ডেস্ক নিউজ
করোনার ধাক্কা সামলে তৈরি পোশাক খাত ঘুরে দাঁড়াচ্ছে। ফলে আশার আলো দেখাচ্ছে দেশের রফতানি আয়। সদ্য সমাপ্ত ডিসেম্বর মাসে পণ্য রফতানি করে ৪৯০ কোটি মার্কিন ডলার আয় করেছে বাংলাদেশ। এর আগে একক কোনো মাসে এত বেশি রফতানি আয় হয়নি।
রোববার (২ জানুয়ারি) রফতানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) প্রকাশিত পরিসংখ্যান থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
ইপিবির তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর) পণ্য রফতানি করে আয় হয়েছে দুই হাজার ৪৭০ কোটি ডলার, যা গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ৫৪৭ কোটি ডলার বা ২৮ দশমিক ৪১ শতাংশ বেশি।
ইপিবির পরিসংখ্যান আরও বলছে, দেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ খাত তৈরি পোশাক, বিশেষত, নিটওয়্যার পণ্য রফতানি বেড়েছে। এছাড়া চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য, কৃষি, প্লাস্টিক পণ্য রফতানি ইতিবাচক ধারায় ফেরার কারণে সার্বিকভাবে পণ্য রফতানিতে ইতিবাচক প্রবৃদ্ধি হয়েছে।
সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী, ২০২০ সালের ডিসেম্বর মাসের রফতানির তুলনায় ২০২১ সালের ডিসেম্বর মাসে পোশাক রফতানি ৫২.৫৭ শতাংশ বেড়েছে। তবে ২০১৯ এর ডিসেম্বরের তুলনায় প্রবৃদ্ধির পরিমাণ হয়েছে ৩৮ শতাংশ। ২০২১ এর ডিসেম্বর মাসে ৪০৪ কোটি ডলার সমমূল্যের পোশাক রফতানি হয়েছে। ২০২১-২২ অর্থবছরের ছয় মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর ২০২১) পোশাক রফতানির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে এক হাজার ৯৯০ কোটি ডলার, যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ২৮.০২ শতাংশ বেশি।
পণ্যের ক্যাটাগরি অনুযায়ী, ডিসেম্বর মাসে নিটওয়্যার পণ্য রফতানিতে ৫৬.৫৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে। অন্যদিকে ওভেন পোশাকের রফতানি ৪৮.১৭ শতাংশ বেড়েছে। ফলে সব পণ্যের রফতানিতে ইতিবাচক ধারা লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
রফতানি উপাত্ত অনুযায়ী পোশাক খাতের রফতানির ইতিবাচক ধারা লক্ষ্য করা গেলেও সামনে অনেক চ্যালেঞ্জ রয়েছে বলে মনে করেন তৈরি পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর পরিচালক মহিউদ্দিন রুবেল।
তরুণ উদ্যোক্তা ‘ডেনিম এক্সপার্ট লিমিটেড’ এর পরিচালক রুবেল ঢাকা পোস্টকে বলেন, বিভিন্ন কাঁচামাল যেমন টেক্সটাইল পণ্য, জাহাজিকরণ খরচ, রং ও রাসায়নিক দ্রব্যের বাজার অনেক চড়া। কিন্তু পণ্য উৎপাদন খরচ বাড়ার অনুপাতে পোশাকের দাম সামঞ্জস্যপূর্ণভাবে বাড়ছে না। এছাড়া আমাদের পোশাক রফতানির প্রধান বাজারগুলোতে কোভিডের নতুন ভ্যারিয়েন্টের সংক্রমণ সুনামির মতো ছড়িয়ে পড়ছে। কোভিডের সংক্রমণরোধে এবং নিজেদের রক্ষার্থে দেশগুলো বিভিন্ন প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করছে। এর ফলে পোশাকের নতুন ও চলমান রফতানি আদেশের উপর প্রভাব পড়ছে।
তিনি জানান, নতুন বছর ২০২২ একটি অনিশ্চয়তার মাধ্যমে শুরু হতে যাচ্ছে। গত কয়েক মাসের উপাত্ত পর্যালোচনায় শিল্পের অগ্রযাত্রার সম্ভাবনা প্রতীয়মান। কিন্তু নিকট ভবিষ্যতের বাজারের পূর্বাভাস দেওয়া কঠিন, যেহেতু বিশ্বব্যাপী অতিমারি থেকে পুনরুদ্ধার এখনো নড়বড়ে।
ইপিবির প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে কৃষিপণ্য রফতানিতে আয় আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে প্রায় ২৫ শতাংশ বেড়ে হয়েছে ৬৫ কোটি ৪০ লাখ ডলার। প্লাস্টিক পণ্য রফতানি আয় বেড়েছে ৩৪ দশমিক ১৫ শতাংশ। ছয় মাসে এ খাতে আয় হয়েছে ৭ কোটি ১০ লাখ ডলার। আলোচিত সময়ে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রফতানি আয়েও প্রবৃদ্ধি হয়েছে। এসময় চামড়া খাত থেকে রফতানি আয় এসেছে ৫৬ কোটি ৪০ লাখ ডলার। যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে প্রায় ১১ শতাংশ এবং আগের অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ২৬ দশমিক ৪১ শতাংশ বেশি।
তবে আলোচিত সময়ে পাট ও পাটজাত পণ্য রফতানি কমেছে। ডিসেম্বর শেষে পাট ও পাটজাত পণ্য রফতারি করে বাংলাদেশ আয় করেছে ৫৯ কোটি ডলার। যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১৫ দশমিক ৪৭ শতাংশ এবং গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ১১ দশমিক ৬৮ শতাংশ কম।
ইপিবির তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের জন্য ৪ হাজার ৩৫০ কোটি ডলারের পণ্য রফতানির লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করেছে সরকার। সবশেষ তথ্যানুযায়ী, অর্থবছরের প্রথম ৬ মাসে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে রফতানি আয় ১৫ দশমিক ৫০ শতাংশ বেশি আছে। গত ২০২০-২১ অর্থবছরে পণ্য রফতানি করে ৩ হাজার ৮৭৬ কোটি ডলার আয় করেছিল বাংলাদেশ।