ডেস্ক নিউজ
মূল্যবান খনিজ আহরণে এবার নড়েচড়ে বসেছে পেট্রোবাংলা। কয়লা, চুনাপাথর, লোহা ও গ্রানাইটের মজুত বিষয়ে শিগগিরই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে একটি প্রেজেন্টেশন দিতে যাচ্ছে জ্বালানি বিভাগ।
সম্প্রতি জ্বালানি বিভাগের এক বৈঠকে কয়লা, চুনাপাথর, লোহা ও গ্রানাইটের সম্ভাব্য মজুত, খনির উন্নয়ন, সম্ভাব্য ব্যয় নিয়ে একটি প্রেজেন্টেশন তৈরি করতে বলা হয়েছে। পরে যা প্রধানমন্ত্রীর কাছে উপস্থাপন করা হবে।
খনিজ উন্নয়নে একটি দীর্ঘমেয়াদি কর্মপরিকল্পনার আওতায় এটি করা হচ্ছে বলে জ্বালানি বিভাগের এক পদস্থ কর্মকর্তা নিশ্চিত করেছেন।
ওই কর্মকর্তা বলেন, যে পরিমাণ মজুত আছে তাতে আমাদের দ্বিতীয় প্রধান জ্বালানি হওয়ার কথা কয়লা। কিন্তু সে জায়গাটি দখলে নিয়েছে আমদানিনির্ভর তেল। আমরা দেড়যুগেও কয়লা তোলার বিষয়ে সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারিনি। আদৌ তোলা হবে কিনা, হলেও কোন প্রক্রিয়ায় হবে তা নির্ধারণ করা সম্ভব হয়নি। এখন আন্তর্জাতিক বাজারে কয়লার আকাশছোঁয়া দামের কারণে সরকার নিজস্ব কয়লা তোলার বিষয়ে আগ্রহ দেখাচ্ছে।
দেশে এখন কয়লার সম্ভাব্য যে মজুত দেখানো হয়েছে তা দিয়ে যদি প্রতিদিন ১০ হাজার মেগাওয়াট করেও বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয়, তবে টানা ৫০ বছর উৎপাদন করা সম্ভব হবে। কিন্তু এখন পর্যন্ত আবিষ্কৃত পাঁচটি খনির মাত্র একটি থেকে কয়লা তোলা হচ্ছে। তা দিয়ে প্রতিদিন ২৫০ থেকে ৩০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে।
অন্যদিকে, দেশে বিপুল পরিমাণ চুনাপাথরের মজুত আছে। সিমেন্ট তৈরির প্রধান এই কাঁচামালের পুরোটা এখনও আমদানি করা হচ্ছে। বিশ্ববাজার টালমাটাল হওয়ায় দেশে সিমেন্টের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব হচ্ছে না। সম্প্রতি ভুটান থেকে ক্লিংকার আমদানিতে সব ধরনের কর প্রত্যাহার করার পরও এক ব্যাগ সিমেন্টের দাম ১০০ টাকার মতো বেড়েছে। যার প্রভাব পড়ছে নির্মাণশিল্পে। নির্মাণ ব্যয় বাড়ার কারণে সরকারি প্রকল্পও পড়েছে আর্থিক ঝুঁকিতে।
২০১২ সালের দিকে জয়পুরহাটে চুনাপাথরের খনি আবিষ্কারের ঘোষণা দেয় বাংলাদেশ ভূতাত্ত্বিক জরিপ অধিদফতর-জিএসবি। প্রতিষ্ঠানটি ওই সময় জানায়, ভূ-পৃষ্ঠের প্রায় ৫০০ মিটার নিচে চুনাপাথরের একটি স্তর পাওয়া গেছে। ধারণা করা হচ্ছে, প্রায় ১০০ ফুট পুরু স্তরটি ১০০ বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে আছে। খনিটির বাণিজ্যিক উপযোগিতা নিশ্চিত হলে খুলে যাবে বিরাট সম্ভাবনার দুয়ার।
দেশের স্টিল মিলগুলোর প্রধান কাঁচামাল আসে জাহাজভাঙা শিল্প থেকে। পরিবেশের জন্য মারাত্মক হুমকির কারণ এই শিল্প নিয়ে নেতিবাচক প্রচারণাই বেশি। তবে লোহার চাহিদা পূরণে দেশের সামনে বিকল্পও নেই।
ভারতে খনি থেকে লোহা উত্তোলন করা হলেও বাংলাদেশে লোহা উত্তোলনের ধারণা এর আগে করা হয়নি।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এই ধারণা বদলে দিয়েছে জিএসবি। প্রতিষ্ঠানটি ২০১৩ সালের দিকে দিনাজপুরের হাকিমপুরের মুর্শিদপুর গ্রামে অনুসন্ধান চালায়। তারই ধারাবাহিকতায় আলিহাটে দ্বিতীয় দফায় অনুসন্ধান করে লোহার আকরিক সমৃদ্ধ শিলার মজুত পাওয়া যায়। আলিহাটের ৪২৬ থেকে ৫৪৮ মিটার গভীরে আছে ওই শিলা-স্তর। যার গড় পুরুত্ব ৬৮ মিটার। প্রাথমিক হিসাবে মজুতের পরিমাণ প্রায় ৬২৫ মিলিয়ন টন বলে ধারণা করা হচ্ছে। সম্প্রতি এ নিয়ে প্রাথমিক সমীক্ষার জন্য একটি কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি করেছে পেট্রোবাংলা।
মধ্যপাড়া দেশের একমাত্র গ্রানাইট বা কঠিন শিলার খনি। তবে এখান থেকে যে পাথর তোলা হয় তা দেশের চাহিদা মেটাতে পারে না। সরকার ভাবছে, মধ্যপাড়ার মতো একই ভূ-গঠনের অন্য কোথাও পাথরের খনি থাকতে পারে। এতেও অনুসন্ধানে জোর দেওয়ার চিন্তা চলছে।