ডেস্ক নিউজ
করোনা ভাইরাসের পর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বৈশ্বিক সংকট তৈরি করেছে। তবে ডি-৮ ভুক্ত দেশগুলো একে অন্যকে সহযোগিতা করলে এ সংকট নিরসন সম্ভব বলে মনে করেন ‘ডি-৮ সিসিআই বিজনেস ফোরাম এন্ড এক্সপো-২০২২’ এ অংশ নেয়া বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিরা। তারা বলেছেন, এতে সবাই একটি উইন উইন সিচুয়েশনে থাকতে পারবে। গতকাল মঙ্গলবার ডি-৮ সদস্য দেশগুলোর মধ্যে পারস্পরিক সহযোগিতা বিনিময় ও একসঙ্গে কাজ করার কৌশল নির্ধারণে ঢাকায় শুরু হওয়া উচ্চ পর্যায়ের ব্যবসায়িক সংলাপ ও এক্সপোর উদ্বোধনী অধিবেশনে এ অভিমত ব্যক্ত করা হয়। দুদিনব্যাপী এ আয়োজনে বাংলাদেশ, মিসর, ইন্দোনেশিয়া, ইরান, মালয়েশিয়া, নাইজেরিয়া, পাকিস্তান ও তুরস্কের চেম্বারস অব কমার্সের সভাপতি ও ব্যবসায়ী নেতারা অংশ নিয়েছেন। এবারের ফোরাম সংলাপে বাংলাদেশসহ অন্য সদস্য
দেশগুলোর মধ্যকার ভ্যালু চেইনের ছয়টি এবং ভ্যালু চেইন ইন্টিগ্রেশনের ১৩টি বৃহৎ ক্ষেত্রের সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা করা হয়।
উদ্বোধনী আলোচনায় সদস্য দেশগুলোর যে শীর্ষ ব্যবসায়ী নেতারা অংশ নিয়েছেন তারা প্রত্যেকেই বিশ্ব সংকটের কথা তুলে ধরেন। প্রায় প্রতি দেশের পক্ষ থেকে বাণিজ্য প্রতিনিধিরা জানান, এসব দেশে ডলারের বিপরীতে স্থানীয় মুদ্রার ব্যাপক দরপতন হয়েছে। এটি এক ধরনের বাড়তি ঝুঁকির তৈরি করেছে। এসব সংকট সমাধানের ক্ষেত্রেও পারস্পরিক সহযোগিতা একটি বড় ভূমিকা পালন করতে পারে।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন। এছাড়া বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি, প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, ডি-৮ সিসিআই সভাপতি শেখ ফজলে ফাহিম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
সংস্থাটির রজতজয়ন্তী উপলক্ষে রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলে এ আন্তর্জাতিক ব্যবসায়িক সংলাপ ও এক্সপোর আয়োজন করা হয়। ডি-৮ সম্মেলনের যে বাণিজ্যিক প্রতিনিধিরা এ এক্সপোতে অংশ নিয়েছেন, তারা তাদের দেশের উৎপাদিত পণ্যদ্রব্য প্রদর্শন করেছেন। অংশ নেয়া দেশগুলোয় যে দেশ যেসব প্রযুক্তি বা পণ্যে বেশি সক্ষম, তারা সে বিষয়গুলো এক্সপোতে ফুটিয়ে তুলেছেন। এভাবে আটটি দেশই ভিন্ন ভিন্ন স্টলের মাধ্যমে তাদের বাণিজ্যিক সম্ভাবনা এবং বাণিজ্যিক অর্জনগুলো তুলে ধরে।
