ডেস্ক নিউজ
নির্বাচনী অঙ্গীকার পূরণে গ্রামেই শহরের সব ধরনের সুবিধা নিশ্চিত করতে যাচ্ছে সরকার। গ্রামেই গড়ে উঠবে শহরের মতো দৃষ্টিনন্দন ঘরবাড়ি। পাড়া-মহল্লায় থাকবে পাকা রাস্তা ও ক্ষেত্রবিশেষে দৃষ্টিনন্দন কালভার্ট-সেতু। প্রতিটি বাড়িতে থাকবে পানি ও বিদ্যুতের ব্যবস্থা এবং পরিবেশবান্ধব বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ও স্যানিটেশন সুবিধা। গ্রামগুলোতে থাকবে স্কুল, শপিং মল, স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র, হাটবাজার, কমিউনিটি স্পেস বা বিনোদন ব্যবস্থা। রাস্তায় থাকবে রোড লাইটের ঝলমলে আলো। বিভিন্ন কারখানা স্থাপনের মাধ্যমে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হবে। মোটকথা গ্রামেই মিলবে শহরের নাগরিক সুবিধা। প্রথম দফায় উল্লিখিত সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হবে দেশের ১৭টি গ্রামকে। পরবর্তীতে পর্যায়ক্রমে প্রতিটি নির্বাচনী এলাকায় একটি করে মোট ৩০০টি গ্রামকে পরীক্ষামূলকভাবে শহরে পরিণত করা হবে। সম্প্রতি ‘আমার গ্রাম-আমার শহর : প্রতিটি গ্রামে আধুনিক নগর সুবিধা সম্প্রসারণ’ এর লক্ষ্যে কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়নে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের ফোকাল পয়েন্ট কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে গঠিত কমিটির সভায় উল্লিখিত সিদ্ধান্ত হয়।
শহরের মতো গ্রামকেও পরিকল্পিতভাবে গড়ে তুলতে এ সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম। তিনি বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী ‘আমার গ্রাম-আমার শহর’ কনসেপ্ট বাস্তবায়নে কাজ করছে সরকার। এ কারণে শহরের মতো গ্রামকেও পরিকল্পিতভাবে গড়ে তোলা হবে। প্রাথমিকভাবে কয়েকটি গ্রামকে পরীক্ষামূলকভাবে শহরের যাবতীয় সুযোগ-সুবিধা দিয়ে গড়ে তোলা হবে। এটি সফল হলে পর্যায়ক্রমে এমন গ্রামের সংখ্যা বাড়ানো হবে।’
প্রথম দফায় দেশের ১৭টি গ্রামকে পাইলট গ্রাম হিসেবে মনোনীত করা হয়েছে। এর মধ্যে বিভাগভিত্তিক গ্রামগুলো হলো- নরসিংদীর মনোহরদী উপজেলার চালাকচরের হাফিজপুর গ্রাম, কুমিল্লার মনোহরগঞ্জের বিপুলশারের শেকচাইল গ্রাম, রাজশাহীর বাঘমারার সোনাডাঙ্গা গ্রাম, খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলার খুরনিয়ার টিপনা গ্রাম, কুড়িগ্রামের ভুরুঙ্গামারী উপজেলার পাথরডুবি গ্রাম, বরিশালের হিজলা উপজেলার মেমানিয়ার ইন্দুরিয়া গ্রাম, সিলেটের গোয়াইনঘাটের রুস্তমপুরের বাগাইয়া গ্রাম এবং নেত্রকোনার বারহাট্টা উপজেলার শাহাতার ডেমুরা গ্রাম। বিশেষ অঞ্চল হিসেবে মনোনীত গ্রামগুলোর মধ্যে রয়েছে-সুনামগঞ্জের শান্তিগঞ্জের শিমুলবাক গ্রাম, গাইবান্ধার ফুলছড়ি উপজেলার ফুলছড়ি গ্রাম, নওগাঁর নিয়ামতপুরের শ্রীমন্তপুরের দরগাপাড়া গ্রাম, সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার বুড়িগোয়ালিনীর দাতিনাখালী গ্রাম, রাঙামাটির বরকলের ছোট হরিণা গ্রাম, গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর উপজেলার জলিরপাড়ের বিলচান্দা গ্রাম এবং চট্টগ্রামের মিরসরাই উপজেলার ইছাখালির চরশরত গ্রাম। এ ছাড়া দ্বীপের পর্যটন সম্ভাবনাময় বিশেষ দুটি গ্রাম হলো ভোলার চরফ্যাশন উপজেলার চর কুকরি-মুকরি এবং কক্সবাজারের কুতুবদিয়া উপজেলার বড়ঘোপ। ওই সভায় প্রকল্প পরিচালক আবুল মনজুর মো. সাদেক বলেন, নির্বাচনী ইশতেহারে পাঠাগার, ক্রীড়া ও বিনোদন সুবিধা নিশ্চিতে প্রতিটি উপজেলায় যুব বিনোদন কেন্দ্র ও যুব স্পোর্টস কেন্দ্র নির্মাণের সিদ্ধান্ত রয়েছে। ইতোমধ্যে উপজেলা পর্যায়ে স্থানীয় সরকার বিভাগের আওতায় অডিটোরিয়াম, ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মডেল মসজিদ, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের ট্রেনিং সেন্টার কাম অফিস ভবন নির্মাণ এবং সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের উপজেলা সাংস্কৃতিক কেন্দ্র এবং গণগ্রন্থাগার ভবন নির্মাণের লক্ষ্যে প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। এসব অবকাঠামো নির্মাণে ইতোমধ্যে জমির সংকট সৃষ্টি হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে পাঠাগার, ক্রীড়া ও বিনোদন সুবিধা সম্প্রসারণের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের মধ্যে অবকাঠামো নির্মাণে সমন্বয় সাধন করা হলে উন্নত বিশ্বের আদলে একই স্থান থেকে বিনোদন সেবা নিশ্চিতসহ ভূমির সংকট নিরসনসহ সরকারি অর্থ সাশ্রয় করা সম্ভব হবে।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতরের প্রধান প্রকৌশলী সভায় জানান, তার অধিদফতরের আওতায় বর্তমানে ১০১টি প্রকল্প চালু রয়েছে। এর মধ্যে বিভিন্ন কারণে প্রায় অর্ধেক প্রকল্পের সংশোধন প্রয়োজন হচ্ছে। এ প্রকল্প সংশোধনের সময়, কারিগরি সহায়তা প্রকল্পের সমীক্ষায় প্রাপ্ত ফলাফলের আলোকে ‘আমার গ্রাম-আমার শহর’ অঙ্গীকারের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ উপাদানসমূহ অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে। এভাবে আমার গ্রাম আমার শহর নির্বাচনী অঙ্গীকারের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত সংসদীয় ৩০০টি আসন থেকে ৩০০টি গ্রামকে পাইলট গ্রাম কিংবা আরও বেশি গ্রামকে শহরের মতো উন্নয়ন করা যেতে পারে। এতে তুলনামূলকভাবে অর্থ সাশ্রয় ও দ্রুততার সঙ্গে অনেক গ্রাম উন্নয়ন সম্ভব হবে।
স্থানীয় সরকার বিভাগের একজন কর্মকর্তা জানান, এ কর্মসূচি বাস্তবায়নে আগামী ৫ বছরে দেড় লাখ কোটি টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে। এর মধ্যে উন্নয়ন ব্যয় ১ লাখ ৩৯ হাজার ৩৪০ কোটি টাকা। অনুন্নয়ন ব্যয় ধরা হয়েছে ১৫ হাজার কোটি টাকা। উন্নয়ন ব্যয়ের প্রায় ১৭ শতাংশ টাকা বিদেশি দাতা সংস্থার কাছ থেকে পাওয়া যাবে। প্রকল্পের প্রস্তাবনায় গ্রাম ও নগরের মধ্যে বৈষম্য কমাতে ইউনিয়ন পরিষদের সক্ষমতা বাড়ানোর কথা বলা হয়েছে। এতে বলা হয়, গ্রামে উন্নত রাস্তাঘাট, সুপেয় পানি, আধুনিক স্বাস্থ্যসেবা, মানসম্মত শিক্ষা, উন্নত পয়ঃনিষ্কাশন, দ্রুতগতির ইন্টারনেট সুবিধা ও ভোগ্যপণ্যের বাজার সম্প্রসারণ করতে হলে ইউনিয়ন পরিষদের সক্ষমতা বৃদ্ধি করতে হবে। গ্রামকে আধুনিক শহরের সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিতে স্থানীয় সরকার বিভাগের আওতাধীন সেবা ও সরবরাহ সংশ্লিষ্ট আইনে অন্তর্ভুক্ত করার ব্যবস্থা করতে হবে।