ডেস্ক নিউজ
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, সব ধরনের দুর্যোগ মোকাবিলা করেই বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। গতকাল গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি মুজিব কিল্লাসহ ২১৫টি উন্নয়ন কাজের উদ্বোধন ও ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনকালে তিনি এ কথা বলেন।
রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে এ সময় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ক্যাপ্টেন (অব.) এ বি তাজুল ইসলাম, মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মোহসীনসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। পরে অনলাইনে সংযুক্ত নোয়াখালীর সুবর্ণচর, বরিশালের উজিরপুর এবং গাইবান্ধার সাদুল্লাপুর উপজেলার তৃণমূলের মানুষের সঙ্গে মতবিনিময় করেন সরকার প্রধান।
আওয়ামী লীগ মানুষের জন্য রাজনীতি করে উল্লেখ করে দলীয় সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগ যখনই ক্ষমতায়
এসেছে মানুষের কল্যাণে কাজ করেছে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মাত্র সাড়ে তিন বছরের মধ্যে একটা যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশকে স্বল্পোন্নত দেশে উন্নীত করেছিলেন। আর বর্তমান সরকারের হাত ধরে দেশ সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে যাচ্ছে। তিনি বলেন, জাতির পিতা ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণে বলেছিলেন, কেউ আমাদের দাবায়া রাখতে পারবে না। বাঙালিকে কেউ দাবায়া রাখতে পারবে না, এটা আমরা বিশ্বাস করি। সঠিক দিকনির্দেশনা সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য আদর্শ নিয়ে চললে অবশ্যই বাংলাদেশের মানুষকে কেউ কখনো দাবায়া রাখতে পারবে না। মুজিববর্ষ উপলক্ষে ১০০টি বহুমুখী ঘূর্ণিঝড় আশ্রয় কেন্দ্র, ৩০টি বন্যা আশ্রয় কেন্দ্র, ৩০টি জেলা ত্রাণ গুদাম-কাম-দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা তথ্য কেন্দ্র ও ৫টি মুজিব কিল্লার উদ্বোধন এবং ৫০টি মুজিব কিল্লার ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। সরকার প্রধান বলেন, দুর্যোগের ঝুঁকি কমাতে মানুষের সচেতনতার পাশাপাশি প্রযুক্তিগত সক্ষমতাও বাড়ানো হচ্ছে। আগামীতে স্যাটেলাইটের মাধ্যমে আরও শক্তিশালী পূর্বাভাস দেওয়ার ব্যবস্থা গড়ে তোলা হচ্ছে। তিনি বলেন, আমরা আবার সতর্ক করছি, আরেকটা ঘূর্ণিঝড় কিন্তু আসছে, সেটা কেবল তৈরি হচ্ছে, সেটা কতদূর যাবে আধুনিক প্রযুক্তির কারণে অনেক আগে থেকে জানতে পেরে এরই মধ্যে সতর্কতা নিতে শুরু করা হয়েছে। সতর্ক থেকে ঝুঁকি হ্রাস করতে পারব আশা করি। ঘূর্ণিঝড় ‘ইয়াস’ থেকে রক্ষা পেতে প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। পূর্ব-মধ্য বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থানরত লঘুচাপ এবং আসন্ন ঘূর্ণিঝড় বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ইনশা আল্লাহ আমরা সতর্ক থাকব, এই ঝুঁকি হ্রাস করতে পারব। সবাইকে সচেতন ও সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, যে কোনো দুর্যোগে ঝুঁকি হ্রাসের জন্য সবাই সচেতন থাকবেন, সতর্ক থাকবেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে যারা ক্ষমতায় আসে তারা তো ঘুমিয়েই কাটাচ্ছিল। নিজেদের সম্পদ গড়তে ব্যস্ত ছিল। দেশের মানুষকে সম্পূর্ণ অবহেলা করেছে। বিপরীতে আওয়ামী লীগ যখনই ক্ষমতায় এসেছে মানুষের কল্যাণে কাজ করেছে। সমৃদ্ধ দেশ গড়ে তোলার জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছি। সব দুর্যোগ মোকাবিলা করে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। আমরা এগিয়ে যাচ্ছি। এগিয়ে যাব। সরকার প্রধান বলেন, আজকে আমরা ১২ বছর ক্ষমতায়। এর মধ্যে বাংলাদেশকে উন্নয়নশীল দেশ অর্থাৎ যে কথাটা ২০০৮ সালের নির্বাচনে ঘোষণা দিয়েছিলাম রূপকল্প-২০২১, আমরা তা বাস্তবায়ন করে বাংলাদেশকে উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়েছি। শিক্ষা, স্বাস্থ্যব্যবস্থা, অবকাঠামোর উন্নয়ন করেছি। ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দিয়েছি। ভূমিহীনদের মাঝে খাসজমি এবং ঘর তৈরি করে দিয়েছি যাতে কোনো মানুষ গৃহহারা না থাকে। এটা জাতির পিতার স্বপ্ন ছিল, আমরা সেটাই বাস্তবায়নের পথে এগিয়ে যাচ্ছি এবং করে যাচ্ছি। কাজেই বাংলাদেশের মানুষ গৃহহারা থাকবে না।
শেখ হাসিনা বলেন, ১৯৯৬ সালে যখন ক্ষমতায় আসি তখন বলেছিলাম কোনো কুঁড়েঘর থাকবে না, টিনের ঘর দিলেও দেব, দিয়েছিলাম। এখন সেমি-পাকা অথবা দুর্যোগ মোকাবিলায় সহনশীল ঘর তৈরি করে দিচ্ছি; যাতে একটা জায়গা পেলে জীবন রক্ষা পায়। বাংলাদেশ একটা বদ্বীপ, যে কারণে প্রতিনিয়ত প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলা করতে হয়। তাছাড়া বাংলাদেশে মাঝে মাঝেই মনুষ্যসৃষ্ট ?দুর্যোগ আসে। এসব মোকাবিলা করে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, দুর্যোগ হ্রাসে সরকার বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে। স্যাটেলাইটের মাধ্যমে যাতে সতর্কবার্তা পেতে পারি সেই ব্যবস্থা নিয়েছি। দুর্যোগবার্তা পেতে আরও উন্নত করতে হবে এবং আমাদের দ্বিতীয় স্যাটেলাইট যেটা করব, সেটা আরও বেশি শক্তিশালী যাতে হয়, সেদিকে বিশেষ দৃষ্টি দিয়েছি। তাছাড়া নদীভাঙন বা বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত যারা হয়, তাদের জন্য বাজেটে আলাদা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। পাশাপাশি বন্যা এলে তাদের যেন আশ্রয় দেওয়া যায়, সে ধরনের বহুমুখী দুর্যোগের জন্য ব্যবস্থা নিচ্ছি। দুর্যোগ ঝুঁকি হ্রাস করা এবং দুর্যোগের সময় যে কোনো অবস্থা যাতে মোকাবিলা করা যায়, সেটা আমরা করছি। পাশাপাশি প্রতিবন্ধীদের নিরাপত্তার দিকে নজর রেখে ভবনগুলো তৈরি করা হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, মুজিবকেল্লা উন্নতমানের করা হয়েছে। সেখানে একদিকে মানুষ যেন আশ্রয় নিতে পারে, আবার গৃহপালিত পশুপাখিগুলো যেন আশ্রয় নিতে পারে তার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। তিনি বলেন, বজ্রপাতে মানুষের যেন মৃত্যু না হয় সেদিকে দৃষ্টি দেওয়া হচ্ছে। তাছাড়া ভূমিকম্প, ভূমিধস, বজ্রপাত বা অগ্নিকা- সবকিছু থেকে মানুষকে সুরক্ষিত রাখার জন্য যা যা করণীয় সেই ব্যবস্থাগুলো আমরা করে যাচ্ছি। আমরা ইতিমধ্যে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনায় ২০২১-২০৩৫ জাতীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনা প্রণয়ন করেছি। তাছাড়া বাংলাদেশ একটা বদ্বীপ, এই বদ্বীপ অঞ্চলটার সুরক্ষার কথা মাথায় রেখে আগামী প্রজন্মের জন্য শত বছরের একটা পরিকল্পনা অর্থাৎ ২১০০ সালের জীবনযাত্রা কেমন হবে সেদিকে লক্ষ্য রেখে ডেল্টাপ্ল্যান করেছি। বদ্বীপ অঞ্চলের মানুষ যাতে সুন্দরভাবে বাঁচতে পারে, নিরাপদে বাঁচতে পারে সেই পরিকল্পনা নিয়েছি। আমাদের লক্ষ্য ছিল বাংলাদেশকে মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত করব। আল্লাহর রহমতে আজকে উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হয়েছি।