ডেস্ক নিউজ
বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি পণ্যবাহী ট্রাকে চাঁদাবাজির অভিযোগ আনার পরপরই টনক নড়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে শুরু করে মাঠ পর্যায়ের পুলিশেরও। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে নির্দেশনাও দেওয়া হয়েছে চাঁদাবাজি রোধের। এ ছাড়া গতকাল পুলিশ সদর দপ্তরে অনুষ্ঠিত ফেব্রুয়ারি মাসের অপরাধ পর্যালোচনাসভা থেকেও চাঁদাবাজি রোধে কঠোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সুনির্দিষ্ট অভিযোগ ছাড়া মহাসড়কে পণ্যবাহী গাড়ি না থামাতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে মাঠ পর্যায়ের পুলিশকে।
গতকাল মঙ্গলবার সকাল থেকে সারা দেশে পণ্য পরিবহনের ওপর নজরদারি করছে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য ও গোয়েন্দারা। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, পুলিশ সদর দপ্তর ও মাঠ পর্যায়ের পুলিশের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।
অভিযোগ রয়েছে, পণ্যবাহী ট্রাকে চাঁদাবাজিতে পরিবহন মালিক, শ্রমিক সংগঠনের নেতারাও রয়েছেন। তাঁদের কাছ থেকে মাসোহারা নেন অসাধু পুলিশ সদস্যরাও। এ ছাড়া স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তিদের হয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে চাঁদা আদায় করা হয়ে থাকে।
গত সোমবার সাংবাদিকদের কাছে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি দেশের বিভিন্ন সড়কে পণ্যবাহী ট্রাকে চাঁদাবাজির কথা স্বীকার করেন। তিনি এর থেকে পরিত্রাণের জন্য স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেন। বিষয়টি গণমাধ্যমে আসার পর ব্যাপক আলোচনায় আসে। পণ্যের দাম বাড়ার পেছনে চাঁদাবাজি একটি বড় কারণ বলে মনে করেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। আর এ কারণে চাঁদাবাজি বন্ধ করে সবজি থেকে শুরু করে সব ধরনের পণ্যের মূল্য সহনীয় পর্যায়ে রাখার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান গতকাল কালের কণ্ঠকে জানান, সড়কে পণ্যবাহী পরিবহনে চাঁদাবাজি বন্ধে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এক প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘বাণিজ্যমন্ত্রী বলেছেন পরিবহন সেক্টরের মালিক-শ্রমিকরা বিভিন্ন শহরে ঢুকতে হলে সার্ভিস চার্জ নেন। এগুলো যাতে না হয় সে জন্য মন্ত্রী মহোদয় ফোন করেছিলেন। বিষয়গুলোর ওপর আজকে (গতকাল মঙ্গলবার) থেকে নজরদারি করা হচ্ছে। আমার মনে হয় আজ থেকে অবৈধভাবে আর কেউ চাঁদা নিতে পারবে না। ’ আরেক প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘পুলিশের যারা অপরাধ করে তাদের জন্য শাস্তির ব্যবস্থা আছে। পণ্যবাহী পরিবহন থেকে পুলিশের কোনো অসাধু সদস্য অর্থ আদায় করে কি না সেটাও নজরদারি করা হচ্ছে। ’
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে চাঁদাবাজি রোধের বিষয়টি পুলিশ সদর দপ্তরকে জানানো হয়। আর পুলিশ সদর দপ্তর গতকাল মঙ্গলবার সারা দেশের মাঠ পর্যায়ের পুলিশকে নির্দেশনা দিয়েছে চাঁদাবাজি বন্ধের।
রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার আবদুল আলীম মাহমুদ গতকাল বিকেলে কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘সড়কে পণ্যবাহী ট্রাকে যাতে কোনো চাঁদাবাজি না হয় সে ধরনের নির্দেশনা পাওয়া গেছে। আমরাও আমাদের এলাকার কর্মকর্তাদের বলেছি চাঁদাবাজি ঠেকানোর পাশাপাশি পুলিশও যাতে অতীব প্রয়োজন না হলে পণ্যবাহী ট্রাক আটকে যেন চেক না করে। ’
নীলফামারীর এসপি মোহাম্মদ মোখলেছুর রহমান গতকাল বিকেলে কালের কণ্ঠকে জানান, পণ্যবাহী ট্রাকে চাঁদাবাজি বন্ধের নির্দেশনা এসেছে। আমরা ব্যবস্থা নিচ্ছি। পুলিশ সদর দপ্তরের এআইজি (মিডিয়া অ্যান্ড পিআর) মো. কামরুজ্জামান কালের কণ্ঠকে বলেন, চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণে কঠোর হতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
চাঁদাবাজি রোধে মাঠ পর্যায়ে পুলিশকে নির্দেশনা : পুলিশ সদর দপ্তর থেকে গতকাল গণমাধ্যমকে জানানো হয়েছে, পবিত্র রমজান ও আসন্ন ঈদকে কেন্দ্র করে চাঁদাবাজি রোধে কঠোর অবস্থানে রয়েছে পুলিশ। সুনির্দিষ্ট কোনো অভিযোগ বা তথ্য ছাড়া মহাসড়ক অথবা সড়কে চলাচলকারী পণ্যবাহী কোনো গাড়ি থামানো যাবে না। অতিরিক্ত আইজি (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশনস) এম খুরশীদ হোসেনের সভাপতিত্বে গতকাল পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সে গত ফেব্রুয়ারি মাসের মাসিক অপরাধ পর্যালোচনাসংক্রান্ত এক ভার্চুয়াল সভায় মাঠ পর্যায়ের পুলিশ কর্মকর্তাদের এ নির্দেশনা দেন। সভায় সব মেট্রোপলিটন কমিশনার, রেঞ্জ ডিআইজি ও জেলার পুলিশ সুপাররা যুক্ত ছিলেন।
সভায় এআইজি (ক্রাইম ইস্ট) মো. জালাল উদ্দিন আহমেদ চৌধুরী ফেব্রুয়ারি মাসের অপরাধ পরিস্থিতি তুলে ধরেন। তিনি উল্লেখ করেন দস্যুতা, খুন, দ্রুত বিচার, দাঙ্গা, অপহরণ, পুলিশ আক্রান্ত, সিঁধেল চুরি ও চুরিসংক্রান্ত মামলা জানুয়ারি মাসের তুলনায় ফেব্রুয়ারি মাসে কমেছে। তবে নারী ও শিশু নির্যাতন মামলা কিছুটা বেড়েছে। তবে সেটা আগের বছরের ফেব্রুয়ারির তুলনায় কম।