ডেস্ক নিউজ
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের তাদের মাতৃভূমি মিয়ানমারে দ্রুত স্বেচ্ছায় ও টেকসই প্রত্যাবাসনের জন্য জাপানের সমর্থন চেয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘আমরা এই বাস্তুচ্যুত জনগণকে মিয়ানমারে তাদের পৈতৃক বাড়িতে দ্রুত স্বেচ্ছায়, নিরাপদ এবং টেকসই প্রত্যাবাসনের জন্য জাপানের সমর্থন চাই। ‘
বাংলাদেশ-জাপান কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার ৫০তম বার্ষিকী উদযাপনের সময় আজ মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রী একটি পূর্ব-রেকর্ড করা ভিডিও বার্তায় এই অভিমত ব্যক্ত করেন।
কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার সুবর্ণ জয়ন্তী উপলক্ষে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও ঢাকায় জাপানি দূতাবাস যৌথভাবে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
তিনি বলেন, বিশ্বশান্তি, অগ্রগতি, সমৃদ্ধি, স্থিতিশীলতা ও টেকসই উন্নয়নের জন্য আন্তর্জাতিক ফোরামে বাংলাদেশ ও জাপান বিশ্বস্ত অংশীদার এবং শান্তিপ্রিয় দেশ হিসেবে উভয়েই সব সময় একে অপরকে সমর্থন করে কাজ করেছে।
শেখ হাসিনা বলেন, ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা এবং ১০ ফেব্রুয়ারি ১৯৭২ সালে জাপানের স্বীকৃতির পর থেকে দুই দেশের মধ্যে চমৎকার সম্পর্ক রয়েছে। ঢাকায় আবাসিক কূটনৈতিক মিশন খোলার জন্য প্রথম কয়েকটি দেশের মধ্যে জাপান ছিল উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমাদের জনগণ আমাদের মুক্তিযুদ্ধের সময় জাপান এবং সে দেশের জনগণ, বিশেষ করে স্কুলছাত্রদের মূল্যবান সমর্থন ও অবদানকে কৃতজ্ঞতার সাথে স্মরণ করে। ‘
১৯৭৩ সালের অক্টোবরে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জাপানে ঐতিহাসিক সফরের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, এটি একটি অবিচল ও দীর্ঘস্থায়ী বন্ধুত্বের ভিত্তি স্থাপন করেছে। তিনি আরো বলেন, দুই দেশের সম্পর্ককে আরো শক্তিশালী করতে ১৯৯২, ১৯৯৭, ২০১০, ২০১৪, ২০১৬ এবং ২০১৯ সালে তাঁর বাবার উত্তরাধিকার বহনের পাশাপাশি জাপানে এই সব সফর ছিল তাঁর জন্য একটি সম্মানের বিষয়।
শেখ হাসিনা এরপর বলেন, “আজ আমি আনন্দিত যে সময়ের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ আমাদের এই বন্ধুত্ব গভীরতা এবং মাত্রায় এতটাই বিকশিত হয়েছে যে আমাদের ‘ব্যাপক অংশীদারিত্ব’ এখন নিকট ভবিষ্যতে ‘কৌশলগত অংশীদারিত্বে’ উন্নীত হওয়ার জন্য প্রস্তুত। ” তিনি এ সময় জাপানের টেকসই অর্থনৈতিক সহযোগিতা ও সমর্থনের কথাও উল্লেখ করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশে বিভিন্ন খাতে জাপানি বিনিয়োগ বৃদ্ধি পাওয়ায় আমি আনন্দিত। আমি আনন্দের সাথে লক্ষ করছি যে জাপানি কম্পানিগুলো বাংলাদেশে বিনিয়োগের পরিবেশকে আকর্ষণীয় বলে মনে করছে এবং বিনিয়োগ করতে প্রস্তুত রয়েছে। ‘
তিনি বলেন, ৫০তম বার্ষিকী উদযাপনের লোগোটি ‘বাংলাদেশ-জাপান বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের’ মনের ভাবের প্রতীক। লোগোটি কভিড-১৯ মহামারি সত্ত্বেও দুটি দেশের এই মাইলফলক বছরটিকে অনেক অনুষ্ঠানের সাথে যথাযথভাবে উদযাপন করার প্রতিফলন করে।
শেখ হাসিনা আরো বলেন, ‘মহামারি মোকাবেলায় সহায়তার জন্য অবশ্যই জাপান সরকার ও জনগণকে ধন্যবাদ জানাতে হবে। আজ আমি যখন আমাদের দুই দেশের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক দেখছি, আমি উন্নতির অনেক সুযোগ দেখছি। প্রকৃতপক্ষে এই সুযোগগুলো কাজে লাগাতে পারস্পরিক উদ্যোগ অপরিহার্য। ‘
প্রধানমন্ত্রী বলেন, “বাংলাদেশ যেহেতু একটি সমৃদ্ধ, উন্নত দেশ এবং জাতির পিতার ‘সোনার বাংলা’ বা ‘সোনার বাংলাদেশ’ হওয়ার চেষ্টা করছে, সেহেতু আমাদের বিগত ৫০ বছরের ঈর্ষণীয় সহযোগিতা আগামী ৫০ বছরের জন্য অনুপ্রেরণা হয়ে থাকবে। পারস্পরিকভাবে লাভের জন্য বাংলাদেশ সময়ের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ বন্ধু জাপানের সাথে যুক্ত থাকতে দৃঢ় প্রত্যয়ী। “
বাংলাদেশ ও জাপানের কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার ৫০তম বার্ষিকী উদযাপনের মহতী অনুষ্ঠানে যোগ দিতে পেরে তাঁর আনন্দ প্রকাশ করে শেখ হাসিনা এই শুভ অনুষ্ঠান উদযাপনসহ সকল অনুষ্ঠান উদযাপনের শুভেচ্ছা জানান। এই ঐতিহাসিক অনুষ্ঠানে জাপানের প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদার সঙ্গে একসঙ্গে তিনি দুই বন্ধুপ্রতিম দেশের জনগণকে আন্তরিক অভিনন্দন জানান।
প্রধানমন্ত্রী জাপানের সম্রাট ও সম্রাজ্ঞীকে এই গুরুত্বপূর্ণ উপলক্ষকে সামনে রেখে তাঁদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান। এই প্রসঙ্গে তিনি সম্রাট ইমেরিটাস আকিহিতোর সাথে তাঁর সাক্ষাতের কথাও স্মরণ করেন এবং ৮৮ বছর বয়সে জাপানের দীর্ঘতম জীবিত সম্রাট হওয়ার জন্য তাঁকে অভিনন্দন জানান।