ডেস্ক নিউজ
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আমেরিকার মতো দেশ সব সময় ন্যায়বিচার এবং গণতন্ত্রের কথা বলে, ভোটাধিকারের কথা বলে, মানবাধিকারের কথা বলে। কিন্তু সেই দেশ বঙ্গবন্ধুর খুনিদের আশ্রয় দিয়ে বসে আছে।
প্রধানমন্ত্রী গতকাল মঙ্গলবার বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট প্রকাশিত বঙ্গবন্ধু ও বিচার বিভাগ ও বঙ্গবন্ধু অ্যান্ড জুডিশিয়ারি শীর্ষক বাংলা ও ইংরেজিতে মুজিব স্মারকগ্রন্থ এবং ন্যায়কণ্ঠ শীর্ষক মুজিব বর্ষের স্মরণিকার মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে এ কথা বলেন। তিনি গণভবন থেকে সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণের মূল অনুষ্ঠানে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ভার্চ্যুয়ালি অংশগ্রহণ করেন।
প্রধানমন্ত্রী সবার প্রতি সুবিচার নিশ্চিত করতে বিচারকদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, তাঁর সরকার এ ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় সব সুবিধা নিশ্চিত করবে। তিনি বলেন, ‘ন্যায়বিচার মানুষের প্রাপ্য। সেটা যেন সব সময় পায়, সেটা আমরা চাই। কারণ, আমরা ভুক্তভোগী। তাই আমরা জানি বিচার না পাওয়ার কষ্টটা কী।’
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের খুনিদের বিভিন্ন দেশে পলাতক থাকা প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এখনো কয়েকজন খুনি পালিয়ে আছেন, তাঁদের খোঁজা হচ্ছে। শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমেরিকার মতো দেশ সব সময় ন্যায়বিচার এবং গণতন্ত্রের কথা বলে, ভোটাধিকারের কথা বলে, মানবাধিকারের কথা বলে। কিন্তু আমাদের যে মানবাধিকার লঙ্ঘিত হয়েছিল, আমরা যে ন্যায়বিচার পাইনি—তারপর যখন বিচার হলো, সেই খুনিদের আশ্রয় দিয়ে বসে আছে।’ তিনি সরকারে আসার পর যুক্তরাষ্ট্রে যে কজন প্রেসিডেন্ট ক্ষমতায় এসেছেন, তাঁদের কাছে খুনিদের ফেরত পাঠানোর বিষয়ে কথা বলেছেন, অনুরোধ করেছেন উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি বারবার বলেছি, একজন সাজাপ্রাপ্ত আসামিকে আপনারা কীভাবে আশ্রয় দেন। আপনাদের জুডিশিয়ারি কীভাবে একজন খুনিকে আশ্রয় দেয়?’
বঙ্গবন্ধুর খুনি রাশেদ আমেরিকায় এবং মেজর নূর কানাডায় আশ্রয় নিয়ে আছেন বলেও উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী।
বঙ্গবন্ধু হত্যার রায় কার্যকর হওয়ায় বিচার বিভাগ, দল ও দেশবাসীর প্রতিও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, তবে এখন আরেকটা দায়িত্ব রয়ে গেছে। চক্রান্তটা খুঁজে বের করা। এটা একদিন বের হবে। এতে কোনো সন্দেহ নেই।
প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন, আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন। আপিল বিভাগের বিচারপতি এবং স্মারকগ্রন্থ ও স্মরণিকার সম্পাদক মো. নুরুজ্জামান স্বাগত বক্তৃতা করেন। মুজিব স্মারকগ্রন্থ এবং স্মরণিকার ওপর অনুষ্ঠানে ভিডিও ডকুমেন্টারিও প্রচারিত হয়।
এর আগে অনুষ্ঠানের শুরুতে জাতির পিতা ও বঙ্গমাতাসহ ’৭৫–এর ১৫ আগস্টের সব শহীদ এবং বিজয়ের এই মাসে সব মুক্তিযোদ্ধার স্মরণে সবাই দাঁড়িয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করেন।
প্রধানমন্ত্রী তাঁর বক্তৃতায় জনসাধারণের জন্য বিচারের রায় বাংলায় লেখার ওপর পুনরায় গুরুত্বারোপ করেন। তিনি ইংরেজিতে লেখা বিচারের রায় আসামিরা কতটুকু বোঝে, তা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেন এবং ইংরেজিতে রায় লেখার সঙ্গে সঙ্গে এটার বাংলায় অনুবাদটা যাতে হয়, সেদিকে লক্ষ রাখার আহ্বান জানান। এ জন্য আলাদাভাবে অনুবাদক নিয়োগ এবং তাঁদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার ওপরও তিনি গুরুত্বারোপ করেন। আইন কমিশনের বের করা শব্দকোষ এ ক্ষেত্রে সহায়ক ভূমিকা পালন করতে পারে বলেও তিনি অভিমত দেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ’৯৬ সালে তিনি প্রথম সরকার গঠনের পরই কেবল এ দেশে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা সেনাছাউনি থেকে জনগণের হাতে ফিরিয়ে দেওয়ার কাজটা করতে পেরেছেন। পাশাপাশি বিচার বিভাগের অধিকারের জন্য, বিচার বিভাগের উন্নয়নের জন্য এবং দেশের মানুষের উন্নয়নে জন্য অনেক কাজ করেছেন বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বিচার বিভাগের অধিকারের জন্য, বিচার বিভাগের উন্নয়নের জন্য বা দেশের মানুষের জন্য কী করেছি, সেটা আর আমি এত বেশি বলতে চাই না। তবে আমি এইটুকু বলব, যেহেতু আমার বাবা চাইতেন স্বাধীন বিচারব্যবস্থা, আমরা সরকারে এসে সেই স্বাধীন বিচারব্যবস্থা নিশ্চিত করেছি।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা কখনো বিচারকাজে হস্তক্ষেপ করিনি, এর আগে অনেক ঘটনা আছে আপনারা জানেন। দেখা গেছে ফলস সার্টিফিকেটের ব্যবহার বা ছাত্রদলের কাঁধে হাত রেখে কাকে কী রায় দেওয়া হবে, সেটা নিয়ে আলোচনা—এ রকম বহু ন্যক্কারজনক ঘটনাও বাংলাদেশে ঘটেছে।’