ডেস্ক নিউজ
সফরের প্রথম টি-টোয়েন্টিতে জিম্বাবুয়ের দেওয়া মাঝারি টার্গেট তাড়া করে ৮ উইকেট হাতে রেখেই জয়ের লক্ষ্যে পৌঁছাল টাইগাররা। এর মধ্যদিয়ে নিজেদের ক্রিকেট ইতিহাসের শততম টি-টোয়েন্টি ম্যাচে বড় জয় পেল বাংলাদেশ। ঐতিহাসিক এই ম্যাচে ১৮ ওভার ৫ বলে মাত্র দু’টি উইকেট হারিয়ে ১৫৬ রান করে জয়ের ধারা অব্যাহত রাখলো টাইগাররা। এই জয়ে সিরিজে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে গেল মাহমুদউল্লাহবাহিনী।
দ্বিতীয় ইনিংসে দুই ওপেনার সৌম্য সরকার ও মোহাম্মদ নাঈমের ব্যাটে দারুণ শুরু করে বাংলাদেশ। তবে শুরুতে কিছুটা সাবধানী ছিলেন দুজনেই। কিন্তু চতুর্থ ওভারে এনগ্রাভার বলে তিন চার মেরে খোলস ছেড়ে বেরিয়ে আসেন নাঈম। ধীরে ধীরে আগ্রাসী হয়ে ওঠেন সৌম্যও। দুই ওপেনারের সাবধানী ব্যাটিংয়ে প্রথম ৬ ওভারে ৪৩ রান তোলে বাংলাদেশ। ১০ ওভারে শেষে সংগ্রহ দাঁড়ায় ৭৬ রানে।
সৌম্য ও নাঈম প্রয়োজনীয় রান রেট কখনোই হাতের নাগালের বাইরে যেতে দেননি। সৌম্য একসময় হাত খুলে খেলতে শুরু করেন। কিন্তু সিঙ্গেল নিয়ে আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে নিজের চতুর্থ ফিফটি পূর্ণ করার পর দ্বিতীয় রান নিতে গিয়ে রান আউটের শিকার হন তিনি। বিদায়ের আগে চার বাউন্ডারি ও ২ ছক্কায় ৪৫ বলে ঠিক ৫০ রান করেন সৌম্য। প্রথম উইকেট হারানোর আগেই অবশ্য ১০০ ছাড়িয়ে যায় বাংলাদেশের সংগ্রহ।
১৫তম ওভারর চতুর্থ বলে অল্পের জন্য রান আউট হওয়ার হাত থেকে বেঁচে যান নাঈম। দ্বিতীয় রান নিতে দৌড়ে ক্রিজের মাঝপথে গিয়ে ফিরে আসেন তিনি। পরে অ্যাঙ্কেলে চোট নিয়ে প্রাথমিক চিকিৎসা নেন তিনি। পরের ওভারেই অবহস্য ফিফটি তুলে নেন এই তরুণ ওপেনার। ৪০ বল খেলে ৪ চারে সাজানো এই ফিফটি তার টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারের মাত্র দ্বিতীয়।
সৌম্যর পর ক্রিজে নামা মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ এসেই বাউন্ডারি হাঁকান। কিন্তু তাড়াহুড়ো করতে গিয়ে পরে একবার নিজে এবং আরেকবার নাঈমকে রান আউটের দিকে ঠেলে দিয়েছিলেন তিনি। প্রথম দুই বার কোনো বিপদ না ঘটলেও তৃতীয়বার মুজারাবানির সরাসরি থ্রোয়ে ব্যক্তিগত ১৫ রানে নিজেই রান আউট হয়ে ফেরেন বাংলাদেশের টি-টোয়েন্টি অধিনায়ক। ধীরে ধীরে চাপ বাড়তে থাকে বাংলাদেশের ওপর।
