ডেস্ক নিউজ
শেয়ারবাজার স্থিতিশীলতা তহবিলে (সিএমএসএফ) গত বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ২০৫ কোটি টাকার নগদ অবণ্টিত লভ্যাংশ জমা হয়েছে। এর মধ্যে প্রায় সাড়ে ৪৮ কোটি টাকা এসেছে ১৩টি বেসরকারি ব্যাংক এবং ছয়টি ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে। এছাড়া বিভিন্ন কোম্পানি আরও প্রায় ১০০ কোটি টাকার চেক বা ব্যাংক ড্রাফট পাঠিয়েছে, যা জমা হওয়ার প্রক্রিয়ায়। সংশ্নিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি গত নভেম্বরে ঢাকা ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের মাধ্যমে বিভিন্ন তালিকাভুক্ত কোম্পানির কাছে থাকা অবণ্টিত নগদ লভ্যাংশের তথ্য সংগ্রহ করে। সেই তথ্য অনুযায়ী, অবণ্টিত নগদ লভ্যাংশের পরিমাণ ছিল এক হাজার ৩৫৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে ব্যাংকে জমা ছিল প্রায় ৬০০ কোটি টাকা এবং কোম্পানিগুলোর নিজস্ব নগদ ছিল ৭৫৫ কোটি টাকা।
সংশ্নিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, শুরুতে তহবিলের আকার যত বড় হবে বলে তথ্য পাওয়া গিয়েছিল, এখন মনে হচ্ছে তত বড় হবে না। আগে ধারণা ছিল, এ তহবিলের আকার (নগদ লভ্যাংশ এবং বাজারমূল্যে বোনাস শেয়ার) ২২ হাজার কোটি টাকা হতে পারে। এখন মনে হচ্ছে, এটি পাঁচ হাজার কোটি টাকা হতে পারে। বোনাস শেয়ার এখনও জমা দেওয়ার জন্য বলা হয়নি।
নিয়ন্ত্রক সংস্থা এবং স্টক এক্সচেঞ্জের কর্মকর্তারা জানান, তহবিল গঠন-সংক্রান্ত বিধিমালা অনুযায়ী, আপাতত সর্বশেষ তিন বছর ও তার বেশি সময়ের অবণ্টিত নগদ লভ্যাংশ চাওয়া হয়েছে। ফলে সব টাকা এখনই পাওয়া যাচ্ছে না। তাছাড়া অবণ্টিত লভ্যাংশ তহবিলে স্থানান্তরের আগে কোম্পানিগুলোকে বিতরণ করার সর্বাত্মক চেষ্টা করতে বলা হয়েছিল। এর পরিপ্রেক্ষিতে বিজ্ঞপ্তি দেওয়ার পর এখন অনেক শেয়ারহোল্ডার তাদের লভ্যাংশ নিয়ে যাচ্ছেন।
তালিকাভুক্ত কোম্পানি ও মিউচুয়াল ফান্ডের অবণ্টিত লভ্যাংশ (নগদ ও বোনাস শেয়ার) নিয়ে সিএমএসএফ নামে বিশেষ একটি তহবিল গঠন করে বিএসইসি। তহবিল গঠনের উদ্দেশ্য হলো অবণ্টিত লভ্যাংশ পরিচালনা ও ব্যবহারে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা এবং শেয়ারবাজার অস্থিতিশীল হলে এ তহবিল থেকে তারল্য প্রবাহ বাড়িয়ে বাজারের স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করা।
তবে গত ১৩ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত দেশের বিভিন্ন খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর অনুষ্ঠিত সমন্বয় সভায় বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে এ তহবিল গঠনের বিষয়ে আপত্তি জানানো হয়। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষ থেকে স্পষ্ট জানানো হয়, এ তহবিলে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর অংশগ্রহণের সুযোগ নেই।
