ডেস্ক নিউজ
মোংলা বন্দরে গত ২০২০-২১ অর্থবছরে ৯৭০টি বাণিজ্যিক জাহাজ আগমনের রেকর্ড তৈরি হয়েছে, যা বন্দর সৃষ্টির ৭০ বছরের ইতিহাসে সর্বোচ্চ। ফলে বন্দরের ইতিহাসে আয়ও হয়েছে সর্বোচ্চ।
দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল তথা দেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক উন্নয়নে এ বন্দর ভূমিকা রেখে চলেছে। ১৯৫০ সালে ব্রিটিশ বাণিজ্যিক জাহাজ ‘দি সিটি অফ লয়েন্স’-এর সুন্দরবনের পশুর নদীর জয়মনিরগোল নামক স্থানে নোঙর করার মধ্য দিয়ে শুভ সূচনা হয় এ বন্দর প্রতিষ্ঠার।
২০১৭ সালের ডিসেম্বর মাসে বন্দরে ৮৭টি বাণিজ্যিক জাহাজ আগমন করে। ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে আসে ১০০টি জাহাজ আগমন করেছিল। ২০২০ সালের ডিসেম্বর মাসে ১১৭টি জাহাজ আগমনের রেকর্ড সৃষ্টি করে।
এছাড়া অর্থবছর বিবেচনায় সর্বশেষ ৫ অর্থবছরের পরিসংখ্যান অনুযায়ী বাণিজ্যিক জাহাজের আগমন ঘটে ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ৬২৩টি, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ৭৮৪টি, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ৯১২টি, ২০১৯-২০ অর্থবছরে ৯০৩টি এবং সর্বশেষ ২০২০-২১ অর্থবছরে ৯৭০টি। এর বিপরীতে ২০১৬-১৭ অর্থবছরে বন্দরের আয় হয় ২২ হাজার ৬৫৬.০৫ কোটি টাকা, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ২৭ হাজার ৬১৪.৪৯ কোটি টাকা, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ৩২ হাজার ৯১২.১৩ কোটি টাকা, ২০১৯-২০ অর্থবছরে ৩৩ হাজার ৮১৯.০৭ কোটি টাকা এবং ২০২০-২১ অর্থবছরে এ বন্দরের আয় হয় ৩৪ হাজার ২৩.১২ কোটি টাকা।
এছাড়া ২০২০-২০২১ অর্থবছরে এ বন্দরে ১৪ হাজার ৪৭৪টি গাড়ি অবতরণ করে এবং ৪৩ হাজার ৯৫৯টি ইইউজ কন্টেইনার জাহাজে খালাস-বোঝাই হয়।
অনেক চড়াই-উতরাই পেরিয়ে আসা মোংলা বন্দর বর্তমানে দেশের অন্যতম আকর্ষণ। দ্বিতীয় সমুদ্র বন্দর হিসেবে দেশের দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল তথা বাংলাদেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক উন্নয়নে এ বন্দর ব্যাপক ভ‚মিকা রেখে চলেছে। ২০০১ থেকে ২০০৮ অর্থবছর পর্যন্ত এ বন্দর নানামুখী প্রতিক‚লতার কারণে লোকসানি প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছিল।
বিগত ২০০৭-২০০৮ অর্থবছরের ফেব্রুয়ারি মাসে ৭টি এবং সম্পূর্ণ অর্থবছরে ৯৫টি জাহাজ আগমন করে। এর আগে ২০০৪-২০০৫ অর্থবছরেও বন্দর ১১ কোটি টাকা লোকসান করে। ফলে মোংলা বন্দর লোকসানি প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব গ্রহণ করার পর থেকে মোংলা বন্দর উন্নয়নে সরকার অগ্রাধিকার ও বিশেষ গুরত্ব প্রদান করে। এ বন্দর উন্নয়ন ও আধুনিকায়নে কাজ শুরু করে। ফলে ক্রমান্বয়ে মোংলাবন্দর গতিশীল হতে থাকে, যার কারণে প্রতি বছর বিদেশি জাহাজ আগমনের রেকর্ড সৃষ্টি হচ্ছে।
মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিরাল মোহাম্মদ মুসা, ওএসপি, এনপিপি, আরসিডিএস, এএফডব্লিউসি, পিএসসি জানান, ‘২০০৩-২০১০ সাল পর্যন্ত এ বন্দর একটি ডেডবন্দর ছিল। কারণ তখন নাব্য ছিল না। তাই কোনো জাহাজ আসত না । যার ফলে মোংলা বন্দরের কোনো অর্জন ছিল না। বর্তমানে আমাদের হাতে অনেক প্রজেক্ট আছে, যার ৯৫ ভাগ কাজ সম্পন্ন হয়েছে।
চলতি অর্থবছরে মোংলা বন্দর ৯৭০টি জাহাজ আগমনের রেকর্ড সৃষ্টি করেছে। এই কোভিড পরিস্থিতেও আমরা বন্দরের কার্যক্রম ২৪ ঘণ্টা চালিয়ে যাচ্ছি যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি নিয়ম মেনে। মোংলা বন্দরে জাহাজ আগমনের এ রেকর্ড নির্দিষ্ট অর্থবছর শেষ হওয়ার অর্জিত হয়েছে। বন্দরের এ সাফল্য অর্জন করা সম্ভব হয়েছে শুধুমাত্র বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারের দূরদর্শিতা ও সুদূরপ্রসারী উন্নয়ন পরিকল্পনা, নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সঠিক দিকনির্দেশনা, দক্ষ বন্দর ব্যবস্থাপনা, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আন্তরিক চেষ্টা ও বন্দর ব্যবহারকারীদেরসহ বন্দর সংশ্লিষ্ট সবার প্রচেষ্টার ফলে।