ডেস্ক নিউজ
শুধু তথ্যের সুরক্ষাই নয়, বছরে সাশ্রয় হচ্ছে ৩৫৩ কোটি টাকা। এটাকেই বলা হচ্ছে, ‘হার্ট অব ডিজিটাল বাংলাদেশ’। গাজীপুরের কালিয়াকৈরে হাইটেক সিটিতে ৭ একর জমির উপর তৈরি করা হয়েছে জাতীয় তথ্যভাণ্ডার বা জাতীয় ডেটা সেন্টার। এটি ইতিমধ্যে বিশ্বের সপ্তম বৃহত্তর ডেটা সেন্টারের স্বীকৃতি পেয়েছে। শুধু দেশিয় তথ্যের সুরক্ষা নয়, আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানগুলোও এখন এই তথ্যভাণ্ডার ব্যবহারে আগ্রহ দেখাচ্ছে।
২০০৮ সালের ১২ ডিসেম্বর আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা নির্বাচনী ইশতেহারে ডিজিটাল বাংলাদেশের রূপরেখা ঘোষণা করেন। সেই যাত্রা শেষ হচ্ছে আগামী ৩১ ডিসেম্বর। এই রোডম্যাপের কতটুকু বাস্তবায়ন হয়েছে সেটা দেখতে সম্প্রতি গাজীপুরের হাইটেক সিটিতে গেলে চোখে পড়বে দৃষ্টিনন্দন এই ডেটা সেন্টার। অত্যন্ত সুরক্ষিত এই প্রতিষ্ঠান ইতিমধ্যে রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা হিসেবে নিরাপত্তা সুরক্ষায় এসেছে।
ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার অংশ হিসেবে দেশের তথ্য-উপাত্ত নিরাপদে সংরক্ষণ ও নিরবচ্ছিন্ন গুণগত মানসম্পন্ন ই-সেবা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হয়েছে। এক হাজার ৬০০ কোটি টাকারও বেশি খরচ করে এটি নির্মাণ করা হয়েছে। এখন সরকারি-বেসরকারি খাতে তথ্য সংরক্ষণের জন্য বড় পরিসরে ডেটা সংরক্ষণের প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে। এ প্রকল্প সরকারের তথ্যপ্রযুক্তি অন্য সব প্রকল্পের বাস্তবায়নে সহায়ক ভূমিকা রাখবে। রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক, জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন, নির্বাচন কমিশন, ভূমি জরিপ অধিদপ্তর, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো, এটুআই প্রকল্পের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য-উপাত্ত এ ডেটা সেন্টারের অধীনে আনা হয়েছে। এর পাশাপাশি ডেটাগুলোর নিরাপত্তা একটি বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ, যা ভবিষ্যতে আরও প্রকট আকার ধারণ করতে পারে। তাই তথ্যের সুরক্ষার জন্য এটি স্থাপন করা হয়েছে। এর মাধ্যমে দেশে একটি সমন্বিত ও উন্নত তথ্যসমৃদ্ধ বিশ্বমানের ডেটা সেন্টার গড়ে তোলা হয়েছে, যার ডাউন টাইম শূন্যের কোঠায়।
সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, এখানে সরকারের বিভিন্ন সংস্থার ডিজিটাল কনটেন্ট সংরক্ষণের ক্ষমতা বৃদ্ধির পাশাপাশি ডিজিটাল কনটেন্টগুলোর সাইবার নিরাপত্তা নিশ্চিত হয়েছে। ইতিমধ্যে আন্তর্জাতিকভাবে এটি স্বীকৃতিও পেয়েছে।
তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক ইত্তেফাককে বলেন, সরকারের ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ কর্মসূচি বাস্তবায়নে সরকারি-বেসরকারি খাতের তথ্য সংরক্ষণের জন্য বড় পরিসরে ডেটা সংরক্ষণের প্রয়োজনীয়তা থেকে তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগের অধীন বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল ‘ফোর টিয়ার ন্যাশনাল ডেটা সেন্টার’ স্থাপনের কাজটি করা হয়েছে। জনপ্রশাসনে তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে কাজের দক্ষতা, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি বাড়ানো, তথ্য সংরক্ষণ ও জনগণের দোরগোড়ায় ডিজিটাল সেবা পৌঁছে দিতেই সরকারের এই উদ্যোগ। এতে ডিজিটাল কনটেন্টগুলোর সাইবার নিরাপত্তা নিশ্চিত হওয়ার পাশাপাশি দেশীয় ও আন্তর্জাতিক সংস্থার মধ্যে তথ্য আদান-প্রদানের মাধ্যমে জনসেবা উন্নত হবে। প্রকল্পটির মাধ্যমে সরকারের সব মন্ত্রণালয়, বিভাগ, অধিদপ্তর, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের সব সরকারি কার্যালয়ের আইসিটি কার্যক্রম সরাসরি যুক্ত থাকবে। দেশে আধুনিক ডিজিটাল কার্যক্রম, সেবা প্রদান ও ই-বিজনেসের মূল ভিত্তি এই ডেটা সেন্টার ।
কী কাজে লাগবে এই ডেটা সেন্টার?
