ডেস্ক নিউজ
চলতি অর্থবছরে রফতানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৫ হাজার ১০০ কোটি মার্কিন ডলার। এই লক্ষ্যমাত্রা সদ্য বিদায়ী ২০২০-২১ অর্থবছরের চেয়ে ৩০০ কোটি ডলার বেশি। মহামারী করোনার আঘাত মোকাবেলা করেই রফতানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। সচিবালয়ে ই-কমার্স সংক্রান্ত আরেকটি অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ই-কমার্সের নামে এমএলএম (মাল্টিলেভেল মার্কেটিং কোম্পানি) ব্যবসা করলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।
মঙ্গলবার বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি রফতানি খাতের ব্যবসায়ী প্রতিনিধিদের সঙ্গে নিয়ে এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে রফতানি আয়ের এই লক্ষ্যমাত্রা ঘোষণা করেন। ওই সময় তিনি বলেন, মোট লক্ষ্যমাত্রার মধ্যে পণ্য খাতের জন্য ধরা হয়েছে ৪ হাজার ৩৫০ কোটি ডলার, আর সেবা রফতানিতে ৭৫০ কোটি ডলার। চলতি অর্থবছরের বাজেটে ‘মেইড ইন বাংলাদেশ’ নাম দিয়ে গুরুত্বপূর্ণ শিল্পগুলোতে বিশেষ নীতি সহায়তা দেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। রফতানি বাড়াতে প্রণোদনা প্যাকেজেও বিশেষ কর্মসূচী বাস্তবায়ন করছে সরকারী বেসরকারীখাতে। এছাড়া পণ্যের বৈচিত্র্যকরণে ও সরকারী বিভিন্ন উদ্যোগ বিবেচনায় নিয়ে এই লক্ষ্যমাত্র ঠিক করা হয়েছে। ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে ঘোষিত ৫ হাজার ১০০ কোটি মার্কিন ডলার রফতানির লক্ষ্যমাত্রাকে স্বাগত জানিয়ে বক্তব্য রাখেন বিকেএমইএর সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ হাতেম, বিজিএমই এর সাবেক প্রেসিডেন্ট এবং বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এর শিল্প ও বাণিজ্য বিষয়ক সম্পাদক মোঃ সিদ্দিকুর রহমান, লেদার এ্যান্ড ফুটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স এ্যান্ড এক্সপোর্টার্স এ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট মোঃ সাইফুল ইসলাম এবং বাংলাদেশ ট্যানার্স এ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট শাহীন আহমেদ। অনুষ্ঠানে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব তপন কান্তি ঘোষ এবং রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর ভাইস চেয়ারম্যান এ এইচ এম আহসান বক্তব্য রাখেন।
বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেন, করোনা মহামারী চলমান থাকলেও রফতানিমুখী খাতগুলো যেভাবে কাজ করে যাচ্ছে, তাতে এই লক্ষ্যমাত্রা খুবই বাস্তবসম্মত এবং অর্জন করার মতো। কারণ, চলতি অর্থবছরের বাজেটে ‘মেড ইন বাংলাদেশ’ নাম দিয়ে গুরুত্বপূর্ণ শিল্পে বিশেষ নীতি সহায়তা দেয়ার ঘোষণা আছে। এ ছাড়া রফতানি পণ্যের বৈচিত্র্যকরণে সরকার উদ্যোগী হয়েছে। উল্লেখ্য, গত বছরে রফতানির লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। এর মধ্যে পণ্য রফতানির লক্ষ্য ছিল ৪১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার এবং সেবা খাতের রফতানির লক্ষ্য ছিল ৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। অর্জিত হয়েছে পণ্যখাতে ৩৮ দশমিক ৭৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার এবং সেবা খাতে ৬ দশমিক ৬৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। লক্ষ্যমাত্রার ৯৪ দশমিক ৫৬ ভাগ অর্জিত হয়েছে।
ইপিবি সোমবার পরিসংখ্যান প্রকাশ করে জানিয়েছে, সদ্য বিদায়ী ২০২০-২০২১ অর্থবছরে ৩ হাজার ৮৭৫ কোটি ৮৩ লাখ ডলারের পণ্য রফতানি করেছে বাংলাদেশ। যদিও তা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে সাড়ে ৫ শতাংশ কম। তবে আগের ২০১৯-২০ অর্থবছরের রফতানি আয়ের চেয়ে ১৫ দশমিক ১০ শতাংশ বেশি। ২০১৯-২০ অর্থবছরে ৩ হাজার ৩৬৭ কোটি ডলারের পণ্য রফতানি হয়েছিল। টিপু মুনশি বলেন, করোনার এই সময়ে এ সময় লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে উদ্যোক্তাদের সব ধরনের সহযোগিতা দেয়া হবে। চলমান মহামারীর মধ্যেও রফতানিমুখী খাতগুলো যেভাবে সাহসিকতার সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছে এই লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করার মতো। রফতানির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবার আন্তরিক সহযোগিতা কামনা করে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, বিশ্ব করোনা পরিস্থিতিতেও বাংলাদেশের রফতানি খাত সচল রয়েছে এবং রফতানি খাত ঘুরে দাঁড়িয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশেষ উদ্যোগে রফতানি খাতের প্রণোদনা দেয়াসহ প্রয়োজনীয় সবধরনের সহযোগিতা অব্যাহত রাখা হয়েছে।
ই-কমার্সের আওতায় এমএলএম ব্যবসা করা যাবে না ॥ সচিবালয়ে ‘ডিজিটাল কমার্স পরিচালনা নির্দেশিকা-২০২১’ জারির বিষয়ে অবহিতকরণ সংক্রান্ত এক সভায় অংশগ্রহণ করে বাণিজ্যমন্ত্রী হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছেন, ই-কমার্স এবং ডিজিটাল ব্যবসার আওতায় দেশের কেউ এমএলএম ব্যবসা-বাণিজ্য করতে পারবে না। টিপু মুনশি বলেন, ডিজিটাল ব্যবসায় সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য ‘ডিজিটাল কমার্স পরিচালনা নির্দেশিকা ২০২১’ প্রণয়ন করা হয়েছে। গত ৪ জুলাই তা সরকারের গেজেট আকারে প্রকাশিত হয়েছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, সরকারী ও বেসরকারী সংস্থা ও অংশীজনদের মতামতের ভিত্তিতে এ ডিজিটাল কমার্স পরিচালনা নির্দেশিকা তৈরি করা হয়েছে।