ধর্ম অবমাননার কল্পিত অভিযোগ তুলে সংখ্যালঘুদের বাড়িঘরে সাম্প্রদায়িক হামলার বিচার না হলে ঢাকা অভিমুখে লংমার্চের হুঁশিয়ারি দিয়েছে হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ। গতকাল শনিবার সকালে সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাস বন্ধের দাবিতে চট্টগ্রামের নিউ মার্কেট মোড়ে আয়োজিত অবরোধ ও বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে এই হুঁশিয়ারি দেন সংগঠনের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক রানা দাশগুপ্ত।
ঐক্য পরিষদের পূর্বঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে সকাল থেকে নিউ মার্কেট মোড়ে জড়ো হন সংগঠনের নেতাকর্মীরা। সকাল ১১টা পর্যন্ত নিউ মার্কেট মোড়ের পূর্বপ্রান্ত আটকিয়ে কয়েক হাজার মানুষ বিক্ষোভ করেন। ওই সময় কোতোয়ালি মোড়ের দিকে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
সমাবেশে যুব ঐক্য পরিষদ, চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী বিজয়া সম্মিলন পরিষদ, বৌদ্ধ কৃষ্টি প্রচার সংঘ, জন্মাষ্টমী উদযাপন পরিষদ, মাইনরিটি ওয়াচ, জলদাস ফেডারেশন, হিন্দু ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশ বৌদ্ধ সমিতি, সনাতন বিদ্যার্থী সংসদ, শারদাঞ্জলি ফোরাম, হিন্দু মহাজোটসহ অর্ধশতাধিক সংগঠনের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
সমাবেশে সংহতি জানিয়ে সাংবাদিক আবুল মোমেন বলেন, ‘দেশের বিভিন্ন জায়গায় ধর্মের কথা বলে সংখ্যালঘুদের বাড়িঘরে হামলা হচ্ছে। মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে স্বাধীন হওয়া বাংলাদেশে আমরা এটা কল্পনাও করতে পারি না।’
সমাবেশে হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক রানা দাশগুপ্ত বলেন, ‘ধর্ম অবমাননার কথিত অভিযোগ তুলে ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের বাড়িঘরে, মঠমন্দিরে হামলা করা হচ্ছে। শুধু সংখ্যালঘুদের ওপরই নয়, অতিসম্প্রতি আমরা দেখেছি, কথিত ধর্ম অবমাননার অভিযোগ তুলে লালমনিরহাটে একজন ধর্মপ্রাণ মুসলমানকেও হত্যা করে পুড়িয়ে ফেলা হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘সংখ্যালঘুদের প্রশ্নে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা খুবই আন্তরিক। কিন্তু তাঁর দলের ভেতরেও দল আছে। সরকারকে বলব, অবিলম্বে এই হামলা, গুজব, মিথ্যা অভিযোগ প্রতিরোধ করুন। এরই মধ্যে সংঘটিত হামলা-অগ্নিসংযোগের তদন্ত করুন, দায়ীদের বিচার করুন। মিথ্যা মামলায় যাঁরা জেলে আছেন তাঁদের মুক্তি দিন। না হলে অস্তিত্ব রক্ষায় আমাদের আরো কঠোর কর্মসূচি দিতে হবে। প্রয়োজনে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকা অভিমুখে লংমার্চ হবে।’
ঐক্য পরিষদের চট্টগ্রাম মহানগর শাখার সভাপতি পরিমল চৌধুরীর সভাপতিত্বে সমাবেশে আরো বক্তব্য দেন পরিষদের কেন্দ্রীয় প্রেসিডিয়াম সদস্য ড. জীনবোধি ভিক্ষু, চট্টগ্রাম উত্তরের সভাপতি রনজিৎ দে, কেন্দ্রীয় শিল্প ও বাণিজ্য সম্পাদক শ্যামল কুমার পালিত, নিতাই প্রসাদ ঘোষ, চন্দন তালুকদার, তপন কান্তি দাশ, রুবেল পাল প্রমুখ।
এদিকে বাগেরহাট প্রতিনিধি জানান, ‘সাম্প্রদায়িকতা রুখো, বীর বাঙালি জাগো’ এই স্লোগান সামনে রেখে বাগেরহাটে মানববন্ধন পালন করা হয়েছে। গতকাল সকালে বাগেরহাট শহরের সাধনার মোড়ে ওই মানববন্ধন চলাকালে জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে হিন্দু ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নারী-পুরুষ অংশ নেন।
ফরিদপুর থেকে নিজস্ব প্রতিবেদক জানান, বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ ও বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের যৌথ উদ্যোগে ফরিদপুরেও একই দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন হয়েছে। গতকাল সকালে ফরিদপুর প্রেস ক্লাবের সামনের মুজিব সড়কে মানববন্ধন শেষে বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়।
ঝালকাঠি প্রতিনিধি জানান, ঝালকাঠিতে মানববন্ধন করেছে হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ ও জেলা পূজা উদযাপন পরিষদ। সকালে ঝালকাঠি প্রেস ক্লাবের সামনের সড়কে ঘণ্টাব্যাপী এই মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। এর আগে শহরে বিক্ষোভ মিছিল বের করে তারা।
সাতক্ষীরা প্রতিনিধি জানান, বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ সাতক্ষীরা জেলা শাখার আয়োজনে গতকাল সকালে নিউ মার্কেট এলাকায় শহীদ আলাউদ্দীন চত্বরে বিক্ষোভ সমাবেশ ও মানববন্ধন কর্মসূচি পালিত হয়।
শেরপুর প্রতিনিধি জানান, একই দাবিতে শেরপুরে গণঅবস্থান কর্মসূচি ও বিক্ষোভ সমাবেশ হয়েছে। গতকাল সকালে শেরপুর ডিসি গেটের সামনে ঘণ্টাব্যাপী এই কর্মসূচি পালন করে বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ শেরপুর জেলা শাখা।