ডেস্ক নিউজ
দেশের প্রকাশকেরা চাইছেন, আগামী বছরের ১৮ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু করে ১৭ মার্চ পর্যন্ত অমর একুশে গ্রন্থমেলা হোক। একই সঙ্গে তাঁরা মেলার স্টল বরাদ্দের জন্য ৭ জানুয়ারি পর্যন্ত সময় চেয়েছেন বাংলা একাডেমির কাছে। তাঁরা বাংলা একাডেমিকে বইমেলার জন্য নতুন তারিখের প্রস্তাব দিয়েছেন। স্বাস্থ্যবিধি মানার ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করতে পারলে এই সময়ে বইমেলা আয়োজনে কোনো সমস্যা দেখছেন না প্রকাশকেরা।
মঙ্গলবার প্রকাশকদের দুই সংগঠন বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতি এবং বাংলাদেশ জ্ঞান ও সৃজনশীল প্রকাশক সমিতি যৌথভাবে বাংলা একাডেমিকে ‘অমর একুশে গ্রন্থমেলা ২০২১’–এর তারিখ পুনর্নির্ধারণের প্রস্তাব দেয়। এতে সংগঠন দুটি বলে, আসছে ফেব্রুয়ারির শুরুর দিকে শীতের তীব্রতা কমে আসবে। আবহাওয়ায় তাপমাত্রা ক্রমশ বৃদ্ধি পাবে। এবং করোনার দ্বিতীয় ঢেউ নিয়ে বিজ্ঞানীদের পর্যবেক্ষণমূলক সময়কালও পেরিয়ে যাবে। ফলে প্রস্তাবিত তারিখে (১৮ ফেব্রুয়ারি থেকে ১৭ মার্চ) স্বাস্থ্যবিধি মেনে বইমেলা করা সম্ভব।
বাংলাদেশ জ্ঞান ও সৃজনশীল প্রকাশক সমিতির নির্বাহী পরিচালক মনিরুল হক জানান, তাঁরা প্রথমে সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদের সঙ্গে দেখা করেন। বইমেলার তারিখ পুনর্নির্ধারণের বিষয়টি তাঁকে বলেন। প্রতিমন্ত্রীও মৌখিক সম্মতি দিয়েছেন। এরপর তাঁরা বাংলা একাডেমির মহাপরিচালকের সঙ্গে দেখা করে আনুষ্ঠানিকভাবে তাঁকে লিখিত প্রস্তাব দেন। প্রকাশকেরা আশা করছেন, প্রধানমন্ত্রী অনুমতি দিলে ১৮ ফেব্রুয়ারি থেকেই ২০২১ সালের অমর একুশে গ্রন্থমেলা শুরু হবে। চলবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মদিন ১৭ মার্চ পর্যন্ত।
এর আগে গত শুক্রবার বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক হাবীবুল্লাহ সিরাজী জানিয়েছিলেন, করোনা পরিস্থিতি বিবেচনা করে ১ ফেব্রুয়ারি বইমেলা শুরু হবে না। পাঠকদের মধ্যে বইমেলা নিয়ে যেন কোনো সংশয় তৈরি না হয়, সে কারণে বিকল্প হিসেবে ভার্চ্যুয়াল আয়োজনের কথা তাঁরা ভাবছেন। গত বৃহস্পতিবার একাডেমির কাউন্সিল সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। বাংলা একাডেমির এমন সিদ্ধান্তে সমালোচনা করছেন লেখক ও প্রকাশকেরা। তাঁদের প্রশ্ন, বাংলাদেশে শপিং মল, কলকারখানা এবং গণপরিবহন স্বাভাবিক নিয়মে চলছে; সিনেমা হল খুলে দেওয়া হয়েছে, নাটক-সিনেমার শুটিং হচ্ছে, নতুন ছবি মুক্তি পাচ্ছে। শিল্পকলা একাডেমিতে নাটক হচ্ছে। সে ক্ষেত্রে কেন বইমেলা বন্ধ রাখা হবে?
