ডেস্ক নিউজ
অবশেষে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে একাত্তরের গণহত্যার স্বীকৃতি মিলল। এর মাধ্যমে ১৯৭১ সালের গণহত্যার যে নির্মম বেদনা বাঙালির মনে আজও জাগরুক রয়েছে তার কিছুটা হলেও লাঘব হয়েছে এবং এ গণহত্যার স্বীকৃতির ফলে অন্যান্য বৈশ্বিক স্বীকৃতি পাওয়ার পথও সুগম হলো।
নতুন বছর শুরুর কালেই বিশ্বে গণহত্যা নিয়ে কাজ করা যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠান লেমকিন ইনস্টিটিউট ফর জেনোসাইড প্রিভেনশন এক মেইল বার্তায় ৭১ সালে বাংলাদেশিদের ওপরে পাকিস্তানিদের নির্মম হত্যাযজ্ঞকে জেনোসাইড বা গণহত্যা বলে স্বীকৃতি দিয়েছে।
জেনোসাইড বা গণহত্যা শব্দটির উদ্ভাবক পোলিশ রাফায়েল লেমকিনের নামানুসারে লেমকিন ইনস্টিটিউট ফর জেনোসাইডের নামকরণ করা হয়।
গত বছরের ১৫ নভেম্বর মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদ সাংবাদিক সিরাজউদ্দিন হোসেনের ছেলে তৌহিদ রেজা নূর এ স্বীকৃতির জন্য আবেদন করেন। নতুন বছরের শুরুর এ ক্ষণে লেমকিন ইনস্টিটিউটের পক্ষ থেকে আইরিন ভিক্টোরিয়া মাসিমিনো ফিরতি মেইলে তাকে স্বীকৃতির বিবৃতি পাঠান।
এর মধ্য দিয়ে একাত্তরের পাকিস্তানিদের ব্যাপক হত্যাযজ্ঞ যুক্তরাষ্ট্রেও গণহত্যার স্বীকৃতি পেল এবং ধারাবাহিকভাবে আরও বৈশ্বিক স্বীকৃতি পাওয়ার পথ সুগম হলো।
বহুল প্রতিক্ষিত এ স্বীকৃতি পাওয়ার পর তৌহিদ রেজা নূর তার প্রতিক্রিয়ায় তীব্র আনন্দের প্রকাশ ঘটান। সুবর্ণজয়ন্তীর চলমান বছরে গণহত্যার এ স্বীকৃতি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের জন্য এক বিশাল অর্জন ও প্রাপ্তি হিসেবে উল্লেখ করে অন্যান্য আন্তর্জাতিক মানবাধিকার নিয়ে কাজ করা সংস্থাগুলোও ১৯৭১ সালের গণহত্যাকে স্বীকৃতি দেবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
গত বছর ৩ আগস্ট একাত্তর সালে বাংলাদেশের জেনোসাইডের স্বীকৃতিস্বরূপ প্রস্তাব পাস করতে আরেকটি জেনোসাইড বা গণহত্যা বিশেষজ্ঞদের আন্তর্জাতিক সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল জেনোসাইড স্কলার্স অ্যাসোসিয়েশনের (আইএজিএস) প্রতি আহ্বান জানানো হয়।
তখন ‘তথ্য প্রযুক্তির যুগে জেনোসাইড ও এর নিবৃত্তি : একবিংশ শতকের চ্যালেঞ্জ’ শীর্ষক আন্তর্জাতিক সম্মেলনে এ আহ্বান জানানোর কথা এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এরপর বাংলাদেশের পক্ষ থেকে আইএজিএস প্রেসিডেন্ট মেলানি ও’ ব্রায়েনের কাছে প্রস্তাবের খসড়া পাঠান একাত্তরে শহীদ সাংবাদিক সিরাজুদ্দীন হোসেনের ছেলে তৌহিদ রেজা নূর।
বাঙালির স্বাধীকার আন্দোলনকে চিরতরে স্তব্ধ করে দেওয়ার জন্য ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ কালরাতে এ দেশের নিরস্ত্র মানুষের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী। ‘অপারেশন সার্চলাইট’ নামের সেই অভিযানে রাতের প্রথম প্রহরে ঢাকায় স্মরণকালের সবচেয়ে বড় গণহত্যা চালানো হয়। তারপর দীর্ঘ নয় মাসে ৩০ লাখ বাঙালিকে হত্যা ও ২ লাখ নারীর সম্ভ্রমহানি করে পাকিস্তানি সেনারা। এরমধ্যে মুক্তিবাহিনী গঠনের মাধ্যমে সর্বাত্মক প্রতিরোধ যুদ্ধে নামে বাঙালিরা। সামরিক দিক থেকে বিশ্বের অন্যতম শক্তিশালী পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী সেই মুক্তিযুদ্ধের পর বাংলাদেশের স্বাধীনতার রক্তিম সূর্য উদিত হয়।