স্মার্ট বিদ্যুৎ কোম্পানি হচ্ছে ঢাকা ইলেকট্রিক সাপ্লাই কোম্পানি (ডেসকো)। উন্নত বিশ্বের আদলে এই কোম্পানির বিদ্যুৎ বিতরণ ব্যবস্থা ভূগর্ভে নেওয়া হচ্ছে। আগামী বছর নাগাদ এ সংক্রান্ত প্রকল্পের কাজ শেষ হলে ডেসকোর আওতাধীন বেশিরভাগ এলাকায় ভূ-উপরিস্থ বৈদ্যুতিক তারের জঞ্জাল থাকবে না। দুর্ঘটনার ঝুঁকিও কমবে। নিশ্চিত হবে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ। বাড়বে গ্রাহকসেবার মান। সর্বোপরি বদলে যাবে বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানিটি। দীর্ঘদিন ধরে ডেসকো শুধু রাজস্ব আদায়ের ওপর অধিক গুরুত্ব দিলেও এ বছর থেকে গ্রাহকসেবাকে অধিক গুরুত্ব দিয়ে নানামুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। এরই মধ্যে বেশকিছু পদক্ষেপ সুফল দিতে শুরু করেছে।
সংশ্নিষ্ট সূত্র জানায়, ১৩৫ বর্গকিলোমিটার আয়তনের ডেসকো এলাকায় মোট গ্রাহকসংখ্যা ১০ লাখের বেশি। ২০৪১ সালে এ সংখ্যা সাড়ে ৩৫ লাখে গিয়ে দাঁড়াবে। বর্তমান চাহিদা এক হাজার ৪৫৯ মেগাওয়াট হলেও আগামী ২১ বছরে এটা হবে ৭ হাজার ৮২২ মেগাওয়াট। এই বিপুল সংখ্যক গ্রাহক চাহিদা পূরণে এখন থেকেই কাজ করছে ডেসকো। এ জন্য প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকার মোট ১০টি প্রকল্পের কাজ জোরেশোরে চলছে। যার মধ্যে ৭টি বিদেশি অর্থায়নে; নিজস্ব অর্থায়নে চলছে ৩টি প্রকল্পের কাজ।
ডেসকোর ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী মো. কাওসার আমীর আলী বলেন, গ্রাহকসেবাকে অধিক গুরুত্ব দিয়ে প্রধানমন্ত্রী ও বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রীর নির্দেশে প্রকল্পগুলোর কাজ দ্রুত এগিয়ে চলেছে। নতুন নতুন আরও প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। এগুলোর কাজ শেষ হলে ২০২৫ সাল পর্যন্ত নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ নিয়ে আর কোনো সমস্যা হবে না। গ্রাহকদের চাহিদামতো নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ সম্ভব হবে।
থাকছে না তারের জঞ্জাল :ডেসকোর রয়েছে তিন ধরনের বিতরণ লাইন। এর মধ্যে ৯০ কিলোমিটার ১৩২ কেভি ক্ষমতার লাইন, যার পুরোটাই এখন মাটির নিচে। ৫৭৩ কিলোমিটার ৩৩ কেভি লাইনে এরই মধ্যে ৪৬৪ কিলোমিটার লাইন মাটির নিচে নেওয়া হয়েছে। এখনও খুঁটিতে রয়েছে বাকি ১০৯ কিলোমিটার লাইন। চলতি অর্থবছরের মধ্যে এই দু’ধরনের লাইনের সবটাই মাটির নিচে চলে যাবে। আর ১১ কেভি লাইন রয়েছে ৪ হাজার ৫১৫ কিলোমিটার। এর মধ্যে ৬১৯ কিলোমিটার মাটির নিচে। মূলত মাকড়সার জালের মতো ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা এসব বিদ্যুৎ লাইনের কারণে নগরীর সৌন্দর্য নষ্টের পাশাপাশি সামান্য