ডেস্ক নিউজ
বাংলাদেশ রেলওয়ের আধুনিকায়নে আমূল পরিবর্তন আনা হচ্ছে জনবল কাঠামোতে। বিদ্যমান ৮২ হাজার ৮৯২টি পদ হতে ১০২টি ক্যাডার পদসহ মোট ৪০ হাজার ৭২৮টি পদ বিলুপ্ত করা হচ্ছে। পাশাপাশি সৃজন করা হচ্ছে ১৯৫টি ক্যাডার পদসহ ৫ হাজার ৪৭৩ নতুন পদ। ফলে পুরনো-নতুন মিলে বাংলাদেশ রেলওয়ের মোট ৪৭ হাজার ৬৩৪ জনবলের সাংগঠনিক কাঠামোর অনুমোদন দিয়েছে প্রশাসনিক উন্নয়ন সংক্রান্ত সচিব কমিটি। গত ৮ জুলাই অনুষ্ঠিত সচিব কমিটির বৈঠকে এ অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। তবে ক্যাডার পদ স্থায়ীভাবে সৃজন ও পদ বিলুপ্তির ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট কম্পোজিশন অ্যান্ড ক্যাডার রুল এবং প্রয়োজনে নিয়োগবিধিতে সংশোধনী আনার পরামর্শ দিয়েছে সচিব কমিটি। এ ছাড়া বিলুপ্তির জন্য সুপারিশ করা পদে জনবল কর্মরত থাকলে ওই জনবলের অবসর গ্রহণ/স্বেচ্ছায় অবসর গ্রহণ/চাকরিচ্যুতি/পদত্যাগ/মৃত্যুজনিত বা অন্য কোনো কারণে পদ শূন্য হলে বিলুপ্তির আদেশ কার্যকর করতে বলা হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে রেলপথ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) ড. ভুপেন চন্দ্র বিশ্বাস বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘রেলের আধুনিকায়ন ও কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য অপ্রয়োজনীয় পদ বিলুপ্তি ও প্রয়োজনীয় পদ সৃজনসহ নতুন জনবল কাঠামোর অনুমোদন দিয়েছে সচিব কমিটি। এখন আরও কিছু প্রক্রিয়া রয়েছে। এসব প্রক্রিয়া শেষে নতুন জনবল কাঠামো কার্যকর করা হবে।’
রেলপথ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, ১৯৮৪ সালে বাংলাদেশ রেলওয়ের জন্য ৬৮ হাজার ৫২৪টি পদ নির্ধারণ করে দেয় এনাম কমিটি। পরবর্তীতে নতুন করে আরও ১৪ হাজার ৩৬৮টি পদ সৃষ্টি করা হয়। ফলে মোট জনবল দাঁড়ায় ৮২ হাজার ৮৯২-এ। বাংলাদেশ রেলওয়েকে আধুনিকায়ন ও এর কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার লক্ষ্যে এই জনবল কাঠামোর অপ্রয়োজনীয় পদ বিলুপ্তি এবং প্রয়োজনীয় পদ সৃজনের সুপারিশ করা হয়েছিল ২০১৯ সালের মার্চ মাসে। সে অনুযায়ী গত বছরের ৯ আগস্ট এই কাঠামোতে ১৯৫টি বিসিএস ক্যাডার পদ স্থায়ীভাবে নিয়োগের সুপারিশ করা হয়। এ ছাড়া অস্থায়ীভাবে ৫ হাজার ৩৪৪টি ননক্যাডার পদসহ মোট ৫ হাজার ৫৩৯টি নতুন পদ সৃজনের প্রস্তাব করা হয়। পাশাপাশি বিদ্যমান ৮২ হাজার ৮৯২টি পদ হতে ১০২টি বিসিএস ক্যাডার পদসহ মোট ৪০ হাজার ৭২৮টি পদ বিলুপ্ত করে ৪৭ হাজার ৭০৩টি পদের বিপরীতে রেলের সংশোধিত জনবল কাঠামো অনুমোদনে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সম্মতি দেয় জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। পরে সম্মতির জন্য অর্থ বিভাগে পাঠানো হলে ৪৭ হাজার ৭০৩ পদ থেকে কমিয়ে ৪৭ হাজার ৬৩৭টি পদের অনুমোদন দেওয়া হয়।
মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, বর্তমানে তীব্র জনবল সংকটে ভুগছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেওয়ার পর একটি সিন্ডিকেট মামলা ঠুকে দেয়। এতে আটকে যায় নিয়োগ প্রক্রিয়া। এ কারণে বছরের পর বছর ধরে খালি আছে বিভিন্ন পদ। এ নিয়ে সম্প্রতি রেলপথ মন্ত্রণালয়- সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে ক্ষোভ দেখা দেয়। বৈঠকে জনবল সংকট সমাধানে বেশ কিছু সুপারিশও করা হয়। সংশ্লিষ্টরা জানান, মন্ত্রণালয় থেকে আঞ্চলিক পর্যায়ে সর্বস্তরের লোকবল সংকট রয়েছে। রেলওয়ে বর্তমানে শূন্যপদ প্রায় ১৫ হাজার। এর মধ্যে তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির ১০ হাজারের ওপরে এবং বাকি শূন্যপদ দ্বিতীয় ও প্রথম শ্রেণিতে। প্রতিষ্ঠানটির কর্মচারীদের অবসর ও নিয়োগের তথ্য পর্যালোচনায় দেখা গেছে, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে সংস্থাটির ১ হাজার ৪৩ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী অবসর নিয়েছেন। এর বিপরীতে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে ৫৭৮ জন। তাদের মধ্যে কর্মচারীর সংখ্যা ৫৪৪ জন। সর্বশেষ দুই অর্থবছরে রেলওয়ের জনবল কমেছে ২ হাজার ২৮০ জন। ২০১৪-১৫ অর্থবছরে শূন্যপদ ছিল ১১ হাজার ৯৪১টি। পরের অর্থবছরে তা ১৩ হাজার ১৭৮-এ উন্নীত হয়। আর ২০১৬-১৭ অর্থবছরে শূন্য হয় আরও ১ হাজার ৪৩টি পদ। এসব পদের মধ্যে পূর্বাঞ্চলে দীর্ঘদিন ধরে খালি আছে স্টেশন মাস্টার (এসএম), সহকারী স্টেশন মাস্টার (এএসএম), পয়েন্টম্যান, গেটম্যান ও সান্টিংম্যানের মতো গুরুপূর্ণ পদ।