ডেস্ক নিউজ
সারা দেশের প্রায় ৮ লাখ ৮৪ হাজার সুবিধাবঞ্চিত শিশু প্রাথমিক শিক্ষার আওতায় আসছে। এক হাজার ১০টি ইবতেদায়ি দারুল আরকাম মাদরাসার মাধ্যমে সাধারণ ও ধর্মীয় শিক্ষা প্রদানের মাধ্যমে দেশে স্বাক্ষরতার হার বৃদ্ধি করা হবে। আরবি ভাষা শিক্ষার মাধ্যমে দক্ষ জনশক্তি তৈরি করা হবে দারুল আরকাম ইবতেদায়ি মাদরাসা স্থাপন ও পরিচালনা প্রকল্পের মাধ্যমে। প্রকল্পটি শেষ হলে পাঁচ বছর শেষে এই প্রকল্পের জনবল শিক্ষকদের রাজস্ব খাতের আওতায় নিয়ে যাওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রকল্পের আওতায় এক লাখ ৭১ হাজার ৪০০ শিক্ষার্থীকে ইবতেদায়ি উত্তীর্ণের সনদ প্রদান করা হবে বলে ধর্ম মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।
প্রকল্পের প্রেক্ষাপটের তথ্য বলছে, সারা দেশে ৬৪ জেলার ৫৫০টি কেন্দ্রের মসজিদগুলোকে কাজে লাগিয়ে ৩২ হাজার শিক্ষাকেন্দ্রের মাধ্যমে ৪৪ লাখ ১০ হাজার শিশুকে প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা, ৪১ হাজার কুরআন শিক্ষা কেন্দ্রের মাধ্যমে ৫১ লাখ ১০ হাজার জন স্কুলগামী, কর্মী, বস্তিবাসী ও ঝরেপড়া শিক্ষার্থীকে শুদ্ধভাবে পবিত্র কুরআন শিক্ষা দান এবং ৭৬৮টি বয়স্ক শিক্ষাকেন্দ্রের মাধ্যমে ৯৬ হাজার জন বয়স্ক ও নিরক্ষর ব্যক্তিকে স্বাক্ষরতা ও ধর্মীয় শিক্ষা দানের জন্য মসজিদভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষা কার্যক্রম নেয়া হয়। এক হাজার ৫০৫ কোটি ৯৩ লাখ টাকা ব্যয়ের এই প্রকল্পটি ২০১৪ সালের ডিসেম্বরে। একনেক সভার সিদ্ধান্ত হলো, বাংলাদেশের যেসব এলাকায় স্কুল নেই, সেখানে এই প্রকল্পের মসজিদভিত্তিক শিক্ষায় অন্যান্য শিক্ষার পাশাপাশি প্রাথমিক শিক্ষা কার্যক্রমকে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। কিন্তু উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনায় (ডিপিপি) নতুন করে দারুল আরকাম ইসলামিক ফাউন্ডেশন নামে সারা দেশে এক হাজার ১০টি স্থানে ইবতেদায়ি মাদরাসা প্রতিষ্ঠার বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করে ২০১৭ সালের মার্চে প্রকল্পটি অনুমোদিত হয়। প্রকল্পটি ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে শেষ হয়।
ধর্ম মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাবনা থেকে জানা গেছে, প্রকল্প মেয়াদে মোট পাঁচ বছরে আট লাখ ৮৩ হাজার ৭৫০ জন শিক্ষার্থীকে পর্যায়ক্রমে প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণীর পাঠ দান করা হবে। প্রথম থেকে চতুর্থ শ্রেণীর পাঠ সম্পন্নকারী শিক্ষার্থী যারা প্রতি বছর ধাপে ধাপে পরের ক্লাসে উত্তীর্ণ হবে। আর পাঁচ বছরমেয়াদি চারটি শিক্ষাবর্ষের পঞ্চম শ্রেণীর মোট এক লাখ ৪১ হাজার ৪০০ শিক্ষার্থী মাদরাসা শিক্ষা বোর্ডের আওতায় পঞ্চম শ্রেণীর ইবতেদায়ি শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করবে। এক লাখ ৭৬ হাজার ৭৫০ জন শিক্ষার্থী প্রকল্পের