ডেস্ক নিউজ
দেশের বাজার স্থিতিশীল রাখতে বেসরকারীভাবে ১৫ লাখ টন চাল আমদানির ব্যবস্থা নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে ইতোমধ্যে সাড়ে ছয় লাখ টন চাল আমদানির অনুমতি দিয়েছে খাদ্য মন্ত্রণালয়। পর্যায়ক্রমে আরও অনুমতি দেয়া হবে। আদেশে আগামী ১১ আগস্টের মধ্যে আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলোকে চাল আমদানি করতে বলা হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে।
এ বিষয়ে খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার জনকণ্ঠকে বলেন, চালের বাজার স্থিতিশীল রাখতে বেসরকারী পর্যায়ে চাল আমদানি করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, আগে চাল আমদানিতে ৬২ শতাংশ শুল্ক দিতে হতো। বর্তমানে এটি ২৫ শতাংশে নামিয়ে আনা হয়েছে।
সূত্র জানায়, চাল আমদানি শুরু হলে চালের দাম কমে আসবে। সুযোগ বুঝে সব সময় কিছু অসাধু ব্যবসায়ী চাল আটকিয়ে রেখে কৃত্রিম সঙ্কট তৈরির চেষ্টা করে। তারা যাতে এই সঙ্কট তৈরি করতে না পারে সে লক্ষ্যে চাল আমদানি করা হচ্ছে। এতে আর কেউ চাল আটকে রাখার সাহস করবে না। চালের দাম আর বাড়বে না বলেও সূত্র দাবি করে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে খাদ্য অধিদফতরের এক কর্মকর্তা বলেন, একেবারেই শুল্কমুক্তভাবে চাল আমদানির সুযোগ দেয়া সঠিক বলে মনে করি না। তবে ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ না করে ৫ বা ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করলে ব্যবসায়ীরা আরও বেশি আগ্রহী হতেন। তাতে দেশের বাজারে চালের দাম দ্রুত কমে আসত।
চালের বাজার স্থিতিশীল রাখতে প্রথম পর্যায়ে মোট ৪ লাখ ৯ হাজার টন চাল আমদানির অনুমোদন দেয় সরকার। আমদানিকারক ৯৫টি প্রতিষ্ঠান ওই চাল আমদানি করবে। গত বৃহস্পতিবার খাদ্য মন্ত্রণালয়ের বৈদেশিক সংগ্রহ শাখার উপসচিব মোহাম্মদ মাহাবুবুর রহমান ও অতিরিক্ত সচিব মুজিবর রহমান স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে এ অনুমতি দেয়া হয়।
চিঠির শর্তানুযায়ী ২১ জুলাইয়ের মধ্যে চালের এলসি খুলতে হবে এবং ১১ আগস্টের মধ্যে আমদানি করা চাল দেশে বাজারজাত শেষ করতে হবে। আমদানি করা চালের মধ্যে ৩ লাখ ৭৯ হাজার মেট্রিক টন সেদ্ধ চাল ও ৩০ হাজার মেট্রিক টন আতপ চাল রয়েছে।
সময়মতো এলসি খুলতে বা আমদানি করতে ব্যর্থ হলে সেসব ব্যবসায়ীর চাল আমদানির অনুমতি বাতিল হবে বলেও চিঠিতে জানানো হয়েছে। এতে আরও বলা হয়েছে, প্রতিষ্ঠানগুলোকে জেলা খাদ্য অফিসে জানাতে হবে যে তারা কী পরিমাণ চাল আমদানি করবে, কী পরিমাণ বিক্রি করবে ও কী পরিমাণ মজুদ করবে।
বাজারে সরবরাহ বাড়িয়ে চালের দাম কমাতে ও স্থিতিশীল রাখতে এ অনুমতি দেয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। এর আগে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ২২ জুন থেকে ৩১ অক্টোবরের মধ্যে আমদানি করা চালের ওপর শুল্ক ৬২ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২৫ শতাংশ করেছে। তবে প্রতিটি চালান আমদানির সময় খাদ্য মন্ত্রণালয়ের কাছ থেকে অনুমতি নিতে হবে।
এর আগে বেসরকারী পর্যায়ে চাল আমদানিতে খাদ্য মন্ত্রণালয় থেকে প্রধানমন্ত্রীর কাছে একটি সার সংক্ষেপ পাঠানো হয়। এতে সম্পূর্ণ শুল্কমুক্ত করার সুপারিশ করা হয়। প্রধানমন্ত্রী কোন রকম শুল্ক প্রদান ছাড়া চাল আমদানির অনুমতি দেন। পরে খাদ্য মন্ত্রণালয় এটি জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে পাঠায়। পরে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করে আদেশ জারি করে।
প্রথম দফায় অনুমোদন দেয়া ৯৫টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ১০টি মোট ১ লাখ ৭০ হাজার টন আমদানির অনুমতি পেয়েছে। এ ছাড়া দুটি প্রতিষ্ঠান ২৫ হাজার টন করে, তিনটি প্রতিষ্ঠান ২০ হাজার টন করে এবং বাকিগুলো বিভিন্ন পরিমাণ চাল আমদানির অনুমতি পেয়েছে। মোট ৪ লাখ ৯ হাজার মেট্রিক টন চাল আমদানির অনুমতি দেয়া হয়। দ্বিতীয় দফায় সোমবার ১২৪টি প্রতিষ্ঠানকে মোট ২ লাখ ৪৬ হাজার মেট্রিক টন চাল আমদানির অনুমতি দেয়া হয়েছে। এছাড়া আরও বেশ কিছু আবেদন জমা পড়েছে। এগুলো যাচাই-বাছাই চলছে বলে সূত্র জানায়।
চিঠিতে আমদানিকারকদের শর্ত দেয়া হয়েছে, যে ব্যাগে করে চাল আমদানি করা হবে, সেই একই ব্যাগে করে ব্যবসায়ীদের চাল বিক্রি করতে হবে। অর্থাৎ ব্যাগ পরিবর্তন করে চাল সরবরাহ করা যাবে না।
গত কয়েক দিন ধরে রাজধানীর চালের বাজার অস্থির। এক মাসে চিকন চালের দাম ৯ শতাংশ বেড়েছে বলে জানিয়েছে ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি)। এছাড়াও দেশের উত্তর-পূর্ব ও উত্তর-পশ্চিমের কিছু অংশে বন্যা ও প্রতিকূল আবহাওয়ার নেতিবাচক প্রভাব ধানের ফলনে পড়েছে। যার কারণে চালের বাজারে অস্থিরতা দেখা দিয়েছে বলে জানাচ্ছেন রাইস মিল মালিকরা। বিশেষ করে সাম্প্রতিককালে ভয়াবহ বন্যায় বৃহত্তর সিলেট অঞ্চলসহ অন্যান্য এলাকায় ব্যাপক ফসল হানি হয়েছে। এ অবস্থায় চালের বাজার স্থিতিশীল রাখতে সরকার বেসরকারী পর্যায়ে চাল আমদানির উদ্যোগ নিয়েছে।