আগামী শনিবার দেশে করোনার অ্যান্টিজেন পরীক্ষা শুরু হবে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা। গতকাল বৃহস্পতিবার তিনি বলেন, শুরুতে দেশের ১০টি জেলায় অ্যান্টিজেন পরীক্ষা শুরু হচ্ছে। সন্দেহভাজন করোনা রোগী, যাঁদের উপসর্গ রয়েছে, শুধু তাঁদেরই অ্যান্টিজেন পরীক্ষা করা হবে। অ্যান্টিজেন পরীক্ষার জন্য সরকার এখনো কোনো ফি নির্ধারণ করেনি।
জানা গেছে, জেলা সদর হাসপাতালে অ্যান্টিজেন পরীক্ষা করা হবে। যে ১০টি জেলায় অ্যান্টিজেন পরীক্ষা শুরু হবে সেগুলো হচ্ছে গাইবান্ধা, পঞ্চগড়, জয়পুরহাট, যশোর, মেহেরপুর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, পটুয়াখালী, মুন্সিগঞ্জ, মাদারীপুর ও সিলেট। কারও শরীরে করোনাভাইরাসের উপস্থিতি রয়েছে কি না, সেটি অ্যান্টিজেন পরীক্ষার মাধ্যমে নিশ্চিত হওয়া যায়। এই পরীক্ষা করা যায় ১৫ থেকে ৩০ মিনিটে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক মীরজাদী সেব্রিনা বলেন, অ্যান্টিজেনভিত্তিক পরীক্ষার জন্য কর্মীদের প্রশিক্ষণ দেওয়া শেষ হয়েছে। অ্যান্টিজেন পরীক্ষার মানসম্মত কিট আনা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে সব জেলায় অ্যান্টিজেন পরীক্ষা শুরু করা হবে। উপসর্গহীন সন্দেহভাজন রোগীদের অ্যান্টিজেন পরীক্ষা করা হবে না।
জনস্বাস্থ্যবিদেরা বলছেন, দ্রæত ও সহজে ফল জানার অ্যান্টিজেন টেস্ট চালু হলে পরীক্ষার সংখ্যা বাড়বে। এটি করোনা রোগী শনাক্ত, মহামারিতে নেওয়া পরিকল্পনাসহ নানা নীতিনির্ধারণেও সাহায্য করবে।
সরকারের কোভিড-১৯ পরীক্ষা নীতিমালায় বলা হয়েছে, অ্যান্টিজেন পরীক্ষা করতে বিশেষায়িত কোনো ল্যাবরেটরির প্রয়োজন হয় না। তবে অ্যান্টিজেন পরীক্ষার নির্দিষ্টতা প্রায় শতভাগ হলেও সংবেদনশীলতা কম। ফলে কোভিড-১৯ সংক্রমিত ব্যক্তির নমুনা পরীক্ষা করে নেগেটিভ ফলাফল পাওয়ার শঙ্কা রয়েছে। তাই অ্যান্টিজেন পরীক্ষায় নেগেটিভ এলে পিসিআর বা জিন এক্সপার্ট পরীক্ষার মাধ্যমে নিশ্চিত হতে হবে। আর অ্যান্টিজেন পরীক্ষায় পজিটিভ হলে ওই ব্যক্তিকে নিশ্চিত পজিটিভ হিসেবে গণ্য করা হবে।
ছয় মাস আগে করোনাবিষয়ক জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটি করোনা শনাক্তে এত দিন ধরে চলা রিভার্স ট্রান্সক্রিপটেজ পলিমারেজ রি-অ্যাকশন (আরটিপিসিআর) পরীক্ষার পাশাপাশি অ্যান্টিজেন পরীক্ষা চালুর পক্ষে মত দেয়। কমিটির বিশেষজ্ঞরা অ্যান্টিবডি পরীক্ষা চালুরও সুপারিশ করেন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর করোনার র্যাপিড টেস্ট বিষয়ে একটি খসড়া নীতিমালা তৈরি করে গত ৯ জুলাই মন্ত্রণালয়ে পাঠায়। নমুনা পরীক্ষা স¤প্রসারণ নীতিমালার ওপর মতামত দেওয়ার জন্য মন্ত্রণালয় একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি করে। একাধিক সভার পর কমিটি ২৩ আগস্ট তাদের সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব জমা দেয়। কমিটি দ্রæততম সময়ের মধ্যে দেশে অ্যান্টিবডি ও অ্যান্টিজেন পরীক্ষা চালুর জোর সুপারিশ করে। এর আড়াই মাস পর স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ গত ১২ নভেম্বর কোভিড-১৯ পরীক্ষাসংক্রান্ত নীতিমালা করে। নীতিমালা চ‚ড়ান্ত করলেও এত দিন অ্যান্টিজেন পরীক্ষা শুরু করেনি।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর স‚ত্রে জানা যায়, অ্যান্টিজেন পরীক্ষার জন্য কোন কিটটি সবচেয়ে ভালো বা কার্যকর, সেটি নিশ্চিত না হওয়ায় অ্যান্টিজেন পরীক্ষা শুরু করতে দেরি হয়েছে। ইতিমধ্যে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা অনুমোদিত দুটি কিটের কার্যকারিতা পরীক্ষা সম্পন্ন হয়েছে।
তবে দেশে করোনার অ্যান্টিজেন ও অ্যান্টিবডি পরীক্ষা একসঙ্গে চালু করা উচিত ছিল বলে জনস্বাস্থ্যবিশেষজ্ঞরা মনে করেন। সরকার গঠিত নমুনা পরীক্ষা স¤প্রসারণ নীতিমালা কমিটির প্রধান ও চিকিৎসাবিজ্ঞানী অধ্যাপক লিয়াকত আলী বলেন, কমিটি অ্যান্টিবডি ও অ্যান্টিজেন পরীক্ষা চালুর জোরালো সুপারিশ করেছিল। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, করোনার দ্বিতীয় ঢেউ যেভাবে শুরু হয়েছে তা ভয়াবহ রুপ নিতে পারে। এ অবস্থায় খÐিতভাবে শুধু অ্যান্টিজেন না, একসঙ্গে অ্যান্টিবডি ও অ্যান্টিজেন পরীক্ষা চালু করা প্রয়োজন ছিল।