ডেস্ক নিউজ
মাদ্রাসাগুলোতে জাতীয় দিবস পালনের রীতি না থাকলেও সরকার সেখান থেকে এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে বের করে আনতে চাইছে। আগামী ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবসের আনুষ্ঠানিকতা পালনের বাধ্যবাধকতা জারি করা হয়েছে।
এবার অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মতো দেশের প্রতিটি সরকারি ও বেসরকারি মাদ্রাসায় যথাযোগ্য মর্যাদায় মহান বিজয় দিবস পালনের নির্দেশ দিয়েছে মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তর।
সোমবার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের সিনিয়র সহকারী সচিব ফুয়ারা খাতুনের সই করা আদেশে এই নির্দেশ দেয়া হয়।
শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী এই নির্দেশ জারির করার বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে। তবে এটি আলিয়ার পাশাপাশি কওমি মাদ্রাসার জন্যও প্রযোজ্য হবে কি না, এ বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
এই নির্দেশনায় নতুন জাতীয় পতাকা উত্তোলন, বীর মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্মগাঁথা ইতিহাস শিশু কিশোরদেরকে শোনানো, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে নানা অনুষ্ঠান, এমনকি মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক সিনেমা প্রদর্শন করতেও বলা হয়েছে।
বিজয় দিবস পালন সংক্রান্ত শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কোন অফিস আদেশ পাননি বলে জানান কওমি মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড- বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশের মহাপরিচালক মাওলানা মোহাম্মদ জুবায়ের। তিনি বলেন, ‘এখন পর্যন্ত এ সংক্রান্ত কোনো অফিস আদেশ পাইনি।’
অফিস আদেশ পেলে কওমি মাদ্রাসায় বিজয় দিবস পালনের উদ্যোগ নেয়া হবে কি না এমন প্রশ্নে তিনি রাগান্বিত হয়ে বলেন, ‘ফোন রাখেন।’
এরপর তিনি নিজেই ফোনলাইন কেটে দেন।
বাংলাদেশে কওমি বা আলিয়া- কোনো ধরনের মাদ্রাসাতেই জাতীয় দিবস পালনের চল নেই। জাতীয় সঙ্গীত গাওয়ার ব্যাপারেও আপত্তি আছে বহু জনের।
তবে গত বছর বেশ কিছু কওমি মাদ্রাসায় জাতীয় দিবস পালিত হতে দেখা গেছে।
গত বছর বিজয় দিবসে একটি কওমি মাদ্রাসার এই ছবিটি ভাইরাল হয়েছিল
গত বছর বিজয় দিবসে জাতীয় স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা জানিয়েছে ধামরাইয়ের মাদ্রাসাতুল আল-নুর থেকে একদল শিক্ষার্থী।
কয়েক দশক আগে শেখ মুজিবুর রহমান ছাড়া সম্বোধন না করলেও ইদানীং জাতির পিতাকে বঙ্গবন্ধু বলা হচ্ছে প্রকাশ্যেই। একসময় কঠোর নিন্দা করলেও প্রশংসা করা হচ্ছে তার।
আরও কয়েকটি ছবি সে বছর সামাজিক মাধ্যমে ব্যাপক আকারে ছড়ায়। এগুলোতে দেখা যায়, কওমি মাদ্রাসার শিশুরা তাদের বুকে জাতীয় পতাকা নিয়ে পড়াশোনা করছে।
আবার জাতীয় পতাকা নিয়ে কওমি শিশুদের মিছিলও দেখা গেছে গতবারের বিজয় দিবস এবং চলতি বছরের স্বাধীনতা দিবসে।
কলরব নামে একটি শিল্পী গোষ্ঠীর দেশাত্মবোধক গানও ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছিল গত বিজয় দিবসে।
বাদ্যযন্ত্র ছাড়া চরমোনাইয়ের পীরপন্থি ‘কলরব শিল্পী গোষ্ঠী’র গাওয়া খান আতাউর রহমানের লেখা ও সুর করা ‘এক নদী রক্ত পেরিয়ে/ বাংলার আকাশে রক্তিম সূর্য আনলে যারা/তোমাদের এই ঋণ কোনো দিন শোধ হবে না’ গানের ভিডিওটি ব্যাপকভাবে ছড়ায় সে সময়।
