প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, রাসেল আজ আমাদের মধ্যে নেই। একটা ছোট্ট শিশু ছিল। কিন্তু সেই শিশুটিকে বাঁচতে দেওয়া হয়নি। তাকেও নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছিল। এ ধরনের ঘটনা আর না ঘটুক, সেটাই আমরা চাই।
তিনি বলেন, আমাদের প্রতিটি শিশু লেখাপড়া শিখে আগামী দিনে এ দেশের কর্ণধার হবে। সুন্দরভাবে বাঁচবে, সেই লক্ষ্য নিয়েই আমরা কাজ করে যাচ্ছি। কবি সুকান্তের ‘এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি, নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার’ উলেস্নখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রতিটি শিশুর বাসযোগ্য বাংলাদেশ গড়তে তার সরকার কাজ করে যাচ্ছে।
রোববার সকালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছোট ছেলে শহীদ শেখ রাসেলের ৫৭তম জন্মদিন উপলক্ষে আয়োজিত বিভিন্ন কর্মসূচিতে যুক্ত হয়ে এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। গণভবন থেকে
শেখ রাসেল রোলার স্কেটিং কমপেস্নক্স, ঢাকা ইউনিভার্সিটি ল্যাবরেটরি স্কুল অ্যান্ড কলেজ প্রাঙ্গণ এবং বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে সংযুক্ত হন প্রধানমন্ত্রী।
ছোট ভাই শেখ রাসেলের দুরন্ত শৈশবের বিভিন্ন স্মৃতিচারণ করে শেখ হাসিনা বলেন, রাসেল আজ আমাদের মধ্যে নেই এবং ওই স্কুলের ছাত্রছাত্রী যুগ যুগ ধরে যারা পড়াশোনা করবে, অন্তত তারা এইটুকু জানবে, এই টুকু শিখবে- একটা ছোট্ট শিশু ছিল এই স্কুলে। কিন্তু সেই শিশুটিকেও বাঁচতে দেওয়া হয়নি। তাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছিল। এ ধরনের ঘটনা আর কখনো না ঘটুক, সেটাই আমরা চাই।
শহীদ শেখ রাসেলের শৈশবের স্কুলের স্মৃতি ধরে রাখার জন্য বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়ার জন্যও সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, শেখ রাসেল শিশু-কিশোর পরিষদ করার একটাই উদ্দেশ্য ছিল- ‘এ দেশের শিশুদের সঠিকভাবে গড়ে তোলা। দেশপ্রেমিক করা, দেশের সেবা করার মনোভাব যেন তাদের মধ্যে গড়ে ওঠে। তারা যেন সুনাগরিক হয়ে গড়ে ওঠে, সেদিকটা চিন্তা করেই এ সংগঠনটা তৈরি করা হয়েছিল। আজ দেশব্যাপী এ সংগঠনের অনেক ছেলেমেয়ে নিজের পায়ে দাঁড়িয়েছে। অনেকে জীবনে প্রতিষ্ঠা লাভ করেছে। অনেকে রাজনীতিতেও যথেষ্ট অবদান রেখে যাচ্ছে। সেই ছোট্ট শিশু থেকে তারা এখন অনেকেই বড় হয়েছে। অনেকেই বিভিন্ন কর্মস্থলে যোগ দিয়েছে।
শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের শিশুরা দেশপ্রেমিক হবে, মানুষের মতো মানুষ হবে। মানুষের সেবা করবে এবং নিজেদের উপযুক্ত নাগরিক হিসেবে গড়ে তুলবে। আধুনিক শিক্ষায় সুশিক্ষিত হবে। আমি জানি, করোনাভাইরাসের কারণে স্কুল বন্ধ। এটা সত্যি, যেকোনো শিশুর জন্য তা খুব কষ্টকর। হয়তো এ অস্বাভাবিক অবস্থা থাকবে না। তবু আমি তাদের বলব, মনোযোগ দিয়ে লেখাপড়া করতে হবে।
বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে উলেস্নখ করে তিনি আরও বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এই দেশ স্বাধীন করে গেছেন। ৩০ লাখ শহীদ রক্ত দিয়েছেন। দুই লাখ মা-বোন যে অবদান রেখেছেন, সে কথা আমাদের সবসময় মনে রাখতে হবে। অনেক রক্তের মধ্য দিয়ে আমরা স্বাধীনতা অর্জন করেছি। এই স্বাধীনতার সুফল প্রত্যেক মানুষের ঘরে ঘরে পৌঁছবে।
ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে গণভবন থেকে শেখ রাসেলের বিদ্যালয় ইউনিভার্সিটি ল্যাবরেটরি স্কুল অ্যান্ড কলেজ প্রাঙ্গণে শহীদ শেখ রাসেলের ‘মু্যরাল’ উন্মোচন করেন এবং ‘শহীদ শেখ রাসেল ভবন’ উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী। শহীদ শেখ রাসেলের ওপর নির্মিত এনিমেটেড ডকুমেন্টারি ‘বুবুর দেশ’ প্রদর্শনী এবং শেখ রাসেলের জীবনীর ওপর প্রকাশিত বই ‘শেখ রাসেল আমাদের আবেগ’ ও ‘স্মৃতির পাতায় শেখ রাসেল’ শীর্ষক দুটি বইয়ের মোড়কও উন্মোচন করেন। শেখ রাসেল শিশু-কিশোর সংসদের উদ্যোগে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আয়োজিত অনুষ্ঠান থেকে প্রচারিত ‘শেখ রাসেল জাতীয় শিশু-কিশোর পরিষদের কার্যক্রম সংক্রান্তত্ম ভিডিওচিত্র অবলোকন করেন প্রধানমন্ত্রী। এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ প্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের পুরস্কার বিতরণ, শিক্ষাবৃত্তি প্রদান এবং দরিদ্র ও মেধাবী ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে ল্যাপটপ বিতরণসহ অন্যান্য কার্যক্রমে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে অংশগ্রহণ করেন তিনি।