শেষ ৩ ওভারে বাংলাদেশের দরকার ছিল ২৭ রান। এনগ্রাভার করা চতুর্থ ও ইনিংসের ১৮তম ওভারে নাঈম ও নুরুল হাসান সোহান মিলে তোলেন ১৬ রান। ফলে লক্ষ্য টাইগারদের হাতের মুঠোয় চলে আসে। ১৯তম ওভারের দ্বিতীয় বলে ছক্কা হাঁকিয়ে সেই লক্ষ্য ঢিল ছোঁড়া দূরত্বে এনে ফেলেন সোহান। এরপর ওভারের শেষ বলে বাউন্ডারি হাঁকিয়ে জয় নিশ্চিত করেন নাঈম। এই বাঁহাতি ওপেনার ৫১ বলে ৬৩ রানের দারুণ ইনিংস খেলে অপরাজিত থাকেন। আর সাড়ে চার বছর পর টি-টোয়েন্টি দলে ফেরা সোহান অপরাজিত থাকেন ৮ বলে ১ ছক্কা ও ১ চারে ১৬ রানের ক্যামিও খেলে।
এর আগে, টসে জিতে ব্যাটিংয়ে নেমে ১৯ ওভারে সব কয়টি উইকেট হারিয়ে ১৫২ রান সংগ্রহ করে স্বাগতিক জিম্বাবুয়ে। ম্যাচে সর্বোচ্চ তিন উইকেট নেন মোস্তাফিজুর রহমান। দু’টি করে উইকেট পান শরিফুল ইসলাম ও মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন। আর সাকিব-মাহমুদুল্লাহ নেন একটি করে উইকেট। জিম্বাবুয়ের হয়ে সর্বোচ্চ ৪৩ রান করেন রেগিস চাকাভা।
ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারে জিম্বাবুয়ের দলীয় ১০ রানেই প্রথম আঘাত হানেন মুস্তাফিজুর রহমান। ওই ওভারের দ্বিতীয় বলেই ছক্কা মেরেছিলেন বাঁহাতি ব্যাটসম্যান টাডিওয়ানাশে মারুমানি (৭)। পঞ্চম বল উড়িয়ে মারতে গিয়ে তিনি সৌম্য সরকারের দারুণ ক্যাচে পরিণত হন। আরেক ওপেনার মাধভেরেকে ফেরা সাকিব। নবম ওভারে এসে তিনি ২৩ বলে ২৩ রান করা এই ওপেনারকে কট অ্যান্ড বোল্ড করেন। কিন্তু জিম্বাবুয়ের রানের গতি কমেনি।
১০ ওভারেই তাদের স্কোর ৯০ হয়ে যায়। বিধ্বংসী ব্যাট করছিলেন রেগিস চাকাভা। ২২ বলে ৫ চার ২ ছক্কায় ৪৩ রান করা এই উইকেটকিপার ব্যাটসম্যন রান-আউট হয়ে যান। ৯১ রানে তৃতীয় উইকেট পতন। ১ রানের ব্যবধানে আঘাত হানেন শরীফুল। বিপজ্জনক অল-রাউন্ডার সিকান্দার রাজা ফিরে যান কোনো রান না করে। এরপর মঞ্চে সৌম্য সরকার। তার করা চতুর্দশ ওভারের দ্বিতীয় বলে লেগ বিফোর উইকেটের ফাঁদে পা দেন মুসাকান্দা (৬)। একপ্রান্ত আগলে ভালোই হাত চালিয়ে খেলছিলেন ডিওন মেয়ার্স। ২২ বলে ৩৫ রান করা অভিষিক্ত এই ব্যাটসম্যানকে নিজের দ্বিতীয় শিকারে পরিণত করেন শরীফুল।
ইনিংসের ১৮তম ওভারে এসে প্রথম শিকারের দেখা পান সাইফউদ্দিন। লুকি জঙ্গুইকে (১৮) তিনি সরাসরি বোল্ড করে দেন। রায়ান বার্লও (৪) শিকার হন এই পেস বোলিং অল-রাউন্ডারের। শেষটা ছেঁটে দেন মুস্তাফিজ। ৪ ওভারে মাত্র ৩১ রান দিয়ে দ্য ফিজ নেন ৩ উইকেট। ১৯ ওভারে ১৫২ রানে অল-আউট হয় জিম্বাবুয়ে। সাইফউদ্দিন আর শরিফুল নেন ২টি করে উইকেট। ১টি করে নেন সাকিব-সৌম্য।