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও বিষয়টি নিয়ে বেশ জোরালো সমালোচনা হতে দেখা গেছে। লেখক, প্রকাশক, পাঠকেরা বলছেন, বইমেলার প্রকৃত আবহ ভার্চ্যুয়াল বইমেলার মাধ্যমে পাওয়া সম্ভব নয়। এটা লেখক ও পাঠকের মধ্যে যোগাযোগেরও জায়গা, এখানে আড্ডা হয়, গল্প হয়। তা ছাড়া একুশে বইমেলা শুধু বেচাকেনার বিষয় নয়, এটি চেতনার সঙ্গেও জড়িত।
প্রকাশকেরা বলেন, প্রতিবছর বইমেলার জন্য পাঠকেরা যেমন অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করেন, তেমনি লেখক ও প্রকাশকেরা বইমেলাকে ঘিরে তাঁদের পরিকল্পনা গ্রহণ করেন। এ জন্য নতুন প্রকাশিতব্য বইয়ের পাণ্ডুলিপি এরই মধ্যে প্রস্তুত হয়ে গেছে। আপত্তি ও ক্ষোভ নিয়ে রোববার সকালে প্রকাশক সমিতির নেতারা বাংলা একাডেমির মহাপরিচালকের সঙ্গে দেখা করেন। তাঁদের সঙ্গে কথা বলে হাবীবুল্লাহ সিরাজী লিখিতভাবে নতুন একটি তারিখ প্রস্তাবের পরামর্শ দেন। সে মোতাবেক প্রকাশকেরা আজ নতুন তারিখ প্রস্তাব করেছেন।
জানা গেছে, বাংলা একাডেমি বইমেলা আয়োজনের প্রস্তুতি নিয়েছিল। স্টল বরাদ্দের আবেদনের বিজ্ঞপ্তিও দেওয়া হয়েছিল।
৭ ডিসেম্বর ছিল স্টল বরাদ্দ চেয়ে আবেদনের শেষ সময়। কিন্তু প্রকাশনার সঙ্গে জড়িত বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠানই আবেদন করেনি। বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতির সভাপতি আরিফ হোসেন বলেন, ‘করোনা পরিস্থিতির কারণে সারা দেশের প্রকাশকদের অবস্থা ভালো নেই। তা ছাড়া অতীতে মূলত জানুয়ারি মাসে আমরা আবেদন করতাম, ভাড়ার টাকা জমা দিতাম। এবার আমরা আবেদনের সময় বাড়ানো, স্টল বা প্যাভিলিয়নের ভাড়া কমানো এবং প্রণোদনা চেয়েছিলাম সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের কাছে। মৌখিকভাবে সম্মতিও জানানো হয়েছিল। ’
ভাষার মাসের প্রথম দিন থেকেই বাংলা একাডেমি চত্বরে বইমেলা শুরু হয়। রেওয়াজ অনুযায়ী প্রধানমন্ত্রী এ বইমেলার উদ্বোধন করে থাকেন। ১৯৮৩ সালে মনজুরে মওলা যখন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক ছিলেন, তখন তিনি বাংলা একাডেমিতে প্রথম অমর একুশে গ্রন্থমেলার উদ্যোগ নেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত বইমেলা করা সম্ভব হয়নি। ১৯৮৪ সালে সাড়ম্বরে বর্তমানের অমর একুশে গ্রন্থমেলার সূচনা হয়। বাংলা একাডেমির তথ্যানুযায়ী, ২০২০ সালের অমর একুশে গ্রন্থমেলায় ৮২ কোটি টাকার বই বিক্রি হয়েছিল। নতুন বই প্রকাশিত হয়েছিল ৪ হাজার ৯১৯টি। বাংলা একাডেমি প্রকাশ করেছিল ৪১টি নতুন বই।