নিউজ ডেস্ক :
নিপীড়ন-নির্যাতনের মুখে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা প্রায় ১৫ লক্ষাধিক রোহিঙ্গার আশ্রয় দিয়ে মানবতার পরিচয় দিয়ে প্রশংসিত হয়েছে বাংলাদেশ। সাময়িক আশ্রয় দিলেও বাংলাদেশ সংকটের শুরু থেকেই রোহিঙ্গাদের নিরাপদ ও সম্মানজনক প্রত্যাবাসনের জন্য মিয়ানমার, জাতিসংঘ, প্রভাবশালী রাষ্ট্রগুলোর সহযোগিতা চায় বাংলাদেশ। যদিও মিয়ানমার সরকার জাতিসংঘসহ বাংলাদেশের কোনো অনুরোধই কানে তোলেনি। বর্তমানে আন্তর্জাতিক নানাবিধ চাপে পড়ে রোহিঙ্গা প্রত্যাবর্তনে ব্যর্থতা বাংলাদেশের ঘাড়ে চাপাতে নতুন করে অপতৎপরতা শুরু করেছে মিয়ানমার।
শুক্রবার (৩১ মে) জাপানের টোকিওতে অনুষ্ঠিত ‘দ্য ফিউচার অব এশিয়া’ শীর্ষক ২৫তম আন্তর্জাতিক সম্মেলনে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের ব্যর্থতা ঢাকতে বাংলাদেশকে দায়ী করেছে মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সিলর অং সান সুচির অফিস বিষয়ক কেন্দ্রীয় মন্ত্রী কাইওয়া টিন্ট সয়ে। এ খবর দিয়েছে জাপানের অনলাইন নিক্কি এশিয়ান রিভিউ।
কাইওয়া টিন্ট সয়ের অভিযোগ, রোহিঙ্গা প্রত্যাবর্তনে বাংলাদেশ কোনোই সাহায্য করছে না। এমনকি সম্পাদিত চুক্তিতেও সম্মান দেখাচ্ছে না বাংলাদেশ। মিয়ানমারের পশ্চিমাঞ্চল থেকে যেসব মানুষ পালিয়ে গিয়ে শরণার্থী হয়েছে তাদেরকে ফেরত পাঠানো এবং আবাসিক কার্ড দেয়ার বিষয়ে কোনো সহযোগিতা করছে না বাংলাদেশ। তবে রোহিঙ্গা প্রত্যাবর্তন নিয়ে মিয়ানমার কর্তৃপক্ষের এমন অযৌক্তিক ও বিভ্রান্তিমূলক অভিযোগে কঠোর প্রতিবাদ করেছে বাংলাদেশ।
মিয়ানমারের এমন অভিযোগকে মিথ্যা, ভিত্তিহীন ও একপেশে বলে কঠোর সমালোচনা করেছে দেশের সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা। রোহিঙ্গা সংকট আরও ঘনীভূত করতে মিয়ানমার ইচ্ছাকৃতভাবে এমন মিথ্যাচার করছে বলে মনে করছেন তারা।
এ বিষয়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক তারেক শামসুর রেহমান বলেন, বাংলাদেশের মানবিকতা নিয়ে অপরাজনীতি করার চেষ্টা করছে মিয়ানমার। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে প্রথম থেকেই মিয়ানমার মিথ্যাচার করে আসছে। শত চাপের মুখেও মিয়ানমার গণহত্যার বিষয়ে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতার বিষয়টি স্বীকার করেনি। গণহত্যার সুবিচার তো দূরের কথা, বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেয়ার ব্যাপারে শুধুই কালক্ষেপণ করছে মিয়ানমার।
তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশ শুরু থেকেই রোহিঙ্গাদের সম্মানজনক প্রত্যাবাসনের পক্ষে আন্তর্জাতিক জনমত গড়ে তুলতে কাজ করে যাচ্ছে। সম্প্রতি জাপান সফরেও রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবর্তন বিষয়ে সহযোগিতা চেয়েছে। সুতরাং রোহিঙ্গা বিষয়ে মিয়ানমার সরকার বাংলাদেশকে যেভাবে দায়ী করছে- তা উদ্দেশ্যমূলক ও মিথ্যাচার ছাড়া কিছুই নয়। কারণ রোহিঙ্গারা মিয়ানমারের নাগরিক, একদিন না একদিন তাদের মিয়ানমারে ফিরে যেতেই হবে।