ঝড়-বৃষ্টিতেও লাইন ট্রিপ করে বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থায় বিঘ্ন ঘটে। বৈদ্যুতিক তার মাটির নিচে গেলে এসব সমস্যা দূর হবে। সেই সঙ্গে বিতরণ লাইনের সংরক্ষণ ব্যয়ও অনেক কম হবে। পর্যায়ক্রমে সব বিতরণ লাইন মাটির নিচে নেওয়ার পর আধুনিক বিশ্বের মতো বিদ্যুৎ সরবরাহ করবে ডেসকো। এতে ডেসকো হবে দক্ষিণ এশিয়ায় প্রথম আধুনিক বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানি।
মাটির নিচে যাচ্ছে উপকেন্দ্র :গুলশানের ১৩২/৩৩/১১ কেভি ক্ষমতার বিদ্যুৎ উপকেন্দ্রের পুরোটাই স্থাপন করা হবে মাটির নিচে। জাইকার অর্থায়নে এ প্রকল্পের কাজ শেষ হবে ২০২৩ সালের মধ্যে। তিন বিঘা জায়গায় মাটির নিচে ডেসকোর উপকেন্দ্রটি ছাড়াও পিজিসিবির একটি উপকেন্দ্রও বসবে। আর মাটির ওপরে নির্মাণ করা হবে দৃষ্টিনন্দন ৩৪ তলা ভবন। গুলশানের এই উপকেন্দ্রসহ ডেসকোর মোট উপকেন্দ্রের সংখ্যা ৫৩। সবটাতেই ডুয়েল লাইন দেওয়া হবে। এর ফলে একটি লাইনে বিদ্যুৎ না থাকলে অন্য লাইনের সাহায্যে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ অব্যাহত থাকবে।
স্বয়ংক্রিয় বিতরণ ব্যবস্থা :বর্তমানে ম্যানুয়ালি বিদ্যুৎ সরবরাহসহ সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করা হয়। এর স্থলে পুরো সিস্টেম স্বয়ংক্রিয়ভাবে নিয়ন্ত্রণে বসছে ‘স্ক্যাডা’। যা হবে দেশের প্রথম অত্যাধুনিক মানের স্বয়ংক্রিয় নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা। মিরপুরে স্থাপিত এই স্ক্যাডাটি আগামী জুন নাগাদ চালু হওয়ার কথা। এটি চালু হলে এক স্থানে বসে ডেসকোর গোটা এলাকার বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে। কোথাও বিদ্যুৎ সরবরাহে সমস্যা দেখা দিলে তা তাৎক্ষণিক চিহ্নিত করে সমস্যার সমাধান মিলবে মুহূর্তেই। এ ছাড়া কোথায় কত লোডসহ যাবতীয় তথ্য জানা ও বাটনের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করা যাবে। এ ছাড়া বিদ্যুৎ সংযোগের অবস্থানসহ প্রয়োজনীয় ডিজিটাল তথ্যভান্ডার হিসেবে জিআইএস ম্যাপিং তৈরি করছে ডেসকো। আগামী ৮ মাসের মধ্যে এ প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা।
শতভাগ স্মার্ট প্রি-পেইড মিটার :১০ লাখ আবাসিক গ্রাহকের মধ্যে ৩ লাখ সংযোগে রয়েছে প্রি-পেইড মিটার। এ ছাড়া দুটি প্রকল্পের মাধ্যমে আরও চার লাখ প্রি-পেইড মিটার বসানোর কাজ চলছে। ২০২৩ সালের মধ্যে শতভাগ স্মার্ট প্রি-পেইড মিটার স্থাপনের পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছে ডেসকো। এতে কাগুজে বিলের ঝামেলা ছাড়াই গ্রাহকরা বিদ্যুৎ ব্যবহারের সুযোগ পাবেন। সেই সঙ্গে বিদ্যুতের অপচয় রোধ হবে। ডেসকোর সিস্টেম লসও অনেকাংশে কমে যাবে।