ডেস্ক নিউজ
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তাঁর সরকার হজযাত্রীদের হয়রানি কমাতে নানা পদক্ষেপ নিয়েছে। হজ ব্যবস্থাপনাকে আধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর করে এর প্রভূত উন্নয়ন সাধন করা হয়েছে। তিনি গতকাল হজ কার্যক্রম উদ্বোধন করে হজযাত্রীদের কাছে দেশের সার্বিক মঙ্গল কামনায় দোয়া চেয়েছেন। কারণ, অর্থনৈতিক উন্নয়নের পথে যে অগ্রযাত্রা তা যেন অব্যাহত থাকে। প্রধানমন্ত্রী তাঁর সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে রাজধানীর আশকোনা হজ ক্যাম্পের সঙ্গে ধর্ম মন্ত্রণালয় আয়োজিত অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যুক্ত হন।
হজ কার্যক্রম-২০২২-এর উদ্বোধনকালে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যারা হজ করতে যাচ্ছেন তারা তা যেন সুষ্ঠুভাবে করতে পারেন তা নিশ্চিত করা আমাদের কর্তব্য। ইসলামকে ‘শান্তির ধর্ম’ এবং ‘সর্বশ্রেষ্ঠ ধর্ম’ আখ্যায়িত করে প্রধানমন্ত্রী এর সম্মান রক্ষা এবং হজ পালনকালে সৌদি আইন মেনে চলার মাধ্যমে দেশের ভাবমূর্তি বজায় রাখতে সচেষ্ট থাকার জন্যও সম্মানিত হজ যাত্রীদের প্রতি আহ্বান জানান। তিনি বলেন, ‘রোড টু মক্কা ইনিশিয়েটিভ’র মাধ্যমে আমরা আমাদের হজ ব্যবস্থাপনাকে আরও প্রযুক্তিনির্ভর করতে সক্ষম হয়েছি। ইমিগ্রেশন ঢাকাতেই হয়ে যায়, সেখানে কোনো হয়রানি হয় না। মালপত্রও যাতে যথাযথ স্থানে পৌঁছে যায় সৌদি সরকারের পক্ষ থেকে সে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। ডেডিকেটেড বিমান সার্ভিস দেওয়া হচ্ছে।
ধর্ম প্রতিমন্ত্রী মো. ফরিদুল হক খানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মো. মাহবুব আলী এবং সৌদি রাষ্ট্রদূত ঈসা বিন ইউসুফ আল দুহাইলান। ধর্ম মন্ত্রণালয়ের সচিব কাজী এনামুল হাসান এবং হজ এজেন্সিজ অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (হাব) সভাপতি মো. শাহাদত হোসেন তসলিমও বক্তৃতা করেন।
প্রধানমন্ত্রী তাঁর ভাষণে ইসলামের প্রচার ও প্রসারের জন্য জাতির পিতার বিভিন্ন উদ্যোগ তুলে ধরার পাশাপাশি ইসলামের মূলমন্ত্র যে ‘শান্তি ও সুবিচার প্রতিষ্ঠা’, সে সম্পর্কে ১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনের আগে তাঁর দেওয়া ঐতিহাসিক বেতার ভাষণের কিঞ্চিত অংশ উদ্ধৃত করেন। বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, ‘আমরা ইনসাফের ইসলামে বিশ্বাসী। আমাদের ইসলাম হজরত নবী করিম (সা.)-এর ইসলাম। যে ইসলাম জগৎবাসীকে শিক্ষা দিয়েছে ন্যায় ও সুবিচারের অমোঘ মন্ত্র।’ শেখ হাসিনা বলেন, তাঁর সরকার ডিজিটাল বাংলাদেশে আজকে ‘ই-হজ ব্যবস্থা’ প্রবর্তন করেছে, যার ফলে অতীতের মতো আর হাজিদের কষ্ট হয় না। সেই কষ্ট আমরা দূর করতে পেরেছি। এ জন্য তিনি ধর্ম মন্ত্রণালয়, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়, হাব, বাংলাদেশে সৌদি রাষ্ট্রদূত এবং সৌদি আরবে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতসহ সংশ্লিষ্ট সবাই আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করায় ধন্যবাদ জানান। প্রধানমন্ত্রী হজ যাত্রীদের কাছে দেশ ও দেশের জনগণ এবং ’৭৫-এর ১৫ আগস্ট নিহত জাতির পিতা, বঙ্গমাতা ও পরিবারের অন্য সদস্যদের জন্য দোয়া প্রত্যাশা করে বলেন, করোনাভাইরাসের মতো এ ধরনের রোগের প্রাদুর্ভাব থেকে যেন বাংলাদেশ এবং বিশ্ব তথা সমগ্র মানবজাতি রক্ষা পায়। প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকেও যেন বাংলাদেশ এবং বিশ্ব রক্ষা পায়; বাংলাদেশ যেভাবে অর্থনৈতিক উন্নতি করছে সেই উন্নয়নের পথে যেন এগিয়ে যেতে পারে সে জন্যও হজ যাত্রীদের কাছে দোয়া চেয়েছেন। পরে তিনি হজ যাত্রীদের সঙ্গে মতবিনিময়ও করেন।
চাঁদ দেখা সাপেক্ষে আগামী ৮ জুলাই ২০২২ খ্রিস্টাব্দ ৯ জিলহজ ১৪৪৩ হিজরি তারিখে পবিত্র হজ অনুষ্ঠিত হবে। বৈশ্বিক করোনা মহামারি পরিস্থিতির কারণে ২০২০ ও ২০২১ এই দুই বছর বহির্বিশ্বের অন্যান্য দেশের ন্যায় বাংলাদেশ থেকে কেউ হজে যেতে পারেননি। করোনা পরিস্থিতি একটু ভালো হওয়ায় এ বছর সারা বিশ্বের ১০ লাখ হাজি নিয়ে পবিত্র হজ অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। বাংলাদেশ থেকে এ বছর ৫৭ হাজার ৫৮৫ জন হজ যাত্রী হজ করার সুযোগ পাচ্ছেন।