উন্নয়নের ধারাকে বেগবান করতে ডি-৮ সদস্য দেশগুলোকে একসঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানিয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্যে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন বলেন, আগামী ১০ বছরে নিজেদের মধ্যে আরো ১ দশমিক ৩ ট্রিলিয়ন বাণিজ্য বাড়ানোর সুযোগ আছে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ আমাদের আরো ভালোভাবে শিখিয়ে দিচ্ছে, কেন নিজেদের মধ্যে পারস্পরিক শক্তি, ব্যবসা ও বোঝাপড়া বাড়াতে হবে। তিনি বলেন, বৈশ্বিক অর্থনৈতিক অবস্থা বিবেচনায় বাংলাদেশ ভালো করছে। উৎপাদন, শিল্প, সেবা, কৃষি, রপ্তানি তথা জিডিপি প্রবৃদ্ধি সব দিক থেকে বাংলাদেশ করোনা মহামারি ও ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ পরিস্থিতির মধ্যেও ভালো অবস্থানে আছে। আরো ভালো করতে চায় বাংলাদেশ। এজন্য ডি-৮ সদস্য দেশগুলো বাংলাদেশের এ উন্নয়ন ধারায় সম্পৃক্ত হয়ে একসঙ্গে কাজ করতে পারে। যার মাধ্যমে পারস্পরিক অভিজ্ঞতা, তথ্য বিনিময় ও সেবা সরবরাহের ক্ষেত্র আরো সহজ হতে পারে।
বাংলাদেশ এখন বিনিয়োগের কেন্দ্রবিন্দু উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান বলেন, উৎপাদনে এখন বাংলাদেশ বিশ্বের নতুন সম্ভাবনা। প্রতি বছর গড়ে ৬ শতাংশের বেশি প্রবৃদ্ধি হচ্ছে। করোনাও এই প্রবৃদ্ধিকে দমাতে পারেনি। এটি সম্ভব হয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার যোগ্য নেতৃত্বের কারণে। বিশ্বের অনেক দেশের তুলনায় বাংলাদেশ অতি ঘনবসতিপূর্ণ দেশ হওয়া সত্ত্বেও ধান, শাকসবজি, মাছ ও প্রাণিসম্পদ উৎপাদনে শীর্ষ দেশের তালিকায় এখন বাংলাদেশের নাম। এখানে ভোক্তা বেশি, চাহিদা বেশি। তাই উৎপাদন এবং আমদানিও বেশি। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ পরিস্থিতিতে বিশ্বব্যাপী সৃষ্ট সংকটে ডি-৮ সদস্য দেশগুলো বাংলাদেশের এ উন্নয়ন অগ্রগতির অংশীদার হতে একত্রে কাজ করতে পারে। ভবিষ্যৎ বাংলাদেশে আছে ডিজিটাল বিপ্লবের বিরাট সম্ভাবনা।
বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেন, বৈশ্বিকভাবে এখন যে সংকট শুরু হয়েছে, এই সংকটে একমাত্র সমাধান হলো অভ্যন্তরীণ উৎপাদন বৃদ্ধি এবং ফোরামভুক্ত দেশগুলোর পারস্পরিক সহযোগিতায় এগিয়ে আসা। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ করোনা মহামারির মতো সংকট কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হয়েছে। ডি-৮ সদস্যভুক্ত দেশগুলোর টেকসই ব্যবসা প্রসারে টেকসই ও শক্তিশালী ভ্যালুচেইন তৈরিতে বিটুবি ও জিটুজি ভিত্তিতে যেটা যে ফরম্যাটে দরকার, তাই করতে প্রস্তুত সরকার। বাণিজ্যমন্ত্রী বাংলাদেশের বিনিয়োগ সম্ভাবনার কথা তুলে ধরে এই সময় ডি-৮ সদস্য উদ্যোক্তাদের বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অঞ্চল ও হাইটেক পার্কে বিনিয়োগের আহ্বানও জানান।
পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেন, উচ্চ পর্যায়ের ব্যবসায়িক সংলাপ ডি-৮ সদস্যভুক্ত দেশগুলোর পারস্পরিক বাণিজ্য বিনিয়োগ ও সহযোগিতার ক্ষেত্র আরো সম্প্রসারিত করবে। তিনি বাংলাদেশের রাজনীতি ও অর্থনীতির নানা দিক তুলে ধরে বাংলাদেশে বিনিয়োগের আহ্বান জানান।