ডেস্ক নিউজ
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তাঁর সরকার গণতন্ত্রকে নিরাপদ এবং আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা ও সবার জন্য ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে কাজ করে যাচ্ছে।
গতকাল গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের নবনির্মিত আধুনিক সুযোগ-সুবিধা সংবলিত ১২ তলা ভবন ‘বিজয় একাত্তর’ উদ্বোধনকালে তিনি এ কথা বলেন। নগরীর সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে এ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের নবনির্মিত ১২ তলা ভবনের একটি প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শিত হয়। প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী, আইন বিচার ও সংসদ বিষয়কমন্ত্রী আনিসুল হক এবং অ্যাটর্নি জেনারেল আবু মোহাম্মদ আমিন উদ্দীন অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন। আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. গোলাম সারোয়ার অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন। সাবেক প্রধান বিচারপতি, সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি এবং বিশিষ্ট আইনজীবীরা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে- গণতন্ত্রকে সুরক্ষা এবং দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করা, যাতে জনগণ ন্যায়বিচার পায়। তাঁর সরকার সব শ্রেণি-পেশার মানুষের জন্য ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার চেষ্টা করে যাচ্ছে। বিচার বিভাগের সার্বিক উন্নয়নের জন্য তাঁর সরকারের গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, নির্যাতিত নারী, শিশু এবং এসিড হামলার শিকারসহ সবাই যাতে সুবিচার পায় আমরা সে লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছি। সংবিধানের ১১৬ অনুচ্ছেদ বাস্তবায়নের জন্য গৃহীত পদক্ষেপের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, তাঁর সরকার বিচার বিভাগের জন্য আলাদা বাজেট বরাদ্দ করেছে এবং বিচার বিভাগকে নির্বাহী বিভাগ থেকে পৃথক করার জন্য প্রয়োজনীয় বিধিমালা প্রণয়ন করেছে। সরকারপ্রধান বলেন, ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় আসার পর বিচার বিভাগকে আরও শক্তিশালী করতে এবং সংবিধানের কার্যকারিতা নিশ্চিত করার উদ্যোগ নিয়েছেন। দেশের সংবিধান লঙ্ঘন করে রাষ্ট্রক্ষমতা দখলকারী সরকারগুলোকে অবৈধ ঘোষণা করে রায় দেওয়ার জন্য বিচারপতিদের সাধুবাদ জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, আমি ব্যক্তিগতভাবে বিশ্বাস করি, এ রায়ে বাংলাদেশের জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকার সুরক্ষিত হয়েছে। তিনি বলেন, সরকার জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকাে র এবং যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করে জনগণকে দায়মুক্তির সংস্কৃতি থেকে মুক্তি দিয়েছে। তিনি বলেন, জনগণের ম্যান্ডেট নিয়ে আমরা দায়মুক্তির সংস্কৃতি বন্ধ করতে সক্ষম হয়েছি। বঙ্গবন্ধুর হত্যার বিচারের পথ বন্ধ করতে ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ জারি করে সামরিক স্বৈরশাসক জিয়াউর রহমানের সরকার দায়মুক্তির সংস্কৃতি চালু করে। শেখ হাসিনা বলেন, জিয়াউর রহমান বঙ্গবন্ধুর খুনিদের দায়মুুক্তি দিয়ে পুরস্কার হিসেবে বিদেশি মিশনসমূহে নিয়োগ দেন এবং একইসঙ্গে জেল থেকে মুক্ত করে যুদ্ধাপরাধীদের রাজনীতিতে প্রতিষ্ঠিত করেন। জিয়াউর রহমানের স্ত্রী খালেদা জিয়াও স্বামীর পথ অনুসরণ করেন। প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু হত্যাকাে র বিচারের রায় দেওয়ায় নিম্ন ও উচ্চ আদালতের বিচারকদের ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, বিচারকদের সাহসী ভূমিকার কারণে আমরা ন্যায় বিচার পেয়েছি এবং রায় বাস্তবায়ন করতে সক্ষম হয়েছি।
