যুক্তরাষ্ট্রের পরবর্তী প্রেসিডেন্ট হতে যাচ্ছেন জো বাইডেন। গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গরাজ্য পেনসিলভানিয়ায় জো বাইডেনের জয় নিশ্চিত হওয়ার পর বাইডেনের ইলেকটোরাল ভোটের সংখ্যা ২৭৩-এ দাঁড়িয়েছে। ফলে যুক্তরাষ্ট্রের ৪৬তম প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন হচ্ছেন। এর মাধ্যমে তাঁর রানিংমেট কমলা হ্যারিস হতে যাচ্ছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ ও নারী ভাইস প্রেসিডেন্ট।
সিএনএন জানায়, পেনসিলভানিয়ার ২০টি ইলেকটোরাল ভোট নিশ্চিত হওয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের ৪৬তম প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন হচ্ছেন। এখন পর্যন্ত পাওয়া ফলে বাইডেন প্রয়োজনীয় ২৭০ ইলেকটোরাল ভোট অতিক্রম করেছেন। তাঁর ঝুলিতে এখন ২৭৩ ইলেকটোরাল ভোট।
নির্বাচিত হওয়ার খবর নিশ্চিত হওয়ার পর এক টুইট বার্তায় কমলা হ্যারিস বলেন, ‘এই নির্বাচন আমার বা জো বাইডেনের চেয়ে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ ছিল। এটি যুক্তরাষ্ট্রের আত্মা ও আমাদের লড়াইয়ের আকাঙ্ক্ষার সঙ্গে সম্পর্কিত। আমাদের সামনে অনেক কাজ পড়ে আছে। চলুন আমরা শুরু করি।’
এবারের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডেমোক্রেটিক দলের মনোনীত প্রার্থী হওয়ার আগে সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা প্রশাসনের ভাইস প্রেসিডেন্ট ছিলেন জো বাইডেন। ডেলাওয়্যার অঙ্গরাজ্যের সিনেটর হিসেবে সবচেয়ে লম্বা সময় দায়িত্ব পালন করেছেন ৭৭ বছর বয়সী এই ডেমোক্র্যাট।
বাইডেনের জয় নিশ্চিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আরেকটি ইতিহাস রচিত হওয়াও নিশ্চিত হয়ে গেছে। আর তা হলো কমলা হ্যারিস। যুক্তরাষ্ট্রের কোনো প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে এবারই প্রথম বড় কোনো দল থেকে কোনো কৃষ্ণাঙ্গ নারী ভাইস প্রেসিডেন্ট পদে মনোনয়ন পেয়েছিলেন। ফলে এখন বাইডেনের জয় নিশ্চিতের মধ্য দিয়ে কমলাই হতে যাচ্ছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ নারী ভাইস প্রেসিডেন্ট। কমলাই প্রথম ভারতীয় মার্কিন, যিনি মার্কিন রাজনীতিতে এত উচ্চ পদে যাচ্ছেন। ক্যালিফোর্নিয়ার একেবারে তৃণমূল পর্যায় থেকে উঠে এসেছেন তিনি। ডিস্ট্রিক্ট অ্যাটর্নি, স্টেট অ্যাটর্নি জেনারেল ও সিনেটর হিসেবে একাধিকবার দায়িত্ব পালন করেছেন।
এবারের নির্বাচনে শুরুতে ডেমোক্রেটিক দল থেকে প্রেসিডেন্ট পদে মনোনয়ন চেয়েছিলেন। পরে গত বছরের ৩ ডিসেম্বর তিনি সরে দাঁড়ান। কারণ ছিল নির্বাচনী তহবিল জোগাড়ে ব্যর্থতা। দলের মধ্যে বিদ্যমান মেরুকরণও একটি বড় কারণ ছিল। পরে গত জুলাইয়ে দলীয় কনভেনশনের পর দলটির মনোনীত প্রেসিডেন্ট প্রার্থী কমলা হ্যারিসকে রানিংমেট হিসেবে মনোনীত করলে আবারও আলোচনার কেন্দ্রে আসেন এই স্পষ্টভাষী রাজনীতিক। রাজনৈতিকভাবে মধ্যপন্থী হওয়ায় দলের বাম ও ডানপন্থী অংশের মধ্যে সংযোগ সেতু হিসেবে কাজ করার লক্ষ্যেই তাঁকে মনোনয়ন দেন বাইডেন। সে কাজটি কমলা বেশ দারুণভাবেই করেছেন। তাঁর ভাইস প্রেসিডেন্ট মনোনয়ন পাওয়ার পর বাইডেনের নির্বাচনী প্রচার তহবিলে বড় অঙ্কের অর্থ জমা হতে থাকে। এবারের নির্বাচনী প্রচারের মাঠে বাইডেনকে অনেকটাই এগিয়ে রেখেছিল তাঁর সংগৃহীত নির্বাচনী তহবিল, যার সঙ্গে কোনোভাবেই পেরে উঠছিলেন না বর্তমান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
কমলা হ্যারিসের জন্ম ক্যালিফোর্নিয়ায়, বয়স ৫৪। বাবা জ্যামাইকা ও মা ভারতের তামিলনাড়ু থেকে আসা অভিবাসী। তাঁরা দুজনই বিজ্ঞানী, যাঁর যাঁর ক্ষেত্রে কৃতবিদ্য। মিশ্র বংশীয় কমলা হ্যারিস মার্কিন সিনেটের কনিষ্ঠ সদস্য। কমলার মা শ্যামলা গোপালন দিল্লি ইউনিভার্সিটিতে পড়াশোনা শেষে উচ্চতর শিক্ষা নিতেই এসেছিলেন যুক্তরাষ্ট্রে। ইউনিভার্সিটি অব ইলিনয়ে ব্রেস্ট ক্যানসার গবেষক হিসেবে যোগ দেন। একজন ক্যানসার গবেষক হিসেবেই তাঁকে চেনেন সবাই। বাবা অধ্যাপক ডোনাল্ড হ্যারিস ও মা শ্যামলার বিচ্ছেদ হলে মা ছিলেন মূলত কমলার ছায়াসঙ্গী।
যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে কমলার আগে মাত্র দুজন নারী ভাইস প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী হয়েছিলেন। এঁদের মধ্যে ২০০৮ সালে রিপাবলিকান পার্টি থেকে সারাহ পলিন ও ১৯৮৪ সালে ডেমোক্রেটিক দল থেকে জেরালডিন ফেরারো।