দেশের নবায়নযোগ্য শক্তি খাতে প্রায় ১ লাখ ৩৭ হাজার মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে। এর মধ্যে সৌরবিদ্যুৎ খাতের কর্মসংস্থানে বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান ১৬১টি দেশের মধ্যে পঞ্চম।
নবায়নযোগ্য শক্তি খাতের বৈশ্বিক সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল রিনিউঅ্যাবেল এনার্জি এজেন্সির (আইরিনা) ‘নবায়নযোগ্য শক্তি ও কর্মসংস্থান’ শীর্ষক বার্ষিক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। আজ মঙ্গলবার সন্ধ্যায় বৈশ্বিকভাবে প্রতিবেদনটি প্রকাশিত হবে।
জীবাশ্ম জ্বালানির পরিবর্তে নবায়নযোগ্য শক্তির ব্যবহার নিয়ে কাজ করে আইরিনা। সংযুক্ত আরব আমিরাতে সংস্থাটির সদর দপ্তর। বাংলাদেশসহ বিশ্বের ১৬১টি দেশ আইরিনার সদস্য।
সংস্থাটির প্রতিবেদনে বলছে, অফ-গ্রিডে (জাতীয় বিদ্যুৎ সঞ্চালন সংযোগের বাইরে) সৌরশক্তির প্রসার শুধু নতুন কর্মসংস্থানই তৈরি করছে না, গ্রামীণ এলাকায় অর্থনৈতিক উন্নয়নে ভূমিকা রাখছে। নবায়নযোগ্য শক্তির এই বিকেন্দ্রীকরণ শুধু বিদ্যুৎ উৎপাদন নয় বরং কৃষিকাজ, খাদ্য সংরক্ষণ, স্বাস্থ্যসেবা এবং স্থানীয় ব্যবসায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।
সৌরবিদ্যুৎ খাতে কর্মসংস্থানে শীর্ষ দেশ চীন। দ্বিতীয় জাপান, তৃতীয় যুক্তরাষ্ট্র ও চতুর্থ ভারত। বাংলাদেশের পরে আছে ভিয়েতনামে, ব্রাজিল, মালয়েশিয়া, জার্মানি ও ফিলিপাইন।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে প্রায় ৫৮ লাখ সৌরবিদ্যুৎ বা সোলার হোম সিস্টেম রয়েছে। এসব বিক্রি, স্থাপন করা ও রক্ষণাবেক্ষণে বেশির ভাগ কর্মসংস্থান তৈরি হয়েছে। যেমন প্রায় ১০ হাজার মানুষ কাজ করেন সৌরবিদ্যুতের ‘মডিউল’ সংযোজন কাজে।
বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের অধীন টেকসই ও নবায়নযোগ্য জ্বালানি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (স্রেডা) হিসাবে, বর্তমানে নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাত থেকে ৬৪৮ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আসে। এর মধ্যে ৪০০ মেগাওয়াট আসে সৌরশক্তি থেকে।
আইরিনার প্রতিবেদনে যেসব তথ্য দেওয়া হয়েছে, তা স্রেডার দেওয়া বলে উল্লেখ করেন সংস্থাটির চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলাউদ্দিন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘কর্মসংস্থানের যে হিসাব দেওয়া হয়েছে, তা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ। এখানে পুরো সরবরাহব্যবস্থাকেই (ভ্যালু চেইন) তুলে ধরা হয়েছে। যে সোলার প্যানেল লাগাচ্ছে, যে দোকানদার বিক্রি করল বা যে সারাইয়ের কাজ করে—সবাইকে এই কর্মকাণ্ডের মধ্যে ধরা হয়েছে।’
তবে বাংলাদেশে নবায়নযোগ্য শক্তি খাতে কর্মসংস্থানের এই হিসাবকে অনেকটা বাড়িয়ে বলা বলে মনে করেন জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ম তামিম। তিনি বলেন, দেশে যে প্রায় ৬০ লাখের মতো সোলার হোম সিস্টেম আছে। এর বিপরীতে কিছু কারিগরি কর্মী তৈরি হয়েছে। কিন্তু এ সংখ্যা খুব বেশি হবে না।
অধ্যাপক ম তামিমের ধারণা, প্রায় ৬০ লাখ সৌরবিদ্যুৎ সিস্টেমের মধ্যে এখন স্থাপিত আছে ৩০ লাখের মতো। অনেকেই ব্যাটারি বা অন্য কিছু নষ্ট হওয়ার পর আর এটা চালায় না। আবার অনেকে এলাকা জাতীয় গ্রিডের অধীনে চলে গেছে।
আইরিনার প্রতিবেদন বলছে, বিশ্বে নবায়নযোগ্য শক্তির মধ্যে সবচেয়ে বেশি মানুষ অর্থাৎ প্রায় ৩৮ লাখ কাজ করছেন সৌরশক্তি থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন শিল্পে। সৌরশক্তির পরই জৈব জ্বালানি থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন খাতে ২৫ লাখ কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হয়েছে। এরপরই রয়েছে জলবিদ্যুৎ ও বায়ুবিদ্যুৎ। এ দুই খাতে যথাক্রমে প্রায় ২০ লাখ ও ১২ লাখ মানুষ কাজ করছেন।
কোভিড আক্রান্ত ও পরবর্তী বিশ্বে নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টিতে নবায়নযোগ্য শক্তিতে বিনিয়োগের বিকল্প নেই বলে মনে করছে আইরিনা। সংস্থাটি বলছে, প্রণোদনা প্যাকেজের মাধ্যমে আগামী তিন বছরের মধ্যেই এই খাতে আরও বিশ্বে ৫৫ লাখ কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা সম্ভব। আর একই গতিতে চলতে থাকলে ২০৫০ সাল নাগাদ বিশ্বব্যাপী ৪ কোটি ২০ লাখ মানুষের কাজের সুযোগ করে দেবে এই খাত।
জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, সরকার সৌরবিদ্যুতের প্যানেল কিনতে সরকার ৫০ শতাংশ ভর্তুকি দেয়। বাংলাদেশে এ খাত আরও গতিশীল হতে পারে, যদি প্রযুক্তি আধুনিক হয়। তিনি বলেন, ‘এখন যে প্রযুক্তি আছে, তা আমাদের মতো দেশের জন্য সাশ্রয়ী নয়। ধনী দেশের মানুষ সৌরবিদ্যুতের যন্ত্রাংশ যত সহজে কিনতে পারে, আমরা তা পারি না। তাই প্রযুক্তি–সাশ্রয়ী করাটা জরুরি।’