শিল্পীগোষ্ঠীর শিশু কিশোর বিভাগের পরিচালক আবু রায়হান নিউজবাংলাকে জানিয়েছেন, তারা জাতীয় সঙ্গীতও গেয়ে থাকেন।
স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, শহীদ দিবস ঘটা করে পালন হয় রাজধানীর রামপুরার হাজীপাড়ার ঝিলপারের কওমি মাদ্রাসা জামিয়া ইকরা বাংলাদেশে।
গত বছর বিজয় দিবসে ধামরাইয়ের মাদ্রাসাতুল আল-নুর থেকে একদল শিক্ষার্থী জাতীয় স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা জানায়
সেখানে সমাবেশের সময় ওড়ানো হয় জাতীয় পতাকা। সেসব দিনে স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের ওপর কবিতা আবৃত্তি, উপস্থিত বক্তৃতার আয়োজন করা হয়। এ জন্য ছাত্রদের পুরস্কৃতও করা হয়।
গত ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবসে মাদ্রাসায় করা হয় দেয়ালিকা। সেখানে বিজয় দিবস, স্বাধীনতাসহ নানা বিষয় নিয়ে লিখেছে শিক্ষার্থীরা। সেই দেয়ালিকা এখনও রয়ে গেছে সেখানে।
মুক্তিযুদ্ধের সময় মুসলিম লীগ ও জামায়াতে ইসলামীর মতো কওমি মাদ্রাসাকেন্দ্রিক রাজনৈতিক দল ও এই ঘরানার মানুষদের মধ্যেও পাকিস্তানি বাহিনীর পক্ষে কাজ করা লোক ছিল।
সে সময় এই ঘরানার দুটি রাজনৈতিক দল সারা দেশে কাজ করত। একটি নেজামে ইসলাম পার্টি, অন্যটি জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম। এর মধ্যে নেজামে ইসলাম পার্টির প্রায় পুরোটাই পাকিস্তানের পক্ষে কাজ করেছে। জমিয়তের একটি অংশ পাকিস্তানি বাহিনীর পাশে থাকলেও একটি অংশ স্বাধীনতার পক্ষে ছিল। যদিও মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেয়ার পক্ষে প্রমাণ পাওয়া কঠিন।
তবে বেশ কিছু মাজার ও এই ঘরানার সংগঠন মুক্তিযোদ্ধাদের আশ্রয়, খাবার দিয়ে সহযোগিতা করেছে।
সরকারি নির্দেশনায় যা আছে
মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তর স্টিয়ারিং কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, জেলা ও উপজেলা সদরে স্কুল কলেজ ও মাদ্রাসার ছাত্র-ছাত্রীদের জাতীয় কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ, সমাবেশ, ক্রীড়া অনুষ্ঠানের আয়োজন করতে হবে। বিকেলে নারীদের ক্রীড়া অনুষ্ঠানেরও ব্যবস্থা করতে হবে।
‘জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলা বিনির্মাণে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধারণ ও ডিজিটাল প্রযুক্তির সর্বোত্তম ব্যবহার’ শীর্ষক আলোচনা ও সিম্পোজিয়াম অনুষ্ঠানের বিষয়ে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগকে অনুরোধ জানাতে হবে।
জাতীয় পর্যায়ে রচনা ও আবৃত্তি প্রতিযোগিতার আয়োজনসহ সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের উপস্থিতিতে তাদের বীরত্বগাথা মুক্তিযুদ্ধের গুরুত্বপূর্ণ ঘটনার স্মৃতিচারণ শিক্ষার্থীদের সামনে উপস্থাপনের ব্যবস্থা করতে হবে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্টরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।
ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য বিনা টিকেটে উন্মুক্ত স্থানে মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক সিনেমা প্রদর্শন করতে হবে।
যথাযোগ্য মর্যাদায় ১৬ ডিসেম্বর, মহান বিজয় দিবস-২০২১ উদযাপন উপলক্ষে সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে নতুন জাতীয় পতাকা (বিধি মোতাবেক সঠিক মাপ ও রংয়ের) উত্তোলন করতে হবে। কোনোক্রমেই পুরনো পতাকা উত্তোলন করা যাবে না।