ডেস্ক নিউজ
পদ্মা সেতু ঘিরে শরীয়তপুরে চলছে নানা উন্নয়নমূলক কর্মযজ্ঞ। পাল্টে যাচ্ছে এক সময়ের অবহেলিত, অনুন্নত এই জেলার চিত্র। পদ্মা সেতুর পাশেই জাজিরার নাওডোবাতে চলছে শেখ হাসিনা তাঁতপল্লীর নির্মাণ কাজ। এ শিল্প গড়ে উঠলে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে প্রায় ১০ লাখ লোকের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে।
জানা গেছে, পদ্মা সেতুর জাজিরা প্রান্তে তাঁতপল্লী গড়ে তোলার লক্ষ্যে ১২০ একর জমি অধিগ্রহণ করেছে সরকার। এর মধ্যে শরীয়তপুর অংশে নাওডোবাতে ৬০ একর ও মাদারীপুরের শিবচরে ৬০ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। এক হাজার ৯১১ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণ কাজ করছে বাংলাদেশ তাঁত বোর্ড (বিএইচবি)। শরীয়তপুর অংশে শেখ হাসিনা তাঁতপল্লী নির্মাণ প্রকল্পের সাইট ম্যানেজার জুয়েল মোড়ল বলেন, শরীয়তপুর অংশে নাওডোবাতে ভূমি ভরাটের মাধ্যমে চলতি বছরের জানুয়ারি মাস থেকে চলছে ভূমি উন্নয়ন ও সীমানা প্রাচীর নির্মাণ কাজ। এরপর শুরু হবে অবকাঠামো উন্নয়নের কাজ। এ প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ৩০৭ কোটি ৪৫ লাখ টাকা। যেখানে তাঁতশিল্পের সঙ্গে থাকবে তাঁতিদের আবাসন ব্যবস্থা। তাঁতিদের কর্মসংস্থান, দক্ষতা বৃদ্ধি, পণ্যের গুণগত মান উন্নয়ন, বাজারজাতকরণ, পণ্যের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত, দেশীয় ও আন্তর্জাতিক বাজারে তাঁতবস্ত্র সরবরাহের মাধ্যমে তাঁতিদের জীবনমান উন্নয়নের লক্ষ্য নিয়েই গড়ে উঠছে শেখ হাসিনা তাঁতপল্লী।
জানা গেছে, প্রকল্পটির আওতায় তাঁতিদের কাপড় বোনা থেকে শুরু করে সব ধরনের সুবিধা দেয়া হবে। তাঁতিদের জন্য থাকবে আবাসিক ভবন, তাঁত শেড, ডরমেটরি, রেস্ট হাউস, সাইবার ক্যাফে ও বিদ্যুতের উপকেন্দ্র। তাঁতপল্লীতেই সপ্তাহে দুইদিন তাঁত পণ্যের হাট বসানোর পরিকল্পনা রয়েছে। সে হাটে সুতাসহ সব ধরনের কাঁচামাল বিক্রয় ও প্রদর্শন করা হবে। তাঁতের কাপড় বোনা থেকে শুরু করে পোশাক তৈরি ও বিক্রি পর্যন্ত সব ব্যবস্থাই করা হবে প্রকল্পের আওতায়। বিসিকের মাধ্যমে মূলত তাঁতিদের সংগঠিত করা হবে। দেশের যেসব স্থানে তাঁতিরা দুরবস্থার মধ্যে আছে তারা অগ্রাধিকার পাবেন। এছাড়া এই পল্লীতে বিলুপ্ত প্রায় বিভিন্ন তাঁতশিল্পকে পুনরুজ্জীবিত করার উদ্যোগও গ্রহণ করা হবে।
শরীয়তপুরের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী, সদর উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান ও জেলা চেম্বার্স অব কমার্সের ভাইস প্রেসিডেন্ট ফারুক আহম্মেদ তালুকদার বলেন, পদ্মার পাশে নাওডোবাতে তাঁতশিল্প গড়ে উঠলে এখানে নিশ্চিতভাবেই ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার ঘটবে। এখানে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে বিনিয়োগকারীরা আসবেন এবং এলাকাটি একটি পূর্ণাঙ্গ বাণিজ্যিক এলাকায় পরিণত হবে।
শরীয়তপুর পৌরসভার মেয়র এ্যাডভোকেট পারভেজ রহমান জন বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্যোগে পদ্মা সেতু নির্মাণ হওয়ার কারণেই পিছিয়ে থাকা শরীয়তপুরে আজ নানা উন্নয়নমূলক কর্মযজ্ঞ শুরু হয়েছে। তারই ধারাবাহিকতায় নির্মাণ করা হচ্ছে শেখ হাসিনা তাঁতপল্লী। যেখানে শরীয়তপুর-মাদারীপুরসহ দেশের বিভিন্ন এলাকার লাখ লাখ বেকার মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে।
জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ছাবেদুর রহমান খোকা সিকদার বলেন, শেখ হাসিনা তাঁতপল্লী গড়ে উঠলে এ অঞ্চলে ব্যবসা-বাণিজ্যের নতুন দ্বার উন্মোচন হবে। দেশে বিলুপ্তির পথে থাকা ঐতিহ্যবাহী একটি শিল্পের ব্যাপক প্রসার ঘটবে। এর ফলে উন্নত হবে দেশের তাঁতশিল্প। জীবন মান উন্নয়ন ঘটবে তাঁতিদের। একই সঙ্গে এ অঞ্চলের মানুষের ভাগ্য উন্নয়ন ঘটবে। স্থানীয় মানুষের জন্য সৃষ্টি হবে নতুন নতুন কর্মসংস্থান।