এ ডেটা সেন্টারকে টেকনিক্যাল ভাষায় বলা হয় ‘হার্ট অব ডিজিটাল বাংলাদেশ’। কালিয়াকৈর বঙ্গবন্ধু হাইটেক পার্কে ৭ একরের ওপর এটি প্রতিষ্ঠা করা হয়। ক্লাউড কম্পিউটিং ও জি-ক্লাউড প্রযুক্তিতে ডেটা সেন্টারগুলোর মধ্যে বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ স্থাপনা এটি, যার ডাউন টাইম শূন্যের কোঠায়। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক আপটাইম ইনস্টিটিউট থেকে টায়ার সার্টিফিকেশন অব অপারেশনাল সাসটেইনেবিলিটির সনদ পেয়েছে এটি। এটিকে বিশ্বের সপ্তম বৃহত্তর ডেটা সেন্টারের স্বীকৃতিও দিয়েছে তারা।
ডেটা সেন্টার
ডেটা সেন্টার কোম্পানির সচিব এ কে এম লুৎফুল কবীর ইত্তেফাককে বলেন, ফোর টিয়ার জাতীয় ডেটা সেন্টার হওয়ায় এখন আর তথ্য সংরক্ষণের জন্য বিদেশে যেতে হয় না। বরং ডিজিটাল বাংলাদেশে এত বড় ডেটা সেন্টার দেখে বিদেশিরাই আগ্রহ প্রকাশ করছেন। অনেকের সঙ্গে আলোচনা চলছে। বর্তমানে ডেটা সেন্টারে ওরাকল পদ্ধতি ব্যবহার করা হচ্ছে। তবে আগামীতে জি ক্লাউড স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এই জি ক্লাউড স্থাপিত হলে তথ্য আরও নিরাপদে সংরক্ষণ করা যাবে। এতে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর তথ্যও রাখা যাবে।
বিশালাকার এই ডেটা সেন্টারে আছে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন ৬০৪টি র্যাক, ১০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎসংযোগের জন্য নিজস্ব ৩৩/১১ কেভি সাবস্টেশন, জেনারেটর, উচ্চগতিসম্পন্ন ডেটা কানেকটিভিটি, ইন্টারনেট সংযোগ, অত্যাধুনিক রাউটার, সুইচ, ফায়ারওয়াল, স্টোরেজ সার্ভার, ভার্চুয়াল মেশিনসহ প্রিসিশন এয়ার কন্ডিশন সিস্টেমস, অনলাইন ৮ মেগাওয়াট ইউপিএস সিস্টেম, ইনটেলিজেন্ট বিল্ডিং ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম, সাইবার নিরাপত্তা ব্যবস্থা, ক্লাউডের জন্য বিশেষ সফটওয়্যার সিস্টেম, নেটওয়ার্ক ও সিকিউরিটি পর্যবেক্ষণ ব্যবস্থার মতো নানা প্রযুক্তি।
সময়ের ব্যবধান মাত্র তিন বছরের। ২০১৯-এ যাত্রা শুরু। মাত্র ১০ পেটাবাইট তথ্য সংরক্ষণের সক্ষমতা নিয়ে শুরু। এখন সক্ষমতা ২০০ পেটাবাইটের। এ কে এম লুৎফুল কবীর বলেন, বর্তমানে নিজ দেশে নিজেদের তথ্য সংরক্ষণের কারণে বছরে ৩৫৩ কোটি টাকা সাশ্রয় হচ্ছে। কিছুদিনের মধ্যে এটি বেড়ে ৫০০ কোটি টাকারও বেশি পরিমাণ অর্থ সাশ্রয়ের সম্ভাবনা রয়েছে।
ডাটা সেন্টারটি সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য ২০১৯ সালের ৩০ ডিসেম্বর বাংলাদেশ ডাটা সেন্টার কোম্পানি লিমিটেড শীর্ষক কোম্পানি গঠনের প্রস্তাব মন্ত্রিসভা বৈঠকে অনুমোদিত হয়। গত বছরের ১৬ সেপ্টেম্বর, বাংলাদেশ ডাটা সেন্টার কোম্পানি লিমিটেড নামে কোম্পানির রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন হয়েছে। ‘নিরাপদ তথ্য সেবা’ এর প্রত্যয় নিয়ে বাংলাদেশ ডাটা সেন্টার কোম্পানি লিমিটেড কার্যক্রম শুরু করে।