ডেস্ক নিউজ
বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের দ্রুত মিয়ানমারে ফেরাতে না পারলে বাংলাদেশ থেকে নিরাপত্তা ঝুঁকি বিশ্বে ছড়িয়ে পড়তে পারে বলে হুঁশিয়ার করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বৃহস্পতিবার ফ্রান্সে অনুষ্ঠিত প্যারিস শান্তি সম্মেলনে বিশ্ব সম্প্রদায়কে পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি এই সতর্কবার্তা শুনান।
শেখ হাসিনা বলেন, ২০১৭ সালের অগাস্টে মিয়ানমারের বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের সাময়িক আশ্রয় দিয়ে বাংলাদেশ বড় ধরনের আঞ্চলিক সংকট এড়াতে সহায়তা করেছে। এরা এক অনিশ্চিত ভবিষ্যতের মুখোমুখি।
“এসব মানুষের দ্রুত মিয়ানমারে ফিরে যাওয়া নিশ্চিত করতে বিশ্বকে জরুরি ভিত্তিতে পদক্ষেপ নিতে হবে। তা নাহলে এ সংকট থেকে উদ্ভূত নিরাপত্তা ঝুঁকি শুধু আমাদের সীমান্তে আবদ্ধ থাকবে না।
“আমরা এর মধ্যেই তার আলামত দেখেছি।”
বৌদ্ধ সংখ্যাগরিষ্ঠ মিয়ানমারে নিপীড়নের শিকার হয়ে পালিয়ে আসা ১১ লাখ রোহিঙ্গাকে আশ্রয় ও জরুরি মানবিক সহায়তা দিয়ে আসছে বাংলাদেশ। তবে বিপুল সংখ্যক এই শরণার্থী এখন ‘বোঝা’ হিসেবে দেখছে সরকার।
মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর অভিযানে নির্যাতনের মুখে ২০১৭ সালের অগাস্টে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের কথায় উঠে আসে নির্বিচারে হত্যা, ধর্ষণ, জ্বালাও-পোড়াওয়ের ভয়াবহ বিবরণ, যাকে ‘জাতিগত নির্মূল অভিযান’ বলেছে জাতিসংঘ।
আন্তর্জাতিক চাপের মধ্যে মিয়ানমার সরকার রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে ২০১৭ সালের শেষ দিকে বাংলাদেশের সঙ্গে চুক্তি করলেও সেই প্রত্যাবাসন আজও শুরু হয়নি।
প্রত্যাবাসন শুরুর জন্য মিয়ানমারকে চাপ দিতে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়ে আসছে।
বাংলাদেশে সৃষ্ট শরণার্থী সঙ্কট সমাধানে মিয়ানমার যাতে জাতিসংঘের সঙ্গে কাজ করে, সেজন্য নিরাপত্তা পরিষদে একটি প্রস্তাব তোলার উদ্যোগ চার বছর আগে নিয়েছিল যুক্তরাজ্য। তবে চীন ও রাশিয়া ওই উদ্যোগ বর্জন করে।
এমন এক পরিস্থিতিতে কক্সবাজারের শিবিরগুলোতে শরণার্থীদের মধ্যে হতাশা বাড়ছে; তাদের মধ্যে জঙ্গিবাদ ঢুকে পড়ছে। অন্ধকার নামতেই রাখঢাক ছাড়াই অস্ত্র-মাদকের ব্যবহার গা সওয়া হয়ে গেছে, খুনোখুনির ঘটনাও ঘটছে।
সম্প্রতি প্রত্যাবাসনে সোচ্চার রোহিঙ্গা নেতা মোহাম্মদ মুহিবুল্লাহ খুনের পর হত্যাকাণ্ড ক্যাম্পগুলোর নিরাপত্তার বিষয়টি নতুন করে সামনে এনেছে। তাদের অপরাধপ্রবণ হয়ে পড়া নিয়ে কথা হচ্ছে আন্তর্জাতিক পর্যায়েও।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, “এশীয় প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলকে অবশ্যই সবার জন্য শান্তি ও সমৃদ্ধির অঞ্চল হতে হবে। এই অঞ্চলের জন্য আমাদের লক্ষ্য হলো- একে অবাধ, উন্মুক্ত, শান্তিপূর্ণ ও নিরাপদ ও অন্তর্ভুক্তিমূলক।”
তিনি বলেন, এই অঞ্চলে গুরুত্বপূর্ণ অবদান যারা রাখে তাদের উচিত হবে অতীত থেকে শিক্ষা নিয়ে টেকসই ভবিষ্যৎ নিশ্চিতে দায়িত্ব নিয়ে কাজ করা। বাংলাদেশ পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও সমঝোতার ভিত্তিতে সকল অংশীদারের সঙ্গে কাজ করতে চায়।
এক্ষেত্রে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্য হিসেবে আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তার উন্নয়নে ফ্রান্স অন্যন্য অবদান রাখছে বলে মন্তব্য করেন শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, “যে ধরিত্রীকে আমরা আমাদের ঘর বলি, তা উত্তর ও দক্ষিণে বিভাজিত না থাকুক। ‘এক ধরিত্রীর’ নাগরিক হিসেবে সহমর্মিতা, মানবতা ও বৈচিত্র্য দিয়ে আমাদের ঐক্যকে এগিয়ে নিতে হবে।”