ডেস্ক নিউজ
সীমান্তে মর্টারশেল নিক্ষেপ ও গুলির ঘটনাসহ মিয়ানমারের অসৌজন্য আচরণের অভিযোগ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর (আসিয়ান) রাষ্ট্রদূতদের কাছে তুলে ধরেছে বাংলাদেশ। একই সঙ্গে কূটনৈতিকভাবে চলমান সমস্যা সমাধানে আসিয়ানের সহায়তা চাওয়া হয়েছে।
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, ভিয়েতনাম, ব্রুনাই, সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড, ফিলিপাইন, মিয়ানমার, কম্বোডিয়া ও লাওস এই দশটি রাষ্ট্র নিয়ে গঠিত আসিয়ান জোট। ভারত ও চীনের পর আসিয়ান জোটই বাংলাদেশের রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধান ও মিয়ানমারের চলমান সংঘর্ষের বিষয়ে ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে পারে। বাংলাদেশ জোটের দেশগুলোর রাষ্ট্রদূতের কাছে রোহিঙ্গা প্রত্যাবার্সন, মিয়ানমারের অভ্যন্তরে সংঘর্ষের কারণে আন্তজার্তিক সীমানা লংঘন এবং অসৌজন্য আচরণের বিস্তারিত তথ্য আনুষ্ঠানিকভাবে তুলে ধরেছে।
আসিয়ানভুক্ত দেশগুলোর দূতরা সোমবার (১৯ সেপ্টেম্বর) বেলা আড়াইটা থেকে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় আসেন। বৈঠকে বাংলাদেশ তাদের কাছে রোহিঙ্গাদের শান্তিপূর্ণ প্রত্যাবাসনের দাবি জানায়। এছাড়া সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের সীমান্ত এলাকায় মিয়ানমারের অভ্যন্তরে সংঘর্ষের কারণে মর্টারশেল ও গুলির ঘটনায় উদ্বেগ ও নিন্দা জানানো হয়। চলমান সংঘর্ষের কারণে নতুন করে বাংলাদেশে নতুন শরণার্থীদের ঢল নামার আশঙ্কার বিষয়টি বৈঠকে উত্থাপন করা হয়।
তবে তাদের জানানো হয়েছে, নতুন করে কাউকে আর বাংলাদেশে ঢুকতে দেওয়া হবে না। বৈঠকে রাষ্ট্রদূতদের কাছে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন ও মিয়ানমারের সঙ্গে বিদ্যমান সমস্যার কূটনৈতিক সমাধানের দাবি জানানো হয়েছে। সীমান্তে বারবার আন্তজার্তিক সীমা লঙ্ঘনের পরও বাংলাদেশ সর্বোচ্চ সংযম দেখানো এবং সীমান্তের সব ধরনের বাহিনীকে সর্তক রাখার বিষয়টি তুলে ধরে। মনোযোগ সহকারে আসিয়ান রাষ্ট্রদূতরা বাংলাদেশের বক্তব্য শুনেছে। তবে বৈঠকের পর আনুষ্ঠানিক কোন বক্তব্য দেয়নি বাংলাদেশ ও আসিয়ান রাষ্ট্রদূতগণ।
জানা গেছে, সীমান্তে মিয়ানমারের অব্যাহত সামরিক তৎপরতার পরিপ্রেক্ষিতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আহ্বানে সাড়া দিয়ে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় আসেন অ্যাসোসিয়েশন অফ সাউথইস্ট এশিয়ান নেশনসের (আসিয়ান) সদস্য দেশগুলোর দূতরা।
এর আগে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে মিয়ানমারের মর্টার শেল ছোড়ার ঘটনায় গত রবিবার চতুর্থবারের মতো দেশটির রাষ্ট্রদূত অং কিউ মোয়েকে তলব করে ঢাকা। তলবের পর দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশটির দূত জানান, বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তে মর্টার শেল ছুড়েছে রোহিঙ্গা অধ্যুষিত রাখাইন রাজ্যের সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান আর্মি। তার দাবি, আরাকান আর্মি মিয়ানমার সেনাবাহিনীর গোলাবারুদ চুরি করে বাংলাদেশে গুলি করছে, যাতে করে দুই দেশের সম্পর্কের অবনতি হয়; বাংলাদেশ মিয়ানমারকে অবিশ্বাস করে।
গত কয়েক দিন ধরেই উত্তেজনা বিরাজ করছে বাংলাদেশ ও মিয়ানমার সীমান্তে। এ পরিস্থিতিতে দেশের সব বাহিনীর সঙ্গে রবিবার উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক করেছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। বৈঠকে সর্বোচ্চ প্রস্তুতি রাখতে বলা হলেও কূটনৈতিকভাবেই সমাধানের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। কূটনৈতিক তৎপরতার অংশ হিসেবে সোমবারে আসিয়ানের রাষ্ট্রদূতদের কাছে অভিযোগ তুলে ধরল বাংলাদেশ।
গত চার দিনে সীমান্ত এলাকায় মিয়ানমার বাহিনীর ছোড়া মর্টার শেলের আঘাতে নো ম্যান্স ল্যান্ডে এক রোহিঙ্গা তরুণ নিহত এবং আহত হয়েছেন বেশ কয়েকজন। এ ছাড়া মিয়ানমারের পুঁতে রাখা মাইনে আহত হয়েছেন এক বাংলাদেশি। প্রতিদিনই সীমান্তের এপার থেকে থেমে থেমে শোনা যাচ্ছে গুলি ও মর্টারের শব্দ। কখনও এসে পড়ছে গুলি ও গোলা। সোমবার সকালে সীমান্তে ব্যাপক গুলির আওয়াজ শোনা যায়।
উদ্ভূত পরিস্থিতিতে রবিবার দুপুরে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তে উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ে একটি উচ্চ পর্যায়ের নিরাপত্তা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এ বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব ও মেরিটাইম অ্যাফেয়ার্স ইউনিটের সচিব রিয়ার অ্যাডমিরাল (অব.) মো. খুরশেদ আলম।
বৈঠকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, নৌবাহিনী, সেনাবাহিনী, বিমানবাহিনী, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি), কোস্ট গার্ড, পুলিশ, এনএসআই, ডিজিএফআইসহ বাংলাদেশের সব বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। সেখানে সীমান্তে নজরদারি বাড়ানো এবং কূটনৈতিকভাবে সমস্যা সমাধানের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।