আওতায় ২০২৫ শিক্ষাবর্ষে জানুয়ারি থেকে জুন ছয় মাস শিক্ষা গ্রহণের সুযোগ পাবে। বাকি সময়ের জন্য অর্থাৎ জুন ২০২৫ সালে প্রকল্প শেষ হওয়ার আগেই যাচাই কমিটির সুপারিশের আলোকে প্রকল্পের কার্যক্রম সম্মানীভিত্তিক জনবলসহ রাজস্ব বাজেটে স্থানান্তর ও রাজস্ব বাজেটের আওতায় বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে হবে। প্রকল্পের আওতায় মাদরাসা শিক্ষায় শিক্ষিত প্রধান শিক্ষক এক হাজার ১০ জন, সাধারণ শিক্ষক দুই হাজার ২০ জন, আলিয়া নেসাব শিক্ষিত শিক্ষক এক হাজার ১০ জন এবং কওমি নেসাব শিক্ষিত শিক্ষক এক হাজার ১০ জনসহ মোট পাঁচ হাজার ৫০ শিক্ষক থাকবেন। এ ছাড়া এক হাজার ১০ জন কর্মী বা দফতরি থাকবেন।
প্রকল্পের আওতায় কাজগুলো হলো, অনিয়মিত এক হাজার ১০ জন শ্রমিকের মজুরি, ছয় হাজার ১৭৩ জন শিক্ষক সম্মানী ও কমিটি সভার সদস্যদের সম্মানী, আসবাবপত্র, কম্পিউটার ও অফিস সরঞ্জমাদি ক্রয়, এক হাজার ১১টি বইপত্র ও সাময়িকী সংগ্রহ, ১০ হাজার ১১০ জনকে প্রশিক্ষণ, দুই লাখ ১৯ হাজার ৩৬৫টি মুদ্রণ ও বাঁধাই এবং ৫০ হাজার ৫০০টি পরিবহন ব্যয়।
প্রকল্পের খরচের খাত থেকে জানা গেছে, এই প্রকল্পে সাধারণ শিক্ষকদের মাসিক সম্মানী সাড়ে ১২ হাজার টাকা, প্রধান শিক্ষকের সম্মানী ১৩ হাজার টাকা হারে পাঁচ বছরে খরচ ৩৮৯ কোটি ৫৮ লাখ টাকা। যা মোট ব্যয়ের ৭৬.৭১ শতাংশ। অন্য দিকে কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষা বিভাগের আওতায় বিদ্যমান ইবতেদায়ি মাদরাসার জুনিয়র শিক্ষকদের বেতন দুই হাজার ৩০০ টাকা এবং প্রধান শিক্ষকের বেতন আড়াই হাজার টাকা।
পরিকল্পনা কমিশন সূত্র বলছে, ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয় কর্তৃক দারুল আরকাম ইবতেদায়ি মাদরাসা স্থাপন ও পরিচালনা শিরোনামে একটি প্রকল্প প্রক্রিয়াকরণের জন্য ২০২১ সালের জানুযারিতে পরিকল্পনা কমিশনে প্রস্তাব পেশ করা হয়। তখন কমিশন থেকে কিছু নির্দেশনাসহ প্রকল্পটি পরিচালনার ক্ষেত্রে সরকারের নীতিগত সিদ্ধান্ত গ্রহণ এবং কারিগরি মাদরাসা শিক্ষা বিভাগের মতামত গ্রহণ করে ডিপিপি পুনর্গঠন করে আবার কমিশনে পাঠানোর জন্য বলা হয়। সেই পরিপ্রেক্ষিতে গত ১০ ফেব্রুয়ারি কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষা বিভাগ থেকে অনাপত্তিপত্র দেয়া হয়েছে। ৫০৭ কোটি ৮৫ লাখ টাকা ব্যয়ে প্রকল্পটি আগামী ২০২৫ সালের জুন পর্যন্ত মেয়াদে অনুমোদনের জন্য প্রস্তাব দেয়া হয়।
আর্থসামাজিক অবকাঠামো বিভাগের সংশ্লিষ্টরা বলছেন, যথাযথ সমীক্ষা না করে প্রকল্প নেয়ার কারণেই খরচের ব্যবধান এত বেশি। সরকারি খাতে উন্নয়ন প্রকল্প প্রণয়ন, প্রক্রিয়াকরণ, অনুমোদন ও সংশোধন পদ্ধতি সংক্রান্ত পরিপত্রের অনুচ্ছেদ ৪.১ অনুযায়ী ২৫ কোটি টাকার বেশি প্রাক্কলিত ব্যয়ের সব বিনিয়োগ প্রকল্প গ্রহণের আগে আবশ্যিকভাবে সম্ভাব্যতা যাচাই করতে হবে। কিন্তু এই প্রকল্পের খরচ ৫০৭ কোটি ৮৫ লাখ টাকা, অথচ সম্ভাব্যতা যাচাই করা হয়নি।