এ আপত্তির বিষয়ে জানতে চাইলে গতকাল কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সংশ্নিষ্ট এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা সমকালকে বলেন, কোনো শেয়ারহোল্ডার যদি তার ডিভিডেন্ড ওয়ারেন্ট বা চেক বা ব্যাংক ড্রাফট গ্রহণ করেন এবং নিজে তা ক্যাশ না করে থাকেন, তবে সেই লভ্যাংশের টাকা শেয়ারবাজার স্থিতিকরণ তহবিল নিতে পারবে না। বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে এ কথাই বলা হয়েছে। তবে যে ডিভিডেন্ড ওয়ারেন্ট শেয়ারহোল্ডারের ঠিকানা ভুল থাকার কারণে বা অন্য কোনো কারণে বিতরণই করা যায়নি, সেই লভ্যাংশের টাকা বিশেষ তহবিলে নিতে আপত্তি নেই কেন্দ্রীয় ব্যাংকের।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, এখানে সমস্যা তৈরি করেছে বিএসইসির এ তহবিল গঠন-সংক্রান্ত বিধিমালা। সেখানে অবণ্টিত (আনক্লেইমড) লভ্যাংশ এবং বিতরণে ব্যর্থ (আনডিসবার্সড) লভ্যাংশ গুলিয়ে ফেলা হয়েছে। এ দুই লভ্যাংশ এক নয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের আপত্তি এখানেই। শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির সংশ্নিষ্ট এক কর্মকর্তাও কেন্দ্রীয় ব্যাংক কর্মকর্তার ব্যাখ্যায় একমত পোষণ করেছেন। তিনি সমকালকে বলেন, ওয়ারেন্ট বা চেক বা ব্যাংক ড্রাফট যদি শেয়ারহোল্ডার গ্রহণ করে ব্যাংকে জমা না দেন, তবে ওই টাকা ব্যাংক কোম্পানি আইন অনুযায়ী স্থিতিশীলকরণ তহবিলে আনা যাবে না। কমিশন ওই টাকা চাচ্ছেও না।
তহবিলের সর্বশেষ অবস্থা :বৃহস্পতিবার পর্যন্ত শেয়ারবাজার স্থিতিশীলকরণ তহবিলে তালিকাভুক্ত ৭১ কোম্পানি, ১৪ মিউচুয়াল ফান্ড এবং একটি সম্পদ ব্যবস্থাপক কোম্পানি তার ব্যবস্থাপনাধীন বিভিন্ন মিউচুয়াল ফান্ডের অবণ্টিত লভ্যাংশ হিসেবে মোট ২০৫ কোটি টাকা জমা করেছে। একক কোম্পানি হিসেবে সর্বাধিক ২৩ কোটি ৮৬ লাখ টাকা জমা করেছে স্কয়ার ফার্মা। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ১৫ কোটি ৭৩ লাখ টাকা জমা দিয়েছে অলিম্পিক ইন্ডাস্ট্রিজ। তৃতীয় সর্বোচ্চ ১১ কোটি ৯৭ লাখ টাকা জমা করেছে গ্রামীণফোন। এর বাইরে ইসলামী ব্যাংক নয় কোটি ৭০ লাখ টাকা, বেক্সিমকো ফার্মা ছয় কোটি ৪৩ লাখ টাকা, ইস্টার্ন ব্যাংক সোয়া ছয় কোটি টাকা, মার্কেন্টাইল ব্যাংক পাঁচ কোটি ৮৩ লাখ টাকা, ইউসিবি পাঁচ কোটি ৫৬ লাখ টাকা, স্কয়ার টেক্সটাইল চার কোটি ৫৭ লাখ টাকা, এসিআই লিমিটেড চার কোটি ২০ লাখ টাকা ও লাফার্জ-হোলসিম চার কোটি ১৯ লাখ টাকা এ তহবিলে জমা দিয়েছে। এর বাইরে আইসিবি অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি ২০ কোটি ৪২ লাখ টাকা জমা করেছে।