ডেস্ক নিউজ
২০০৪ সালের ২১ আগস্ট। তারেক জিয়ার পরিকল্পিত গ্রেনেড হামলা মঞ্চস্থ হয়ে যায়। মূল পরিকল্পনা করেছিলেন তারেক জিয়া হাওয়া ভবনে বসে। এই পরিকল্পনার লক্ষ্য ছিল একটাই শেখ হাসিনাকে হত্যা করা এবং এই হত্যাকাণ্ডের পর এটি আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দল হিসেবে চালিয়ে দেওয়া। তারপর বিচার কিভাবে ধামাচাপা দেওয়া হবে তার পরিকল্পনাও চূড়ান্ত করা হয়েছিল। এরকম একটি নিখুঁত পরিকল্পনা শেষপর্যন্ত ভেস্তে গেল। আওয়ামী লীগের সমাবেশে গ্রেনেড হামলা হলো ঠিকই কিন্তু অলৌকিকভাবে বেঁচে গেলেন শেখ হাসিনা। মানববর্ম করে শেখ হাসিনাকে রক্ষা করলেন আওয়ামী লীগের উদ্দীপ্ত নেতাকর্মীরা। তারপর শেখ হাসিনাকে নিয়ে যাওয়া হল সুধাসদনে। প্রচণ্ড গ্রেনেডের শব্দে তার কান নষ্ট হয়ে গেলো কিন্তু তিনি প্রাণে বেঁচে গেলেন। এই ঘটনা যখন ঘটছে শেখ হাসিনার গাড়ি যখন বঙ্গবন্ধু এভিনিউ থেকে ছুটে চলছে সুধাসদনের দিকে সেই সময় তারেক জিয়াকে জানানো হয় অপারেশন সাকসেসফুল বাট শেখ হাসিনা এলাইভ। তারেক জিয়া প্রথমে বিশ্বাসই করতে পারেনি কথাটা।
তারপর তিনি অপরপ্রান্তে ঊর্ধ্বতন সেই পুলিশ কর্মকর্তাকে আবার জানতে চান যে, অপারেশন সাকসেসফুল যদি হয় তাহলে শেখ হাসিনা বাঁচেন কিভাবে? অপরপ্রান্তের পুলিশ কর্মকর্তা জানান যে, এটা তাদের কাছে অবিশ্বাস্য। কিন্তু তারা নিশ্চিত শেখ হাসিনা বেঁচে আছেন এবং তিনি বঙ্গবন্ধু এভিনিউ থেকে এখন সুধাসদনের দিকে যাচ্ছেন। তারেক জিয়া অত্যন্ত উত্তেজিত হয়ে পড়েন। তার সামনে ছিল একটি গ্লাস, সেই গ্লাসটি তিনি ভেঙে ফেলেন। গ্লাসটি ছুড়ে মারেন দেয়াল ভেঙে যায়। এর পরেই তারেক জিয়া সেখানে উপস্থিত মামুনকে বলেন যে, শেখ হাসিনা বেঁচে গেছে আমাদের সর্বনাশ হচ্ছে। এই সময় তারেক জিয়াকে মামুন পরামর্শ দেন যে, তিনি যেন এখনই তার মায়ের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। তারেক তার মাকে ফোন করেন এবং এর পর পরই গিয়াসউদ্দিন আল মামুন এবং তারেক জিয়া চলে যান ক্যান্টনমেন্টের বাসভবনে। খালেদা জিয়া পুরো ব্যাপারটি তারেক জিয়ার কাছ থেকে শোনেন এবং তিনি কোনো মন্তব্য করেননি। এমনকি এই অভিযান কেন করা হলো সেই প্রশ্নও করেননি। বরং ছেলেকে বাঁচানোর জন্য কি করা যায় সেটি নিয়েই ব্যস্ত হয়ে পড়েন।
এ সময় খালেদা জিয়া ডিজিএফআইয়ের প্রধানকে টেলিফোন করেন। ফোন করেন এনএসআই প্রধানকে এবং পুলিশের আইজিকে। এর মধ্যেই বিএনপি`র কয়েকজন নেতা বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ করেন। এসময় তাদের শঙ্কা হয় যে, আওয়ামী লীগ হয়তো ব্যাপক ভাঙচুর করবে এবং এই ঘটনা সরকারের পতনও ডেকে আনতে পারে। এরকম পরিস্থিতিতে তারেক জিয়াকে কিছুদিন দেশের বাইরে পাঠিয়ে দেওয়ার পরামর্শ দেন বিএনপি নেতৃবৃন্দ। আর এই পরামর্শ শুনে ওইদিন রাতেই দুবাই চলে যান তারেক জিয়া। তারেক জিয়া ছিলেন খুবই উত্তেজিত। ২৩ জনের মৃত্যুর পরও তারেক জিয়ার রক্তপিপাসা সেই সময় মেটেনি। বরং তারেক জিয়া খুবই ক্ষুব্ধ ছিলেন হামলাকারীদের ওপর। তারা শেখ হাসিনাকে হত্যা করতে পারেনি কেন এই নিয়ে তিনি গালমন্দ করছিলেন। এই সমস্ত তথ্য জানা যায় যখন গিয়াসউদ্দিন আল মামুন ওয়ান-ইলেভেনের সময় সামরিক গোয়েন্দাদের হাতে গ্রেফতার হন। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করার সময় গিয়াসউদ্দিন আল মামুনের বয়ানে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার এই তথ্য পাওয়া গিয়েছিল।