শেখ হাসিনা তাঁর ছয় বছরের জোরপূর্বক নির্বাসিত জীবনের পর দেশে ফেরার কথা তুলে ধরে বলেন, ইনডেমনিটি অধ্যাদেশের কারণে তখন এমনকি তিনি ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু এবং তাঁর পরিবারের অধিকাংশ সদস্যকে হত্যাকাে র জন্য একটি মামলা দায়ের করতেও পারেননি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, পাকিস্তানি স্বৈরশাসক আইয়ুব খানের পথ ধরে জিয়া অবৈধভাবে ক্ষমতায় আসেন। আর জিয়াউর রহমানের পথ ধরে ক্ষমতায় আসেন এরশাদ। জিয়ার শাসনকালে প্রায় ১৯ থেকে ২০ বার অভ্যুত্থান ঘটে এবং এর শিকার হয়েছে সশস্ত্র বাহিনীর কর্মকর্তা, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ এবং জনগণ। তিনি প্রয়োজনীয় আইন চালুসহ অবকাঠামো নির্মাণ, বিচারকদের বেতন বৃদ্ধি ও নিরাপত্তা নিশ্চিতসহ আওয়ামী লীগ সরকারের নেওয়া নানা পদক্ষেপের কথা তুলে ধরে বলেন, আমরা চাই বাংলাদেশ সঠিক পথে এগিয়ে যাক এবং জনগণ ন্যায় বিচার পাক। সরকারপ্রধান বলেন, সরকার বিচার বিভাগের ডিজিটালাইজেশন সম্পূর্ণ করতে তাঁর তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়ের তত্ত্বাবধানে একটি প্রকল্প গ্রহণ করেছে। তিনি বলেন, দেশজুড়ে বিশেষায়িত বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠায় সরকারের উদ্যোগের অংশ হিসেবে তারা একটি ‘ল ইউনিভার্সিটি’ প্রতিষ্ঠা করতে যাচ্ছেন। এ ইউনিভার্সিটির জন্য একটি যথাযথ শিক্ষানীতি প্রণয়নে বিচারক ও আইনজীবীদের সহায়তা প্রয়োজন হবে। শেখ হাসিনা জানান, তিনি ইতোমধ্যে অর্থমন্ত্রীকে আদালত সংক্রান্ত নথি নিরাপদে রাখতে একটি রেকর্ড রুম তৈরিতে অর্থ বরাদ্দ দিতে বলেছেন। প্রধানমন্ত্রী হার্ড কপি ও সফট কপি নথি সংরক্ষণের প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্বারোপ করেন। তিনি বলেন, সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে একটি আধুনিক মসজিদ নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাঁর সরকার সারা দেশের আইনজীবীদের জন্য আরও ভালো ব্যবস্থা করার কথা ভাবছে, যে রকম ৬৪টি জেলা আদালতের সবকটির আধুনিকায়ন করা হয়েছে। তিনি বলেন, সরকার আইনজীবীদের জন্য বার কাউন্সিল ভবন নির্মাণ করছে। শেখ হাসিনা বলেন, যারা বিচার চাইতে অপারগ তাদের আইনি সেবা দিতে সরকার ‘দ্য লিগ্যাল এইড সার্ভিসেস অ্যাক্ট-২০০০’ প্রণয়ন করেছে। প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী বলেন, বিচারকরা সাধ্যমতো চেষ্টা করছেন তাদের সততা, মেধা ও শ্রম দিয়ে মামলার জট ছাড়িয়ে দুর্দশাগ্রস্ত বিচারপ্রার্থীদের আদালত প্রাঙ্গণ থেকে যত দ্রুত সম্ভব বাড়ি ফেরাতে। আমি প্রত্যেক বিচারক এবং অন্যান্য কর্মকর্তা-কর্মচারীকে নির্দেশ দিয়েছি সবার সঙ্গে মানবিক আচরণ করতে। আদালত প্রাঙ্গণে মানুষের দুর্দশার সুযোগ নেওয়া কখনোই বরদাস্ত করা হবে না। সভাপতির বক্তব্যে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, বর্তমান সরকারের যুগান্তকারী ও বাস্তবমুখী পদক্ষেপ গ্রহণের ফলে সুপ্রিম কোর্টের কর্মদক্ষতা, সক্ষমতা ও সেবার মান অতীতের যে কোনো সময়ের তুলনায় কয়েকগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। সে জন্য আমরা এখন আশাবাদী সুপ্রিম কোর্টে বিচারপ্রার্থী জনগণ দ্রুত ন্যায়বিচার পাবেন এবং এর মাধ্যমে সেখানে মামলা জট কমে আসবে।