসলামী দলগুলোর বক্তব্যকে পাত্তা না দেয়ার কথা বলে তিনি এও বলেছেন, ‘রাস্তাঘাটে এখানে-সেখানে কারও কোনো কথা আমলে নেয়ার প্রয়োজন আছে বলে আমি মনে করি না। বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য হবেই।’
আওয়ামী লীগ সরাসরি কিছু না বললেও কড়া বক্তব্য এসেছে শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের পক্ষ থেকে। তিনি ‘মৌলবাদী গোষ্ঠীকে’ বেশি বাড়াবাড়ি না করতে হুঁশিয়ার করে বলেছেন, ‘বেশি বাড়াবাড়ি করলে ঘাড় মটকাতে সময় লাগবে না।’