ডেস্ক নিউজ
সারাদেশে প্রথম ধাপে শুরু করা ২০০০ কিলোমিটারের মধ্যে ১১০০ কিলোমিটার ভূগর্ভস্থ বিদ্যুৎ লাইন নির্মাণের কাজ শেষ হয়েছে।
বুধবার (২ ফেব্রুয়ারি) সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির ২৪তম বৈঠক শেষে জাগো নিউজকে এ তথ্য জানান ডিপিডিসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী বিকাশ দেওয়ান।
এর আগে বৈঠকে সংসদীয় কমিটি বিদ্যুৎ বিতরণ ব্যবস্থায় ভূগর্ভস্থ বৈদ্যুতিক ক্যাবল স্থাপনের সর্বশেষ অগ্রগতি সম্পর্কে জানতে চায়। এর পরিপ্রেক্ষিতে তিনি এতথ্য উপস্থাপন করেন।
বৈঠকের কার্যবিবরণী থেকে জানা যায়, বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (আরইবি) ৮ হাজার ৮৪৮ কিলোমিটার ভূগর্ভস্থ বিতরণ লাইন স্থাপনের সম্ভাব্যতা সমীক্ষার কাজ করছে এবং ওজোপাডিকো খুলনা, বরিশাল ও যশোরে ২ হাজার ৬১ কিলোমিটার আন্ডারগ্রাউন্ড লাইন করার পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে।
ডিপিডিসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী বিকাশ দেওয়ান আরও বলেন, নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহের যেসব মাপকাঠি রয়েছে তার মধ্যে নিরাপত্তা একটা বড় বিষয়। ঢাকা শহরের মতো ঘিঞ্জি এলাকায় বিদ্যুতের নিরাপত্তা বিধান এবং ঝড়-বৃষ্টির কারণে সৃষ্ট ব্যাঘাত মোকাবিলায় ভূগর্ভস্থ ক্যাবল স্থাপন অত্যন্ত নিরাপদ ও সহায়ক এবং এতে সিস্টেম লসও কম হয়।
তিনি জানান, প্রাথমিকভাবে শহরকেন্দ্রিক এলাকাতেই ভূগর্ভস্থ লাইন নির্মাণের কাজ করা হচ্ছে। ভূগর্ভস্থ ক্যাবল স্থাপনের ক্ষেত্রে স্টেকহোল্ডার হিসেবে ঢাকার উত্তর ও দক্ষিণ সিটি, ডিটিসিএ, মেট্রোপলিটন পুলিশ, ওয়াসা, রেলওয়ে, তিতাস, রোডস্ অ্যান্ড হাইওয়েসহ অন্যান্য কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বৈঠক করে তাদের পরামর্শ ও অনুমতি নিয়ে কাজ শুরু করা হয়।
তিনি বলেন, ভূগর্ভস্থ ক্যাবল স্থাপনে বিদ্যমান অবস্থা বজায় রেখে আন্ডারগ্রাউন্ড লাইন নির্মাণ, মাটির নিচে বিদ্যমান বিভিন্ন ইউটিলিটি লাইনের বিষয় সুরাহা করা, রাস্তার সংকীর্ণতা, সময়ের সীমাবদ্ধতা, বায়ু ও শব্দ দূষণ, দীর্ঘ সময় বর্ষাকাল, সমন্বয় সভা দ্রুত না করা, সভার কার্যবিবরণী ও চূড়ান্ত অনুমোদন প্রাপ্তিতে সময়েক্ষেপণ এবং উভয় সিটি করপোরেশনের ডিভিশনের এস্টিমেটের ভিন্নতাসহ অনেক চ্যালেঞ্জ রয়েছে। এসব কারণে ক্যাবল স্থাপনে অনেক অসুবিধা তৈরি হচ্ছে। বিদ্যমান প্রকল্পের আওতায় কাজ করার সময় উদ্ভুত কোনো সমস্যা সমাধানেও বাধার সম্মুখীন হতে হয়।
