ডেস্ক নিউজ
চাঁদ দেখা সাপেক্ষে আগামী ২৩ এপ্রিল থেকে শুরু হতে পারে রোজা। এ সময় নিত্যপণ্যের বাজার নিয়ন্ত্রণে রাখতে কঠোর অবস্থানে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। কোনও পরিস্থিতিতেই নিত্যপণ্যের বাজার যাতে অস্থির হতে না পারে সেজন্য কৌশল নির্ধারণও করা হচ্ছে । এর জন্য আগেভাগেই বাজার মনিটরিংসহ চাহিদার সঙ্গে সমন্বয় করে পণ্যের সরবরাহ ঠিক রাখার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এর জন্য প্রয়োজন হলে আমদানি নির্ভর পণ্যগুলোর সরবরাহ ঠিক রাখার জন্য আমদানির পরিমাণ বাড়িয়ে মজুত স্বাভাবিক রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
মন্ত্রণালয়টির সূত্র বলছে, এরইমধ্যে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের উপসচিব পদমর্যদার কর্মকর্তাদের নেতৃত্বে পূর্বগঠিত বাজার মনিটরিং কমিটিগুলোকে পুনর্গঠনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত কর্মকর্তারা যারা বদলি হয়ে গেছেন তাদেরকে বাদ দিয়ে নতুন কর্মকর্তাদের অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে। ইতোমধ্যেই মনিটরিং কমিটিগুলোয় অন্তর্ভুক্ত করতে অন্য মন্ত্রণালয় ও সংস্থার কাছেও কর্মকর্তাদের নামের তালিকা চেয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে। বাজার মনিটরিং কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করতে জেলা প্রশাসনের কাছে ম্যাজিস্ট্রেট এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছে পুলিশ, র্যাব ও আনসার সদস্যদের চাওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্র আরও জানিয়েছে, ২২ মার্চ পবিত্র শবে মেরাজের পর থেকেই বাজারের মনিটরিং জোরদার করা হবে। একইসঙ্গে কোনও অসাধু ব্যবসায়ী অনৈতিক মুনাফার লোভে কোনও পণ্যের অবৈধ মজুত গড়ছে কিনা তা শনাক্ত করতে দেশের একাধিক গোয়েন্দা সংস্থাকেও মাঠে নামানো হবে বলে জানা গেছে। এসব টিম পণ্যের অবৈধ মজুতের বাইরে রোজায় প্রয়োজনীয় পণ্যগুলোর সরবরাহ ঠিক আছে কিনা তাও পর্যবেক্ষণ করবে। কোথাও অনিয়ম ধরা পড়লে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থাও নেওয়া হবে বলে জানিয়েছে সূত্রটি।
এদিকে চট্টগ্রামসহ অন্য সমুদ্র বন্দর ও স্থলবন্দরগুলো ব্যবহার করে রমজান উপলক্ষে আনা প্রয়োজনীয় পণ্যগুলো যাতে দ্রুত খালাস হয় সে বিষয়ে নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয় ও সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর কাছে সহযোগিতা চাওয়া হবে বলেও জানা গেছে। একইসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃপক্ষকে নিত্যপণ্য আমদানির এলসিগুলো দ্রুত নিষ্পত্তির জন্যও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে অনুরোধ জানানো হয়েছে।
এদিকে দেশীয় চিনি, তেল, আটা প্রস্তুতকারী কোম্পানিগুলোর সঙ্গে নিয়মিত বৈঠক করছেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর, বাংলাদেশ ট্যারিফ কমিশন, ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি)সহ সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো। এসব বৈঠকে নিত্যপণ্য সরবরাহকারী, পাইকারি, ও খুচরা ব্যবসায়ীরাও উপস্থিত থাকছেন।
এরই অংশ হিসেবে মঙ্গলবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের সঙ্গে দেশে উৎপাদন, প্রক্রিয়াজাতকরণ ও সরবরাহের সঙ্গে জড়িত বৃহৎ প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। এ সভায় জানানো হয়েছে, আসন্ন রমজানে বাজার মনিটরিংয়ের চাহিদা মেটাতে পর্যাপ্ত নিত্যপণ্যের মজুত আছে। তাই এবার কোনও ধরনের সংকট হবে না বলে সভায় জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।
এর আগেও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এ ধরনের সভা করেছে। যে সভায় বাণিজ্যমন্ত্রী, বাণিজ্য সচিবসহ দেশের বৃহৎ উৎপাদন, প্রক্রিয়াজাতকরণ ও সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর মালিক এবং তাদের প্রতিনিধিরাও উপস্থিত ছিলেন।
এসব সভায় ব্যবসায়ীরা জানান, আসন্ন রমজানে নিত্যপণ্যের চাহিদা মেটাতে পর্যাপ্ত পণ্যের মজুত আছে। এবার কোনও ধরনের সংকট হবে না। আসন্ন পবিত্র রমজান মাসে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য স্থিতিশীল রাখতে ঢাকার মৌলভীবাজারের পাইকারি ভোগ্যপণ্য ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠকের পর দেশের বৃহৎ প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে এ সভা করে বাজার ও মূল্য পরিস্থিতি পর্যালোচনা করছে সরকার।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে মৌলভীবাজার ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক গোলাম মাওলা জানিয়েছেন, দেশীয় কোম্পানিগুলো মিলগেটে সঠিক সময়ে সঠিক দামে পণ্য সরবরাহ করলে বাজারে কোনও পণ্যের সংকট হবে না, দামও বাড়বে না। তবে খুচরা বাজারের মনিটরিংয়ের অভাবে সরকারের অনেক উদ্যোগের সুফল সাধারণ মানুষ পায় না। এ বিষয়ে সরকারকে সতর্ক হতে হবে।
এ প্রসঙ্গে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি জানিয়েছেন, যে কোনও মূল্যে রমজানের সময় নিত্যপণ্যের বাজার স্থিতিশীল রাখতে সরকার সব আয়োজন করেছে। এসব আয়োজনের বাস্তবায়ন সময়ের ব্যাপার। তিনি বলেন, রমজানে কোনও পণ্যের সংকট হবে না। সব ধরনের নিত্যপণ্যের সরবরাহ ও মজুত সন্তোষজনক রয়েছে বলেও জানিয়েছেন টিপু মুনশি।
রমজানে বাজার স্থিতিশীল রাখতে নিয়মিত মনিটরিং হবে। মোবাইল কোর্ট চলবে। আইন শৃঙ্খলা বাহিনীও বাজারের দিকে নজর রাখবে।