ডেস্ক নিউজ
মুজিবশতবর্ষের উপহার হিসেবে বোরো মৌসুমে আবাদের জন্য ব্রি ১০০ নামের নতুন একটি জাত অবমুক্ত করা হয়েছে। জিঙ্কসমৃদ্ধ পাঁচটি জাতের পর আরও চিকন চালের জাত হিসেবে মুজিবশতবর্ষে এটি নিয়ে আসলো বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট (ব্রি) বিজ্ঞানীরা। মঙ্গলবার জাতীয় বীজ বোর্ডের ১০৪তম সভায় চূড়ান্ত অনুমোদন দেয়া হয়।
কৃষি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ও জাতীয় বীজ বোর্ডের সভাপতি মো. মেসবাহুল ইসলামের সভাপতিত্বে মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (গবেষণা) কমলারঞ্জন দাশ, অতিরিক্ত সচিব ও মহাপরিচালক (বীজ) বলাই কৃষ্ণ হাজরা, বিএডিসির চেয়ারম্যান মো. সায়েদুল ইসলাম, ব্রির মহাপরিচালক ড. মো. শাহজাহান কবীর, বিজেআরআইর মহাপরিচালক ড. আশম আনোয়ারুল হকসহ অন্যান্য সংস্থাপ্রধান ও বীজ বোর্ডের সদস্যবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। সভায় একইসাথে বাংলাদেশ পাট গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিজেআরআই) উদ্ভাবিত লবণাক্ততাসহিষ্ণু দেশী পাটের (বিজেআরআই দেশী পাট-১০) জাত অবমুক্ত করা হয়েছে।
মুজিবশতবর্ষ উপলক্ষে ব্রি উদ্ভাবিত শততম জাতের (ব্রি ধান১০০) অবমুক্তকরণ এটি। ব্রির তথ্যে জানা যায়, ‘ব্রিধান ১০০’ হাইজিংকসমৃদ্ধ। জিংকের পরিমাণ প্রতি কেজিতে ২৫.৭০ মিলিগ্রাম। দেশের ১০টি স্থানে ট্রায়াল করে গড় ফলন হেক্টর প্রতি ৭.৬৯ মেট্রিক টন পাওয়া গেছে। জাতটির জীবনকাল ১৪৮ দিন। জাতীয় বীজ বোর্ডের সভাপতি মো. মেসবাহুল ইসলাম বলেন, মুজিবশতবর্ষে উচ্চজিংকসমৃদ্ধ ‘ব্রি ধান ১০০’ অবমুক্ত করতে পারা খুবই আনন্দের। আশা করা যায়, এটি একটি মেগা ভ্যারাইটি হবে। দেশের দরিদ্র জনগোষ্ঠীর পুষ্টির অধিকাংশ ক্যালরি, প্রোটিন ও মিনারেল আসে ভাত থেকে। ভাত তাদের কাছে সহজলভ্য। জিংকসমৃদ্ধ এ জাতটি উদ্ভাবনের ফলে মানুষের জিংকের চাহিদা অনেকটাই পূরণ হবে।
ব্রির মহাপরিচালক ড. মোঃ শাহজাহান কবীর বলেন, ব্রি ধান ১০০ মুজিবশতবর্ষে ব্রির শততম জাত হিসেবে অবমুক্ত হওয়ায় একটি বিশেষত্ব পাবে। এ জাত উচ্চমাত্রার জিংকসমৃদ্ধ। ফলন ব্রি ধান ২৯ থেকে বেশি এবং জীবনকাল ব্রি ধান ২৮ এর মত, যা আমাদের দীর্ঘদিনের আকাক্সক্ষার প্রতিফলন। আমাদের পরিকল্পনা অতিদ্রুত এ জাতটি কৃষকের কাছে জনপ্রিয় করে একদিকে উৎপাদন বৃদ্ধি ও অন্যদিকে পুষ্টির যোগান দেয়া সম্ভব হবে।
জানা গেছে, এখন ব্রি বিজ্ঞানীরা বীজ উৎপাদন শুরু করবেন। বাণিজ্যিকভাবে এ জাত বাজারজাত করা হবে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন-বিএডিসির মাধ্যমে। এটি নিয়ে ব্রি উদ্ভাবিত জিংক সমৃদ্ধ জাতের সংখ্যা এখন ৬টি। এর আগে ব্রি-৬২, ব্রি-৬৪, ব্রি-৭২, ব্রি-৭৪, ব্রি-৮৪ জিঙ্কসমৃদ্ধ নতুন জাত উদ্ভাবন করেছেন। তবে নতুন ব্রি-১০০ জাতের ধানের চাল হবে আরও চিকন, ভাত হবে ঝরঝরে। ব্রির বিজ্ঞানীরা বলছেন, অন্যান্য ধানের তুলনায় এই ধানের ফলন যেমন বেশি, তেমনিভাবে জিঙ্কের পরিমাণও থাকছে বেশি। উৎপাদনশীলতা পাশাপাশি জিঙ্ক-আয়রন সমৃদ্ধ ধানের উৎপাদন বাড়িয়ে ভাতের পুষ্টি গুণাগুণ বাড়াতে ব্রির ১৪ বছরের চলমান গবেষণার সর্বশেষ সাফল্য এটি। উদ্ভিদ বিজ্ঞানীরা বলছেন, পুষ্টিসমৃদ্ধ এই বোরো ধান থেকে অল্প দিনেই ফলন পাওয়া সম্ভব; যা আগামী বর্ষার আগেই ঘরে তুলতে পারবেন কৃষকরা।
বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক ড. শাজাহান কবীর জনকণ্ঠকে আরো বলেন, মুজিবশতবর্ষে এটি আনতে পেরে আরও বেশি আনন্দ এ কারণে ১৯৭০ সালের ১ অক্টোবর ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠিত হলেও জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭৩ সালে আইন পাসের মাধ্যমে ব্রিকে জাতীয়করণ ও প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেন এবং শুরু হয় ধানের ওপর নিয়মতান্ত্রিক গবেষণা। পাশাপাশি তিনি দেশের খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধিতে সবুজ বিপ্লবের ডাক দেন। তার ডাকে সাড়া দিয়ে ব্রির বিজ্ঞানীরা উদ্ভাবন করেন বিআর ৩ বা বিপ্লব, যা দেশের খাদ্য উৎপাদনে একটি সত্যিকারের বিপ্লব নিয়ে আসে। বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় আমাদের কৃষিমন্ত্রী মহোদয়ের সরাসরি দিকনির্দেশনা মোতাবেক এগিয়ে যাচ্ছে ব্রি। যার অংশ হিসেবে ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যা, ক্রমহ্রাসমান কৃষিজমি ও প্রাকৃতিক সম্পদ এবং জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাতের ফলে সৃষ্ট নানাবিধ বৈরী পরিবেশ মোকাবিলা করেও ধান উৎপাদনে বাংলাদেশ এখন বিশ্বে তৃতীয় অবস্থানে উঠে এসেছে। এখনো ভাত আমাদের প্রধান খাদ্য। দেশের দরিদ্র জনগোষ্ঠীর পুষ্টির অধিকাংশ ক্যালরি, প্রোটিন ও মিনারেল আসে ভাত থেকে। তাই ভাতের মাধ্যমে কিভাবে পুষ্টি উপাদান সরবরাহ করা যায় সেইলক্ষ্যে কাজ করছেন বাংলাদেশের ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের বিজ্ঞানীরা।