কমিটির সভাপতি ওয়াসিকা আয়শা খান এমপি বিদ্যমান সমস্যা সমাধানের সময়ও অনুমতি নিতে হয় কি না জানতে চাইলে তিনি জানান- এ ক্ষেত্রেও অনুমতি নিতে হয় । সমস্যাগুলো সমাধানের জন্য উভয় সিটি করপোরেশনের মেয়র এবং স্থানীয় সরকার বিভাগকে মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে অবহিত করা হয়েছে। এছাড়া সংসদীয় স্থায়ী কমিটির নির্দেশনা অনুযায়ী বিষয়গুলো মিনিমাইজ করার জন্য পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের সচিবের নেতৃত্বে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।
সভাপতি আরও বলেন, ভূগর্ভস্থ ক্যাবল স্থাপনের জন্য প্রধানমন্ত্রীর অনুশাসন দেওয়ার পর বেশ কয়েকবছর অতিক্রান্ত হয়েছে। ভূগর্ভস্থ ক্যাবল স্থাপনের কাজ কবে শুরু হয়েছে তা তিনি জানতে চান।
ডিপিডিসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক জানান, সাব-স্টেশনের ১৩২ ও ১৩৩ কেভির লাইনগুলো আগে থেকেই ভূগর্ভস্থ আছে। প্রধানমন্ত্রীর অনুশাসন অনুযায়ী এখন লোটেনশন লাইনসহ সকল লাইনকেই ভূগর্ভস্থ করার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে এজন্য প্রথম পর্যায়ে ধানমন্ডি আবাসিক এলাকার লাইনগুলোকে ভূগর্ভস্থ করার প্রকল্প নেওয়া হয়েছে।
প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, প্রধানমন্ত্রী ৪-৫ বছর আগে শহরগুলোতে ভূগর্ভস্থ ক্যাবল স্থাপনের জন্য অনুশাসন দিয়েছেন । ঢাকা শহরে ৩৩ – কেভি/হাইভোল্টেজ লাইনগুলোকে আন্ডারগ্রাউন্ড করা হয়েছে। এক্ষেত্রে নকশা এবং বাস্তবতার মধ্যে মিল না থাকায় এবং ঠিকাদাররাও নকশা অনুযায়ী কাজ না করায় বিভিন্ন সংস্থা অনেক সময়ই তার কেটে ফেলে, যা ভবিষ্যতে একটি বড় সমস্যা হিসেবে দেখা দেবে।
তিনি জানান, ডিপিডিসি ২০১৬ সালে জিটুজি প্রকল্প নিলেও কাজ শুরু হয় ২০২১ সালে। ডেসকো ২০১৬ সালে নকশা তৈরির জন্য কনসালটেন্ট নিয়োগ করলেও এখনো নকশা তৈরি হয়নি। আরইবি ২০১৭ সালে কেরানীগঞ্জের একটি অংশের জন্য কনসালটেন্ট নিয়োগ করে ডিপিপি সম্পন্ন করতে পেরেছে। আরও ৪ টি উপজেলায় তারা কাজ শুরু করেছে। পিডিবি ২ বছর আগে কনসালটেন্ট নিয়োগ করলেও কোভিডের কারণে নকশা তৈরি হয়নি। নকশা তৈরির পর ফিজিবিলিটি স্টাডি, বাজেট অনুমোদন, ডিপিপি তৈরি এবং টেন্ডার সম্পন্ন হতে আরও ৫-৭ বছর সময় লাগবে। ওজোপাডিকো কনসালটেন্ট নিয়োগ করে ফিজিবিলিটি স্টাডি করেছে। নেসকো কেবলমাত্র কাজ শুরু করেছে। এভাবে কাজ শেষ করতে ৮-১০ বছর সময় অতিক্রান্ত হবে বলে তিনি মত প্রকাশ করেন ।
কমিটির সভাপতি ওয়াসিকা আয়শা খানের সভাপতিত্বে বৈঠকে সদস্য নসরুল হামিদ, মো. আবু জাহির, মো. নূরুল ইসলাম তালুকদার, মো. আছলাম হোসেন সওদাগর, মোছা. খালেদা খানম এবং নার্গিস রহমান অংশ নেন।
বৈঠকে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব, বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান, টেকসই ও নবায়নযোগ্য জ্বালানি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (স্রেডা) চেয়ারম্যান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।