ডেস্ক নিউজ
সেপ্টেম্বরে প্রথম সপ্তাহে কোভ্যাক্সের অধীনে ফাইজার-বায়োএনটেকের আরও ৬০ লাখ ডোজ করোনাভাইরাসের টিকা দেশে আসবে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন।
বৃহস্পতিবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে তিনি এ খবর দেন।
মন্ত্রী বলেন, ”একমাত্র বিষয় হচ্ছে, ওরা জানতে চেয়েছে- ওটা আসলে আমাদের রাখার ব্যবস্থা আছে কি-না। স্বাস্থ্যমন্ত্রীর সাথে আমার আলাপ হয়েছে, আমি নিশ্চয়তা নিয়েছি, আমাদের ব্যবস্থা আছে। সুতরাং এগুলো আসবে।”
এর আগে গত ৩১ মে কোভিড টিকার আন্তর্জাতিক প্ল্যাটফর্ম কোভ্যাক্স থেকে ফাইজার-বায়োএনটেকের তৈরি ১ লাখ ৬২০ ডোজ টিকা বাংলাদেশে আসে। ২১ জুন দেশে এ টিকার পরীক্ষামূলক প্রয়োগ শুরু হয়।
এ টিকা সংরক্ষণ করতে হয় হিমাঙ্কের নিচে মাইনাস ৯০ ডিগ্রি থেকে মাইনাস ৬০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে। ফলে এ টিকা সংরক্ষণ করতে আল্ট্রা কোল্ড ফ্রিজারের প্রয়োজন হয়। আর পরিবহনের জন্য থার্মাল শিপিং কনটেইনার বা আল্ট্রা ফ্রিজার ভ্যান লাগে।
সাধারণ রেফ্রিজারেটরে ২ ডিগ্রি থেকে ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় রাখা হলে এ টিকা ৫ দিন পর্যন্ত ব্যবহারের উপযোগী থাকে। আর রেফ্রিজারেটরের বাইরে ৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় এ টিকা দুই ঘণ্টা টেকে।
সংরক্ষণ আর পরিবহনে জটিলতার কারণে প্রাথমিকভাবে কেবল ঢাকায় বাছাই করা কয়েকটি কেন্দ্রে ফাইজারের টিকা দেওয়া হয় সে সময়।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর তখন বলেছিল, ফাইজারের টিকার দুই লাখ ডোজ সংরক্ষণের সক্ষমতা তাদের আছে। সক্ষমতা বাড়ালে ১০ লাখ ডোজ টিকাও সংরক্ষণ করা যাবে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, ফাইজারের টিকা আসার আগেই কোভ্যাক্সের অধীনে আগামী সপ্তাহে অ্যাস্ট্রাজেনেকার আরও দশ লাখ ডোজ এবং এ মাসে চীনের সিনোফার্মের ৩৪ লাখ ডোজ টিকা দেশে আসার কথা রয়েছে।
ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটে উৎপাদিত অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা দিয়ে গত ফেব্রুয়ারিতে বাংলাদেশে গণটিকাদান শুরু হয়েছিল। সেই টিকার ৩ কোটি ডোজ কিনতে সরকার চুক্তি করেছিল সেরাম ইনস্টিটিউটের সঙ্গে।
কিন্তু ৭০ লাখ ডোজ আসার পর ভারত রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা দিলে আর চালান আসেনি। এর বাইরে ভারত সরকার উপহার হিসেবে দিয়েছিল ওই টিকার ৩২ লাখ ডোজ।
এর মধ্যে বাংলাদেশ চীন থেকে সিনোফার্মের টিকা কেনা শুরু করেছে। কোভ্যাক্সের আওতায় ফাইজার ছাড়াও মডার্নার তৈরি কোভিড টিকার ৫৫ লাখ ডোজ দেশে এসেছে।
কিন্তু অ্যাস্ট্রাজেনেকার দুটি ডোজ যারা নিতে পারেননি, তারা পড়েছিলেন বিপাকে। কারণ তাদের অন্য টিকাও দেওয়া যাচ্ছিল না।
কয়েক মাস অপেক্ষার পর জাপান কোভ্যাক্সের আওতায় তিন দফায় ১৬ লাখ ৪৩ হাজারের বেশি টিকা বাংলাদেশে পাঠালে গত ২ অগাস্ট থেকে অপেক্ষমানদের অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকার দ্বিতীয় ডোজ দেওয়া শুরু করে সরকার।
চীন থেকে কেনা সিনোফার্মের ৭০ লাখ ডোজ টিকা ইতোমধ্যে সরকার হাতে পেয়েছে। এছাড়া চীন সরকারের উপহার হিসেবে আসা ১১ লাখ ডোজ মিলিয়ে সিনোফার্মের টিকা এসেছে ৮১ লাখ ডোজ।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন বলেন, “সিনোফার্ম থেকে ৭ কোটি ৫০ লাখ ডোজ আমরা অর্ডার দিয়েছি। এর মধ্যে ১ কোটি ৫০ লাখের টাকা দিয়ে দিয়েছি। বাকি ৬ কোটি টিকার বিষয়ে কাজ চলছে।”
সিনোফার্মের টিকা বাংলাদেশেই উৎপাদন করার জন্য সরকার ও ইনসেপ্টা ফার্মাসিউটিক্যালসের সঙ্গে তাদের আলোচনা এগিয়ে চলেছে জানিয়ে মোমেন বলেন, ‘যে কোনো মুহূর্তে’ এই যৌথ উৎপাদন চুক্তি হতে পারে।
“ওরা আমাদের কাছে (চুক্তির খসড়া) ১৬ জুলাই দিয়েছে। আমরা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে দিয়েছি। তারা দেখভাল করে ল মিনিস্ট্রিতে পাঠিয়েছে। যেদিন পাঠিয়েছিল, আইন মন্ত্রণালয় তার পরদিনই ভেটিং করে পাঠিয়ে দিয়েছে। সবকিছু ঠিকঠাক, যে কোনো সময়ে এটা তাদের সই করা উচিত।”