ডেস্ক নিউজ
নির্মাণযজ্ঞ শুরুর দেড় বছর পার হতে না-হতেই দৃশ্যমান হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল। সরকার বলছে, করোনার মধ্যেও কাজ অব্যাহত থাকায় নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও এগিয়ে রয়েছে দেশের প্রধান বিমানবন্দরের এই অত্যাধুনিক টার্মিনালের নির্মাণকাজ।
বেসামরিক বিমান পরিবহন মন্ত্রণালয় বলছে, সবকিছু এই গতিতে চললে নির্মাণকাজ শেষের লক্ষ্য ২০২৩-এর জুনের অনেক আগেই চালু করা যাবে তৃতীয় টার্মিনাল।
শাহজালালের তৃতীয় টার্মিনাল নির্মাণ প্রকল্পটি একনেকে অনুমোদন পায় ২০১৭ সালের ২৪ অক্টোবর। সে সময় এর নির্মাণব্যয় ধরা হয়েছিল ১৩ হাজার ৬১০ কোটি টাকা। পরে আরো ৭ হাজার ৭৮৮ কোটি ৫৯ লাখ টাকা বাড়িয়ে প্রকল্পের আকার দাঁড়ায় প্রায় ২১ হাজার ৩৯৮ কোটি টাকা। ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে প্রকল্পটির নির্মাণ শুরু হয়।
প্রকল্পটির নির্মাণব্যয়ের বেশির ভাগ আসছে জাপানি সহযোগিতা সংস্থা জাইকার কাছ থেকে। সংস্থাটি ঋণ হিসেবে দিচ্ছে ১৬ হাজার ১৪১ কোটি ২ লাখ ৪৫ হাজার টাকা। আর বাকি ৫ হাজার ২৫৮ কোটি ৩ লাখ ৮৮ হাজার টাকা দিচ্ছে বাংলাদেশ সরকার।
প্রকল্পের অগ্রগতি আশাব্যঞ্জক জানিয়ে বেসামরিক বিমান পরিবহন প্রতিমন্ত্রী মো. মাহবুব আলী নিউজবাংলাকে বলেন, ‘থার্ড টার্মিনাল নির্মাণে জড়িত জাপানি এবং কোরিয়ান যে প্রকৌশলীরা ছিলেন, তারা কোভিড শুরুর পর নিজ দেশে ফিরতে চেয়েছিলেন। কিন্তু আমরা তাদের আশ্বস্ত করি, যত সহযোগিতা প্রয়োজন, তাদের তা দেয়া হবে- চিকিৎসা থেকে শুরু করে সবকিছুই। এ কারণে তারা আর ফিরে যাননি।
‘এই কাজটি এক দিনের জন্যও বন্ধ হয়নি। এতে আমরা প্রত্যাশার চেয়েও অনেক দূর অগ্রসর হয়েছি। আমাদের মূল কাজের ১৯ ভাগেরও বেশি এরই মধ্যে শেষ। এ পর্যায়ে আমাদের ১৬ ভাগ হওয়ার কথা ছিল। আমরা মোটামুটি অগ্রসর এবং নির্দিষ্ট সময়েই কাজ শেষ হবে বলে আমরা আশা করি। কাজে অগ্রগতিও দৃশ্যমান।’
প্রকল্পসংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, টার্মিনালের ৩ হাজারে বেশি পিলার এরই মধ্যে মাথা তুলে দাঁড়িয়েছে। আর এ কারণে দৃশ্যমান হয়ে উঠেছে মূল কাঠামো।
তৃতীয় টার্মিনালের নকশা করেছেন প্রখ্যাত স্থপতি রোহানি বাহারিন। টার্মিনালের মূল ভবনের আয়তন হবে ২ লাখ ৩০ হাজার বর্গমিটার। জাপানি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান সিমুজি আর কোরিয়ান প্রতিষ্ঠান স্যামসাং যৌথভাবে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে।
বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ বলছে, শাহজালালে বর্তমানে যে দুটি টার্মিনাল রয়েছে, তার যাত্রী ধারণক্ষমতা বছরে প্রায় ৭০ লাখ। তৃতীয় টার্মিনাল তৈরি হয়ে গেলে এ সংখ্যা দাঁড়াবে ২ কোটির কাছাকাছি।
তৃতীয় টার্মিনাল নির্মাণ হলে এর অ্যাপ্রোন বা পার্কিং এলাকায় একসঙ্গে রাখা যাবে ৩৭টি উড়োজাহাজ। ভেতরে যুক্ত হবে নতুন ১২টি বোর্ডিং ব্রিজ, ১১টি বডি স্ক্যানার আর ১৬টি লাগেজ বেল্ট। এ ছাড়া থাকবে স্বয়ংক্রিয় ইমিগ্রেশন ব্যবস্থাপনা। এর পার্কিংয়ে একসঙ্গে রাখা যাবে ১ হাজার ২৩০টি গাড়ি।
তৈরি করা হবে আমদানি ও রপ্তানির জন্য আলাদা কার্গো কমপ্লেক্স। থাকবে ১১৫টি চেক-ইন কাউন্টার। এই টার্মিনালের সঙ্গে যুক্ত করা থাকবে মেট্রোরেলও। আর বর্তমান দুই টার্মিনালের সঙ্গে সুড়ঙ্গপথে যুক্ত হবে তৃতীয় টার্মিনাল।