ডেস্ক নিউজ
মিয়ানমার ও বাংলাদেশের দ্বিপক্ষীয় চুক্তির ভিত্তিতে বাংলাদেশ থেকে ‘বাস্তুচ্যুত ব্যক্তি’দের ফিরিয়ে নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন মিয়ানমারের সামরিক শাসক মিন অং লাইং। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন ইস্যুতে তিনি বলেন, বাংলাদেশের সঙ্গে চুক্তি আলোচনার মাধ্যমে বাস্তবায়ন করা হবে। ক্ষমতা দখলের ৮ দিন পর মঙ্গলবার প্রথম টেলিভিশন ভাষণে সেনাপ্রধান লাইং এ প্রতিশ্রুতি দেন। তবে অতীতের মতোই তিনি ‘রোহিঙ্গা’ শব্দটি ব্যবহার করেননি। ভাষণে তিনি ‘যুক্তি’ দিয়ে অভ্যুত্থানের পক্ষে সাফাই গেয়েছেন। দেশে নভেম্বরের সাধারণ নির্বাচন সুষ্ঠু হয়নি দাবি করে তিনি নতুন নির্বাচন দেওয়ারও প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। খবর বিবিসির।
সেনা অভ্যুত্থানের নায়ক সেনাপ্রধান সিনিয়র জেনারেল মিন অং লাইং বলেন, তার সরকার মিয়ানমারের চলমান পররাষ্ট্রনীতিতে কোনো পরিবর্তন আনবে না। রোহিঙ্গা ইস্যুতে দেশের পররাষ্ট্রনীতিতেও কোনো পরিবর্তন আসবে না। রোহিঙ্গাদের ফেরত নেওয়ার ব্যাপারে যে চুক্তি আছে তাতেও কোনো প্রভাব পড়বে না। বাংলাদেশের সঙ্গে চুক্তি আলোচনার মাধ্যমে বাস্তবায়ন করা হবে। তবে দেশের স্বার্থের ক্ষতি না করে তা করা হবে। দ্বিপক্ষীয় চুক্তি অনুযায়ী, যেভাবে গৃহহীন লোকজনকে বাংলাদেশ থেকে ফেরত নেওয়ার কথা ছিল, সেটা চলতে থাকবে। তিনি আরও বলেন, মিয়ানমারের অভ্যন্তরে অস্থায়ী শিবিরে থাকা বাস্তুচ্যুত লোকজনকে পুনর্বাসনের কার্যক্রমও অব্যাহত থাকবে। অবশ্য তিনি বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের কক্সবাজার ক্যাম্প অথবা ভাসানচরের কথা উল্লেখ করেননি।
সেনাপ্রধান মিন অং লাইংয়ের দেওয়া ভাষণের পুরো কপি দেশটির রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম দ্য গ্লোবাল নিউলাইট অব মিয়ানমারে ছাপা হয়েছে। এমন এক সময় তিনি ভাষণ দিলেন যখন দেশটিতে সেনা অভ্যুত্থানের বিপক্ষে ব্যাপক জনবিক্ষোভ হচ্ছে। ভাষণের বেশিরভাগজুড়েই তিনি নির্বাচিত সরকারকে উৎখাত করার পক্ষে সাফাই গেয়েছেন। কেন কোন পরিস্থিতিতে এ অভ্যুত্থান করতে হয়েছে, তিনি সেটির ব্যাখ্যা দেন। তিনি বলেন, নভেম্বরের নির্বাচনে ব্যাপক ভোটে অং সান সু চির বিজয়ী হওয়া নিরপেক্ষ ছিল না। তিনি আরও বলেন, নভেম্বরের নির্বাচনে অনিয়মের যেসব অভিযোগ উঠেছে, তা খতিয়ে দেখতে ব্যর্থ হয়েছে নির্বাচন কমিশন। খুব দ্রুত নতুন নির্বাচনের মাধ্যমে বিজয়ীদের হাতে তিনি ক্ষমতা হস্তান্তরের প্রতিশ্রুতি দেন। নতুন একটি নির্বাচন কমিশন গঠনের কথা বলেন তিনি।
নাগরিকদের প্রতি ‘আবেগের বশবর্তী না হয়ে সত্য তথ্য-উপাত্ত দেখার আহ্বান’ জানিয়ে জেনারেল লাইং বলেন, তার শাসনামল ২০১১ সাল পর্যন্ত চলা ৪৯ বছরের সামরিক নিয়ন্ত্রণের মতো হবে না। ‘সত্যিকারের ও নিয়মতান্ত্রিক গণতন্ত্র’ অর্জনের প্রত্যয় ব্যক্ত করেন তিনি। ভাষণে তিনি বিক্ষোভকারীদের সরাসরি কোনো হুমকি দেননি। তবে তিনি বলেন, কেউই আইনের ঊর্ধ্বে নন।
মিয়ানমারে সেনা অভ্যুত্থানের পর দেশটিতে গত এক দশকের মধ্যে মঙ্গলবার সবচেয়ে বড় বিক্ষোভ হয়েছে। বিক্ষোভ টানা ৩ দিন ধরে চলছে। সেনা অভ্যুত্থানের বিপক্ষে ব্যাপক বিক্ষোভ ও দেশব্যাপী ধর্মঘট পালিত হয়েছে।
বিক্ষোভরত এক চিকিৎসক বলেন, পেশাজীবীরা, বিশেষ করে সরকারি চিকিৎসক, প্রকৌশলী ও শিক্ষকরা রাস্তায় নেমেছেন। তিনি আরও বলেন, সবাই একতাবদ্ধ-এটা দেখাতেই তারা রাস্তায় নেমেছেন। সবারই উদ্দেশ্য এক আর তা হলো-আমরা স্বৈরশাসনের পতন চাই।
সম্পর্ক স্থগিত করল নিউজিল্যান্ড : নির্বাচিত সরকারকে উৎখাত করে সামরিক শাসন জারির প্রতিক্রিয়ায় মিয়ানমারের সঙ্গে সম্পর্ক স্থগিত করার ঘোষণা দিয়েছে নিউজিল্যান্ড। একই সঙ্গে মিয়ানমারের ঊর্ধ্বতন সেনা কর্মকর্তাদের নিউজিল্যান্ড সফরেও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। সামরিক শাসন জারির প্রতিক্রিয়ায় প্রথম দেশ হিসাবে নিউজিল্যান্ড এ পদক্ষেপ নিয়েছে। মঙ্গলবার এক সংবাদ সম্মেলনে নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী জাসিন্ডা আরডার্ন মিয়ানমারের সঙ্গে সম্পর্ক স্থগিত করার ঘোষণা দেন। তিনি বলেন, আমরা কঠোর বার্তা দিতে চাই। আমরা বলতে চাই, নিউজিল্যান্ডে বসে আমাদের যা যা করা সম্ভব আমরা সে সবই করব। উচ্চপর্যায়ের সব আলোচনা আমরা স্থগিত করব। মিয়ানমারের সামরিক সরকার সুবিধা পেতে পারে-এমন কোনো সহায়তা কর্মসূচিও সেখানে বাস্তবায়ন করব না। ২০১৮ থেকে ২০২১ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত মিয়ানমারকে ৪ কোটি ২০ লাখ ডলারের সহায়তা দিয়েছে নিউজিল্যান্ড।