ডেস্ক নিউজ
কোনো ভিআইপি নভেল করোনাভাইরাসে (কোভিড-১৯) আক্রান্ত হলে তার চিকিৎসা আলাদা হাসপাতালে হবে— এমন তথ্য অস্বীকার করেছে সরকারের তথ্য ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, দেশের সব নাগরিকের জন্য সমান ব্যবস্থা থাকবে। ভিআইপি বলে কেউ আলাদা সুবিধা পাবেন না। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজে সবার জন্য সমান স্বাস্থ্যব্যবস্থা নিশ্চিত করার নির্দেশনা দিয়েছেন।
বুধবার (২২ এপ্রিল) রাতে সরকারের প্রধান তথ্য কর্মকর্তা সুরথ কুমার সরকার সারাবাংলাকে বলেন, ভিআইপিদের জন্য আলাদা চিকিৎসা ব্যবস্থা থাকবে— এরকম খবর গণমাধ্যমে এসেছে। এ তথ্য সঠিক নয় এবং তথ্যগুলো অতিরঞ্জিত। ভিআইপিদের করোনা চিকিৎসার জন্য আলাদা কোনো সুবিধা তৈরি করা হয়নি। এমন কোনো পরিকল্পনা সরকারের নেই।
সরকারের প্রধান তথ্য কর্মকর্তা আরও বলেন, বিভিন্ন দেশের দূতাবাসের কর্মকর্তারা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছে জানতে চেয়েছিলেন, করোনা সংক্রান্ত চিকিৎসার জন্য তারা কোথায় যাবেন। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিষয়টি নিয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিল। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে শেখ রাসেল গ্যাস্ট্রোলিভার ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল এবং অ্যাপোলো হাসপাতালের কথা বলা হয়েছিল। কিন্তু এর অর্থ এই না যে এই হাসপাতালে ভিআইপিদের জন্য আলাদা কোনো চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
এ বিষয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (প্রশাসন) হাবিবুর রহমান খানের সঙ্গেও বুধবার রাতে কথা হয় সারাবাংলার। তিনি বলেন, সবার জন্য সমান স্বাস্থ্যব্যবস্থা নিশ্চিত করতে নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ ক্ষেত্রে কারও সঙ্গে বৈষম্য করা হবে না। মন্ত্রী, এমপি, আমলা— সবার জন্য একই ব্যবস্থা থাকবে। কোভিড-১৯ রোগে সরকারিভাবে চিকিৎসা নিতে গেলে সবার জন্য একই বিনামূল্যের চিকিৎসা হবে।
কূটনীতিকদের প্রসঙ্গে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের এই অতিরিক্ত সচিব বলেন, তারা যদি উন্নততর হাসপাতালে গিয়ে কোনো চিকিৎসা নেন, সেটা নিতেই পারেন। কিন্তু সেটার জন্য তাদের অর্থ খরচ করতে হবে। একইভাবে উচ্চবিত্ত কেউ যদি সরকার নির্ধারিত কোভিড-১৯ হাসপাতালে না গিয়ে বেসরকারি হাসপাতালে যেতে চান, যেতে পারেন। ওইসব হাসপাতাল যদি আলাদা ইউনিট খুলে টাকার বিনিময়ে কোভিড-১৯ রোগীদের চিকিৎসা দেয়, সেখানে তো সরকার বাধা দেবে না। কিন্তু সরকারিভাবে করোনাভাইরাসে আক্রান্তদের চিকিৎসা সবার জন্য সমান হবে। কারণ প্রধানমন্ত্রীর কাছে দেশের প্রতিটি মানুষের জীবন গুরুত্বপূর্ণ।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (স্বাস্থ্য ও শিক্ষা) অধ্যাপক ডা. মো. আবু ইউসুফ ফকিরের বরাত দিয়ে যে তথ্য গণমাধ্যম এসেছে— এ বিষয়ে হাবিবুর রহমান খান বলেন, তিনি প্রকৃতপক্ষে স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সঙ্গে যুক্ত নন। কিন্তু কোভিড-১৯ নিয়ে কাজগুলো হচ্ছে স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ থেকেই। তিনি না জেনেই বক্তব্য দিয়েছেন। ভুল বার্তা দেওয়া বিষয়ে তিনি দুঃখপ্রকাশও করেছেন।
প্রধানমন্ত্রীর উপপ্রেস সচিব হিসেবে আশরাফুল আলম খোকন সারাবাংলাকে বলেন, ভিআইপিদের আলাদাভাবে চিকিৎসা দেওয়ার খবর প্রকাশ পেলে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর সঙ্গে যোগাযোগ করি। তিনি নিশ্চিত করেছেন, এ ধরনের কোনো পরিকল্পনা সরকারের ছিল না, এখনো নেই এবং ভবিষ্যতেও থাকবে না।
আশরাফুল আলম খোকন আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রী চিকিৎসা করাতে গিয়ে নিজেই কখনো ভিআইপি সুবিধা নেন না। গত জানুয়ারিতেও তিনি রাজধানীর জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে চোখের চিকিৎসা নিয়েছেন ১০ টাকা দিয়ে টিকেট কেটে। প্রধানমন্ত্রী নিজেই সবার সমান চিকিৎসার কথা বলেন সবসময়।